গাইবান্ধায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও মোবাইল ব্যবহারের মাধ্যমে জালিয়াতির অভিযোগে পরিক্ষার্থীসহ ৩৮ জনকে আটক ও তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এই সময় ৩৬ জন পরিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) বিকেল চারটার দিকে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
এর আগে একইদিন সকাল ১০ টা থেকে পরিক্ষা চলাকালীন সময়ের মধ্যে জেলার বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে তাদেরকে আটক ও বহিষ্কার করা হয়।আটককৃতদের মধ্যে ৩৩ জন এই নিয়োগ পরিক্ষার পরিক্ষার্থী এবং পাঁচজন বহিরাগত।
গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) দেওয়ান মওদুদ আহমেদ মুঠোফোনে বলেন প্রথম ধাপের গাইবান্ধার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরিক্ষা সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও নকলমুক্ত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সহায়তা নেওয়া হয়েছে। তারা বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে পরিক্ষায় ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও মোবাইল ব্যবহার করে অসদুপায়ে পরিক্ষা দেওয়ার সময় ৩৮ জনকে আটক করেছে এবং কেন্দ্র থেকেই একই অভিযোগে ৩৬ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
আটককৃত ৩৮ জন পরিক্ষার্থীদের মধ্যে হতে ৩৭ জনকে আটক করে র্যাব-১৩ গাইবান্ধা। এসব বিষয় নিয়ে বিকেল চারটার দিকে গাইবান্ধার র্যাব-১৩ ক্যাম্পে একটি সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সেখানে আটকের বিষয়গুলোর বিস্তারিত তুলে ধরেন র্যাব-১৩ রংপুর বিভাগের অধিনায়ক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব জানতে পারে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসাদুপায় অবলম্বন করে পরীক্ষা দিচ্ছে কিছু পরীক্ষার্থী। পরে অভিযান চালিয়ে গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে থেকে ৩২ জন পরীক্ষার্থী ও এই চক্রের মুল হোতা মারুফ, মুন্না, সোহেল, নজরুল ও সোহাগসহ মোট ৩৭ জনকে আটক করা হয়। পরে তাদের কাছ থেকে ২২ টি মাস্টার কার্ড, ১৯ টি ব্লুটুথ ডিভাইস, ১৬ টি মোবাইল, স্ট্যাম্প ও ব্যাংক চেক উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও জানান, আটককৃত পরীক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় ইলেকট্রনিক ডিভাইস এবং মোবাইলের মাধ্যমে সুকৌশলে পরীক্ষা দিয়ে আসছিল। চক্রের এই ৫ সদস্য বিভিন্ন পরীক্ষার্থীকে ১৪-১৮ লক্ষ টাকায় চাকুরী দেওয়ার শর্তে অংশগ্রহন করায়। এর মধ্যে এই চক্রের সোহেল নামে এক সদস্য ডিভাইস সংগ্রহ ও বিতরণ করেন, নজরুল পরীক্ষার্থী সংগ্রহ করতেন এবং মারুফ ও মুন্না বাহির থেকে প্রশ্নপত্র সমাধান করে পরীক্ষার্থীদের কাছে সরবরাহ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরাফাত ইসলাম বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পরীক্ষার্থীরা জালিয়াতি চক্রের সাথে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছে। উক্ত ঘটনার সাথে জড়িত জালিয়াতি চক্রের অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে পাশাপাশি আটককৃত বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে গাইবান্ধা সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, গাইবান্ধার সাত উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই সহকারী শিক্ষক পদে প্রায় ৭০০টি শূন্য পদের বিপরীতে চাকরিপ্রার্থী ৩০ হাজার ৮৮ জন। এরমধ্যে উপস্থিত ২২ হাজার ৮১৩ জন পরিক্ষার্থী জেলার সদর, পলাশবাড়ি ও ফুলছড়িসহ তিন উপজেলার ৪৭ টি কেন্দ্রে সকাল ১০ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত ১ ঘন্টা লিখিত (এমসিকিউ) প্রথম ধাপের পরিক্ষায় অংশ নেয়।