ময়মনসিংহ-২: এগিয়ে আ.লীগ, পুনরুদ্ধার করতে চায় বিএনপি

বিবিধ, নির্বাচন

উবায়দুল হক, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 15:34:44

ময়মনসিংহের ফুলপুর ও তারাকান্দা উপজেলা নিয়ে গঠিত ময়মনসিংহ-২ আসন। এ আসনের ভোটার সংখ্যা সাড়ে চার লক্ষাধিক।

নৌকার ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এ আসনটিতে বরাবরই বিজয়ী হয়ে আসছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে দলটিতে রয়েছে খানিকটা অসন্তোষ। এটিকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে আসনটি পুনরুদ্ধারে নতুন সমীকরণে হিসাব কষছে বিএনপি। যদিও ক্ষমতাসীনদের দাবি, ভোট রাজনীতিতে এ আসনে শক্তিমান আওয়ামী লীগ।

বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম এম. শামছুল হক এ আসন থেকে পাঁচবার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। বর্তমানে এ আসনের এমপি তারই ছেলে শরীফ আহম্মেদ। ২০১৪ সালে বিনা ভোটে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এমপি নির্বাচিত হন তিনি। এই আসনটিতে মাত্র একবার জয়লাভ করে বিএনপি। ২০০১ সালে ভোটে বিজয়ী হয় দলটির প্রার্থী শাহ শহীদ সারোয়ার।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন বর্তমান এমপি ফুলপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শরীফ আহমেদ, সাবেক এমপি হায়াতোর রহমান খান বেলাল, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ব্যারিস্টার আবুল কালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম ফেরদৌস জিলু।

আসনটি নৌকার ঘাঁটি হলেও দলীয় কোন্দলের কারণে এটি হাতছাড়া হবার আশঙ্কা করছেন খোদ আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা। ভোটবিহীন নির্বাচনে এমপি হওয়ার পর থেকে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে প্রবীণ কিছু নেতাকর্মীর সঙ্গে শরীফ আহমেদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। প্রবীণ নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার দূরত্বের বিষয়েও অভিযোগ রয়েছে।

তবে দলীয় ঐক্যের পথ ধরে আসনটি এবারো আওয়ামী লীগের কবজায় থাকবে বলে মনে করেন তৃণমূলের নেতারা। আর এমপি-সমর্থকদের দাবি, নৌকার এ আসনটি ধরে রাখতে হলে শরীফের বাইরে আর কোনো যোগ্য নেতা মাঠে নেই।

আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের ত্যাগী হিসেবে সুপরিচিত নেতা হায়াতোর রহমান খান বেলাল ২০০৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে ২০১৪ সালে দলীয় মনোনয়ন না পেলেও এবার নৌকা মার্কায় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে প্রত্যাশী তিনি। দলীয় মনোনয়ন পেলে সুষ্ঠু নির্বাচনে ফের এমপি হবেন বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।

অপরদিকে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করলেও এবার তাদের মূল টার্গেট এ আসনটিকে পুনরুদ্ধার করা। ইতিপূর্বে বিএনপির শাহ শহীদ সারোয়ার একবার এমপি ছিলেন। তার বাবা রজব আলী ফকির ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য এবং ময়মনসিংহ জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য। তাদের একটি পারিবারিক ঐতিহ্য ও নিজস্ব ভোটব্যাংক রয়েছে। এমন সমীকরণে শাহ শহীদ সারোয়ার অন্য যেকোনো প্রার্থীর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি এগিয়ে রয়েছে।

তবে আসনটিতে এবারো দলীয় প্রার্থী হতে চান সদ্য বিদায়ী তারাকান্দা উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন তালুকদার, ফুলপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাড. আবুল বাশার আকন্দ, ফুলপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ এনায়েত উর রহমান, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির ময়মনসিংহ বিভাগের সহ-সভাপতি সুজাউদ্দৌলা সুজা।

স্থানীয় দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, বিভিন্ন সময় মোতাহার হোসেন তালুকদারকে দলীয় কর্মসূচিতে সক্রিয় দেখা গেছে। তবে তিনি তারাকান্দা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে নিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছেন। মূলত এ নির্বাচনে তার পছন্দের প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়ায় আসনটিতে ধানের শীষের ভরাডুবি হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

দলীয় ঐক্যের পাশাপাশি ভোট রাজনীতিতে অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং ভোটে জিতে আসতে পারবে এমন প্রার্থীকেই ধানের শীষ প্রতীক তুলে দিতে হবে। এমনটি হলেই এবারের নির্বাচনে বিএনপি এই আসন পুনরুদ্ধার করতে সম্ভব হবে বলে মনে করছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।

এ আসনে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ২৮ হাজার ৯৫১ ও নারী ভোটার রয়েছে ২ লাখ ২১ হাজার ৪৯৯ জন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর