ময়মনসিংহ-৪: আ.লীগের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধবে রওশন!

বিবিধ, নির্বাচন

উবায়দুল হক, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 19:48:13

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদকে এবারো ময়মনসিংহ-৪ আসনটি ছেড়ে দিতে চাইছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু কেন্দ্রীয় ভাবে চাইলেও এবার সেখানে নিজ দলের প্রার্থী চায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ। তবে কেন্দ্রীয় ভাবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির গাঁটছড়া অব্যাহত থাকায় সেই প্রত্যাশা হয়ত পূরণ হচ্ছে না।

গুরুত্বপূর্ণ ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনে শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও এরশাদ পত্নী বেগম রওশন এরশাদকে প্রার্থী হিসেবে সমর্থন জানাবে আওয়ামী লীগ এমটাই গুঞ্জন চলছে। এমন সমীকরণের বিপরীতে এই আসনে বিএনপিতে নতুন মুখ আসার সম্ভাবনাও প্রবল।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রেকর্ড ভোটে পরাজিত হয়ে বিএনপি সরকারের সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী একেএম মোশারফ হোসেন এবার ফিরে যাচ্ছেন ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা) আসনে। আর তার আসনটিতে স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের মহাসচিব ও ডক্টর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) মহাসচিব ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

জানা যায়, ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনটিতে দুবার সংসদ সদস্য ছিলেন বেগম রওশন এরশাদ। এরমধ্যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি অংশ নেওয়ায় এ আসনটি ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ওই সময় মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান। পরে টেকনোক্র্যাট কোটায় তাকে ধর্মমন্ত্রী করা হয়।

এদিকে রাজনীতি করার মতো শারীরিক অবস্থান হারিয়েছেন ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান। তিনি চান বিকল্প হিসেবে মনোনয়ন পাক তার ছেলে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত। তবে এ আসনে শান্ত ছাড়াও একাধিক প্রার্থী রয়েছে মনোনয়ন লড়াইয়ে। এর মধ্যে রয়েছেন- জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা, এফবিসিসিআই’র টানা তিনবারের পরিচালক আমিনুল হক শামীম, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিব) মহাসচিব ডা. এম.এ আজিজ, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম প্রমুখ।

আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির মানুষ হিসেবে পরিচিত অ্যাড. জহিরুল হক খোকা। তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রয়াত বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিলের বাবা। তিনি ইতিপূর্বে জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু ও দেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের এ ঘনিষ্ঠ সহচর এবার নৌকার মাঝি হতে চান।

দীর্ঘদিন ময়মনসিংহ পরিবহন মোটর মালিক সমিতির মহাসচিব ছিলেন আমিনুল হক শামীম। বর্তমানে ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি তিনি। আবার পরপর তিনবার ব্যবসায়ীদের পার্লামেন্ট হিসেবে পরিচিত এফবিসিসিআই’র পরিচালক হয়ে ইতিহাস গড়েন তিনি। কক্সবাজারে দেশের পর্যটন শিল্প বিকাশে অন্যতম সফল উদ্যোক্তা হিসেবে সুনাম রয়েছে শামীমের। ময়মনসিংহে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেও রয়েছে তার অবদান।

তার ছোট ভাই ইকরামুল হক টিটু প্রায় দশ বছর ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি সিটি করপোরেশনের প্রথম প্রশাসক। ভদ্র, বিনয়ী ও পরিশ্রমী ইকরামুল হক টিটু ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র হিসেবে ‘সুন্দর শহর ময়মনসিংহ’ এই থিমে শহরকে গড়ে তুলতে নানামুখী পদক্ষেপ নেন। উন্নয়নের রূপকার হিসেবে টিটুর সুনাম থাকায় ‘মনোনয়ন রাজনীতিতে’ এ বিষয়টি শামীমের পক্ষে ভোটারদের প্রভাবিত করবে বলে মনে করেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ আনন্দমোহন কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ছিলেন অ্যাড. মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল। তিনি জেলা থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা এ রাজনৈতিক নেতার ভাগ্যে এবার মনোনয়ন জুটবে বলে মনে করছেন অনেকেই।

এদিকে, পুনরুদ্ধারের স্বার্থে এবার আসনটিতে শক্তিশালী প্রার্থী দিতে চায় বিএনপির কেন্দ্রীয় হাই কমান্ড। এক্ষেত্রে তিনজন প্রার্থীর নাম জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে। তারা হলেন- ড্যাবের মহাসচিব ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও ৯০’র মাঠ কাঁপানো ছাত্রনেতা আবু ওয়াহাব আকন্দ ও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম মো. ওয়ালিদ।

ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন দিনাজপুর-৬ আসন থেকেও মনোনয়ন কিনেছেন। তবে তিনি জানিয়েছেন ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসন থেকেই প্রার্থী হতে চান এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে সহজেই তিনি পরাজিত করতে পারবেন বলে বিশ্বাস তার।

এ আসনটি থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী আবু ওয়াহাব আকন্দকে এখানকার মাঠ রাজনীতির প্রাণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আপদে-বিপদে দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রাখা, কারাবরণসহ নানা কারণে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে সর্বাগ্রে উচ্চারিত হচ্ছে তার নাম।

ওয়াহাব আকন্দ পরিবারের প্রায় সবাই বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বড় ভাই আব্দুর রশিদ আকন্দ ছিলেন ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে ময়মনসিংহ ছাত্রসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে মাঠের দখল নিয়েছিলেন ওয়াহাব আকন্দ। এখনো হামলা-মামলা রাজনীতির মাঠে সরব রয়েছেন তিনি। দলের প্রতি ত্যাগ স্বীকারের পুরস্কারস্বরূপ আসনটিতে তিনি মনোনয়ন পাবেন বলে আশা তার।

এ আসনে দলীয় মনোনয়ন চান নাসিরাবাদ কলেজ ছাত্র সংসদের টানা দুই বারের সাবেক ভিপি, ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামরুল ইসলাম মো. ওয়ালিদ। তিনি কোতোয়ালি বিএনপির সভাপতি। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রায় ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে পরাজিত করে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে ওয়ালিদের জনপ্রিয়তা রয়েছে। মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী তিনিও।

এ সম্পর্কিত আরও খবর