প্রিন্সকে ঠেকাতে শত্রুর সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছেন আজগর

বিবিধ, নির্বাচন

উবায়দুল হক, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 20:05:41

সীমান্তবর্তী জনপদ হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত ময়মনসিংহ-১ আসন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দলীয় মনোনয়ন পেতে ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে নেতাকর্মীদের দৌড়ঝাঁপ।

ময়মনসিংহ-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে চারবার এমপি হয়েছেন প্রমোদ মানকিন। তিনি দুই মেয়াদে সংস্কৃতি ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৬ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করার পর আসনটিতে ভোটবিহীন উপ-নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তারই উত্তরাধিকার জুয়েল আরেং। রাজনীতিতে একেবারেই আনকোড়া হলেও শুধুমাত্র বাবার বদৌলতে দলীয় মনোনয়ন এবং প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো প্রার্থী না থাকায় নির্বিঘ্নেই এমপি হন জুয়েল।

তবে জীবনের প্রথম নির্বাচনে এক তরফা হেসে-খেলে জুয়েল আরেং নির্বাচনী বৈতরণি পাড়ি দিলেও এবার মনোনয়ন যুদ্ধেই জুয়েলকে শক্ত ধাক্কা দিতে পারেন নিজ দলীয় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ খান।

জুয়েলের সবচেয়ে বড় মনোনয়ন প্রতিদ্বন্দ্বী ফারুক আহমেদ ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত প্রায় ৫০ বছর ধরে। এবারের নির্বাচনে বিএনপি আসায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে লড়তে হবে হেভিওয়েট প্রার্থীর সঙ্গে। তাই এ নির্বাচনে জয় পেতে অভিজ্ঞ ফারুকের বিকল্প দেখছেন না দলীয় নেতাকর্মীরা।

এদিকে অনিয়ম ও দুর্নীতির মতো বড় রকমের কোনো অভিযোগ না থাকায় এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রতিনিধি হিসেবে এ আসনটিতে প্রয়াত প্রমোদ মানকিনের ছেলে জুয়েল আরেং শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পাবেন বলেই মনে করছেন অনুসারী-অনুগামীরা।

স্থানীয় সাংসদ জুয়েল আরেং বার্তা২৪.কমকে বলেন,‘বাবার অবস্থান ধরে রাখতে দলে ও মাঠে কাজ করছি। মনোনয়নের ব্যাপারে নেত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। মনোনয়ন যে কেউই চাইতে পারে।’

অপরদিকে, দীর্ঘদিন সংসদের বাইরে থাকা দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন তিন হেভিওয়েট নেতা। এরা হলেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বিচারপতি টিএইচ খানের ছেলে আফজাল এইচ খান ও দলটির সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলী আজগর।

এ ক্ষেত্রে মনোনয়ন লড়াইয়ে নিজেকে এগিয়ে রেখেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়া বিএনপি-জামায়াত জোটের ক্ষমতার সময়ে এলাকার উন্নয়নেও ব্যাপক ভূমিকা রাখেন প্রিন্স। আসন পুনরুদ্ধারে এ ক্ষেত্রে প্রিন্স বিকল্পহীন বলেও মত মাঠ কর্মীদের।

এমরান সালেহ প্রিন্স বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন যাবৎ দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি দলীয় নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর। আমি আশাবাদী, দল আমাকে মূল্যায়ন করবে।’

বাবা টিএইচ খান বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যানের মতো দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকলেও হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলায় দলীয় নেতাকর্মী এমনকি স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে নূন্যতম সম্পৃক্ততা নেই তার ছেলে আফজাল এইচ খানের। এমন অভিযোগ নেতা-কর্মীদের। দুঃসময়ে দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতেও তার দেখা মেলেনি। তবে শেষ মুহূর্তে তার আবির্ভাব ঘটবে শক্ত মনোনয়ন প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে, এমনটিও ভাবছেন কেউ কেউ।

আফজাল এইচ খানের ভাষ্য, ‘আমি মাঠের রাজনীতি করি, ফেসবুকের না। আমি শতভাগ আশাবাদী, নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দেবেন।,

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিবের পদ ছেড়ে মনোনয়ন নিশ্চয়তায় বিএনপিতে এসেছিলেন আলী আজগর। এরপর নিজেকে আর মেলে ধরতে পারেননি বেশ কয়েকবারের এ উপজেলা চেয়ারম্যান। জনমত অনুকূলে থাকলেও শক্তিশালী কোনো লবিং নেই। তবে প্রিন্সকে ঠেকাতে তিনি গাঁটছড়া বেঁধেছেন এক সময়কার ‘শত্রু’ আফজাল এইচ খানের সঙ্গে।

আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আলী আজগর বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘কথা নয়, আমি কাজকেই বিশ্বাস করি। অতীতেও ভোট রাজনীতিতে আমি এর প্রমাণ দিয়েছি।’

৬০৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ আসনটিতে মোট ভোটার রয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৬৭৪ জন। যেখানে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৮৯ হাজার ১০৯ জন এবং নারী ভোটার রয়েছে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৫৬৫ জন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর