ঠাকুরগাঁও ২: প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আ.লীগ, সুযোগে রয়েছে বিএনপি

বিবিধ, নির্বাচন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 21:50:29

বালিয়াডাঙ্গী-হরিপুর ও রানীশংকৈল উপজেলার কিছু অংশ নিয়ে গঠিত ঠাকুরগাঁও-২ আসন। এ আসনে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৪৩৬ জন ভোটার রয়েছে। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছে সংখ্যা ১ লাখ ৩৯ হাজার ২৩ এবং নারী ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৩৪ হাজার ৪১৩ জন। নতুন ভোটার সংখ্যা ৫৫ হাজার ৯৮ জন। মোট ভোট কেন্দ্র রয়েছে ১০৪টি।

বর্তমানে এ আসনের সাংসদ দবিরুল ইসলাম। গত তিন সংসদ নির্বাচনে আসনটি দখলে রেখেছেন তিনি। এরপরেও আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে দবিরুল ইসলামের মনোনয়ন পেতে কিছুটা বেগ পেতে হবে বলে মনে করছে তৃণমূল নেতাকর্মীরা। অনেকে মনে করছে এবারে হয়তো এই আসনে আসবে নতুন কোনো চমক। এখানে গৃহযুদ্ধ রয়েছে আওয়ামী লীগের মধ্যে। আর এই সুযোগটিই হয়ত নেবে বিএনপি।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন কৌশলে প্রচারণায় নেমেছে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রত্যাশীরা বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার ও ব্যানার টানিয়েছেন। করছেন কর্মসূচি, গণসংযোগ, ব্যক্তিগত সভা-সমাবেশ, সামাজিক অনুষ্ঠান।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- ঠাকুরগাঁও-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আলম টুলু, বালিয়াডাঙ্গি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান প্রবীর কুমার রায়।

এই আসনটি দীর্ঘ ৩০ বছর যাবৎ ধরে রেখেছে আওয়ামী লীগ। সব নির্বাচনেই সেখানে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জামায়াতের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। কিন্তু কখনো নির্বাচিত হতে পারেনি জামায়াত।

আওয়ামী লীগের অনেকেই বলেছেন, ২০০১ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত দবিরুল ইসলাম এই আসনে প্রার্থী হয়েছেন। প্রতিবারেই তিনি বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন। তিনি ওই এলাকায় ভোটের যাদুকর হিসেবে পরিচিত। এছাড়া নির্বাচনী এলাকায় রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, সীমান্ত নদীর বাঁধ নির্মাণ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণসহ ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। বিশেষ করে দারিদ্র্যপীড়িত ওই এলাকার মানুষের ভাগ্যোন্নয়নেও অবদান অব্যাহত রেখেছেন। বর্তমানে এমপি দবিরুল ইসলাম সংখ্যালঘুদের জমি দখলের অভিযোগের কারণে কিছুটা ইমেজ সংকটে ভুগছেন বলে দলের কিছু নেতা মনে করছেন।

এদিকে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান প্রবীর কুমার রায়ের আগামী জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। তাই তিনি নির্বাচনী মাঠে ভোটারদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরিতে কাজ করছেন। অন্যদিকে মনোনয়ন পেতে জোরালো জনসংযোগ চালাচ্ছেন ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. মোস্তাক আলম টুলু। এছাড়া বর্তমান এমপি দবিরুল ইসলামের বড় ছেলে জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক তরুণ নেতা মাজহারুল ইসলাম সুজনকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য প্রত্যাশা ব্যক্ত করছেন তৃণমূল আওয়ামী লীগের কর্মীরা।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন সদস্য জানান, সংখ্যালঘুরা হচ্ছে আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক। অন্য দলে ওরা কোনো দিনও ভোট দেবে না। কিন্তু একটি গ্রুপ এমপি’র বিরুদ্ধে সংখ্যালঘুদের জমি দখলের অভিযোগ তুলেছেন আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে বাধাগ্রস্ত করার জন্য। আর সেই কারণে সংখ্যালঘুরা অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রবীর কুমারের দিকে ঝুঁকতে পারেন।

মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রবীর কুমার রায় বলেন, ‘নেত্রী (শেখ হাসিনা) যাকে মনোনয়ন দেবেন তার পেছনে কাজ করব। তবে এলাকার প্রকৃত চিত্র যদি জানতে পারেন, তাহলে আমাকে নেত্রী মনোনয়ন দেবেন বলে আমার বিশ্বাস।’

তিনি বলেন, ‘আমি গেজেটভুক্ত একজন মুক্তিযোদ্ধা। মহান মুক্তিযুদ্ধে আমার চাচা বালিয়াডাঙ্গী এলাকায় প্রথম শহীদ হন। ১৯৯৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আমি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছি। ২০০৯ সালে আমি বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জয়লাভ করি। ওই সময় শহরের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ ও শহীদ মিনার নির্মাণসহ অনেক উন্নয়নের কাজ করে সকলের কাছে সমাদৃত হয়েছি। তাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেলে আবারো বিজয়ী হব।’

এদিকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আলম টুলু এ আসনে চালিয়ে যাচ্ছেন গণসংযোগ। তিনি ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নেতা ছিলেন। পরে ২০০৪ সালে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন।

তিনি বলেন, ‘আমি এ এলাকার সুবিধাবঞ্চিত মানুষ ও নির্যাতিত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, দলের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন আপদে বিপদে পাশে থাকার চেষ্টা করছি। তারা তাদের ভাগ্য উন্নয়নে সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন চায়, চায় উন্নত জীবনযাপন। আর তাই স্থানীয় দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের অনুরোধে আগামী নির্বাচনে আমি মনোনয়ন চাইব।’

বিভিন্ন অভিযোগের ব্যাপারে বর্তমান ঠাকুরগাঁও-২ আসনের এমপি দবিরুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিনের সুনাম নষ্ট করার জন্য বিরোধী কিছু কুচক্রী আমার নাম ভাঙিয়ে এলাকায় অপকর্ম করছে। অনেক ষড়যন্ত্রের মধ্যেও আমি প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে এ আসনে আমি প্রার্থী হলে নৌকা প্রতীক আবারো বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে।’

একই আসনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাবা প্রয়াত মির্জা রুহুল আমিন (চোখা মিয়া) এক সময় সংসদ সদস্য ছিলেন। বিএনপির নেতাকর্মীদের ধারণা, মির্জা ফখরুল এ আসনে নির্বাচন করতে পারেন। তবে এ ব্যাপারে মির্জা ফখরুল কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি। আর এখন পর্যন্ত এ আসনে কে প্রার্থী হবেন তা নিয়ে দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

একই আসনে মির্জা ফখরুল ছাড়াও আরও দু’জন মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন। তারা হলেন- দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য জেড মর্তুজা চৌধুরী তুলা ও জেলা জামায়াতের আমির আব্দুল হাকিম।

এ সম্পর্কিত আরও খবর