চট্টগ্রামের জোট-ফ্রন্টের প্রার্থীদের কপালে ভাঁজ

বিবিধ, নির্বাচন

আবদুস সাত্তার, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 05:06:50

চট্টগ্রামে মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের চরম টেনশনের দিন যাচ্ছে। টেনশনে রয়েছেন ফ্রন্ট ও জোটের প্রার্থীরাও। জানা গেছে, সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার পর্ব শেষে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রক্রিয়া এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। মঙ্গলবার চট্টগ্রামে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদেরও সাক্ষাৎকার শেষ হয়েছে। কারা পাচ্ছেন মনোনয়ন- এ চিন্তায় ঘুম নেই বড় দুই দলের নেতাদের। সেই সাথে চলছে জোট, মহাজোট বা ফ্রন্টের হিসাব নিকাশ।

চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে আওয়ামী লীগের ২২৫ জন ও বিএনপির ১০৮ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে তা জমা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিকরা যেমন চট্টগ্রামের বিভিন্ন আসনে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন তেমনি মহাজোটের অংশীদার জাতীয় পার্টি ছাড়াও এ পার্টির নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোটের শরিক দল বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টও ঐ সব আসনে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছে।

বিগত নির্বাচনে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ জোটের শরিকদের যে চারটি আসন ছেড়ে দেয় সেগুলো হল- চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি), চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী), চট্টগ্রাম ৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) ও চট্টগ্রাম ৯ (কোতোয়ালি)।

হাটহাজারী আসনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, চান্দগাঁও-বোয়ালখালী আসনে জাসদের কার্যকরী সভাপতি মাঈনউদ্দিন খান বাদল ও কোতোয়ালি আসনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, চট্টগ্রাম-২ ফটিকছড়ি থেকে তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নজিবুল বশর ভাণ্ডারী নির্বাচিত হন। এবারও চারটি আসন তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে নাকি রদবদল হবে- তা নিয়ে বেশ জল্পনা-কল্পনা চলছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ চার আসনের মধ্যে দুটি আসন ফটিকছড়ি ও চান্দগাঁও-বোয়ালখালী নিয়ে বেশ অসন্তোষ রয়েছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের। নজিবুল বশর ভাণ্ডারী জোটের টিকিটে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে এমপি হলেও নৌকার কর্মীরা এ আসনে সবচেয়ে বেশি অবজ্ঞা-অবহেলার শিকার হয়েছেন। তৃণমূল থেকে উচ্চপর্যায় পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা চান না এ আসনটি আবারও তাকে ছেড়ে দেওয়া হোক।

আসনটি ভান্ডারীকে দেওয়া হলে আওয়ামী লীগের মুল অংশের কাজ করা নিয়ে দ্বিধা বিভক্ত রয়েছে। কারণ ফটিকছড়িতে আওয়ামী লীগ দুই গ্রুপে বিভক্ত দীর্ঘদিন থেকেই।

এ ব্যাপারে ফটিকছড়ি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরী বার্তা২৪কে বলেন, ‘আমাদের দাবি ছিল আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ার। সেটি না হলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করা মশকিল হয়ে যাবে।’

অপর দিকে নৌকার টিকিট নিয়ে মইন উদ্দিন খান বাদলও এলাকায় তেমন উন্নয়ন করতে পারেননি। আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরাও চান না এই জাসদ নেতাকে। কারণ তিনি বর্তমানে শারীরিকভাবে অসুস্থ। তাছাড়া তার দলও ভেঙে গেছে। পক্ষান্তরে এ আসনে বিএনপি থেকে নির্বাচন করবেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম. মোরশেদ খান।

বাঁশখালী আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছাড়ার সম্ভাবনা আছে। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী এ আসন থেকে নির্বাচন করতে চান। আওয়ামী লীগ থেকে বর্তমান এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর পাশাপাশি দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ মুজিবুর রহমানও মনোনয়নপ্রত্যাশী। তাই তাদের মধ্যেও টেনশনের সীমা নেই।

বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব এমএ মতিন চট্টগ্রাম-১২ পটিয়া ও চট্টগ্রাম-১৩ আনোয়ারা আসনে প্রার্থী হতে চান। জোটের পক্ষ থেকেও তাকে এ দুটি আসনের যে কোনো একটিতে মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন বার্তা২৪কে বলেন, ‘দলীয় হোক জোটের হোক নেত্রী যাকে নৌকা দেয়, মহানগর আওয়ামী লীগ তাঁর পক্ষে কাজ করবে। এখানে বিদ্রোহী হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

এদিকে ১০ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকায় চট্টগ্রামে বিএনপির বেহাল অবস্থা। নির্বাচনে অংশ নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চান দলটির নেতারা। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্ষমতায় যাওয়ার বিষয়ে এখনই সিরিয়াস নয় দলটির নেতাকর্মীরা। তারা চান আগে পার্লামেন্টে যেতে। সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছেন তারা। বিএনপির কাছে চট্টগ্রামে অন্তত ছয়টি আসন চায় শরিকরা।

কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) দুটি, মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি একটি ও জামায়াতে ইসলামী তিনটি আসন দাবি করছে। জামায়াতের নিবন্ধন না থাকলেও এ দলের প্রার্থীরা ধানের শীষ প্রতীকেই নির্বাচন করবেন।

কল্যাণ পার্টি হাটহাজারী আসন, এলডিপি চন্দনাইশ ও রাঙ্গুনিয়া আসন এবং জামায়াতে ইসলামী নগরীর বন্দর-পতেঙ্গা, সাতকানিয়া-লোহাগাড়া ও বাঁশখালী আসন দাবি করছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কার ভাগে ক’টি আসন জুটবে সেই টেনশনেই দিন কাটছে তাদের।

মহানগর বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ইদ্রিস আলী বার্তা২৪কে বলেন, ‘বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থীরা অবশ্যই মনোনয়ন পাবে। এর বাইরে শরিকদের মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে যে আসন থেকে শরীকরা জিতবেন বলে মনে করেন, সে আসনে শরীকদের দেওয়া হবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর