মুখে মধু, অন্তরে বিষ যার!

বিবিধ, নির্বাচন

ঊর্মি মাহবুব, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | 2023-09-01 19:40:52

গোলাম মাওলা রনি, টকশোর মিষ্টভাষী এই মানুষটি আবারো আলোচনায় এসেছেন বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে। তার বক্তব্য শুনে মুগ্ধ হন অনেকেই। সরকারের বিরোধীতা করে টকশোতে অবিরাম নীতিবাক্য পাঠ করলেও ২০০৮-২০১৪ সাল পর্যন্ত গোলাম মাওলা রনি ও তার পোষা ভাইয়া বাহিনীর নির্যাতনের কথা আজও ভুলতে পারেনি পটুয়াখালী-৩ আসনের স্থানীয়রা। তার বিরুদ্ধে ভূমি দখল, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।

ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলায় জন্ম গোলাম মাওলা রনির। বাবা সামছুদ্দিন মুন্সি ফেরি করে গামছা বিক্রি করতেন। অর্থনৈতিক অস্বচ্ছ্বলতার কারণে এক পর্যায়ে ফরিদপুর থেকে পরিবার নিয়ে সামছুদ্দিন মুন্সি চলে আসেন পটুয়াখালীতে।  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা শেষ করে চাকরি জীবনে প্রবেশ করেন। ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত বেসরকারি কোম্পানিরর সাধারণ কর্মকর্তা ছিলেন তিনি। তারপর তিনি হঠাৎ খুঁজে পান আলাদিনের চেরাগ। কয়েক বছরের মধ্যেই কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান তিনি। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন নিয়ে জাতীয় সংসদের সর্বকনিষ্ঠ এমপি হিসেবে নির্বাচিত হোন। তারপর থেকেই শুরু তার ক্ষমতার অপব্যবহার।

সরকারি দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের পাহাড়ের অভিযোগ তোলেন তিনি। কিন্তু বাস্তবে তার সম্পদের হিসাব দেখে চোখ চড়ক গাছ হতে খুব একটা সময় লাগবে না। কী নেই তার? রাজধানীর অভিজাত এলাকা নাইম রোড, বারিধারা-বসুন্ধরা এলাকায় রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট, যার দাম কয়েক কোটি টাকা। ঢাকার পূর্বাচলে রয়েছে প্লট। উইন্ডি গ্রুপের মালিকও তিনি। পটুয়াখালীতেও রয়েছে সম্পদের পাহাড়।

শুধু কি তাই? পটুয়াখালী-৩ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নপত্র তুললেও তার বিরুদ্ধে এলাকায়ই ভূমি দখল, চাঁদাবাজিসহ রয়েছে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। ২০০৮-২০১৪ সাল পর্যন্ত সময়কালে গোলাম মাওলা রনির ‘ভাইয়া’ বাহিনীর তান্ডবে তটস্থ থাকতে হতো এলাকাবাসী। বাহিনীর পরিচালনায় থাকত তার শ্যালক মুকবুল খান। অন্যদিকে দশমিনা এলাকায় ‘ভাইয়া’বাহিনীর হয়ে গোলাম মাওলা রনির নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতো লিটন।

পটুয়াখালী-৩ আসনের আওতাধীন উলানী বাজারের খাস জমি দখল করে দিব্যি বানিয়ে রেখেন দুইতলা বাড়ি। দুদকে গোলাম মাওলা রনির বিরুদ্ধে রয়েছে অভিযোগের পাহাড়। উলানী এলাকায় নদী দখল করে মার্কেট করার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু পরে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে তা ভেঙে দেয়।

মুখে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কথা বললেও রনি ও তার ভাইয়া বাহিনীর উৎপাতে দশমিনা উপজেলার হিন্দু আটটি পরিবারকে ২০০৮-২০১৪ সাল পর্যন্ত হতে হয়েছে ঘরছাড়া। তারা আইনের আশ্রয় চাইতে গেলে পাল্টা মামলা দেওয়া হয় এই আট হিন্দু পরিবারের বিরুদ্ধে। একটি নয়, দুটি নয় ১৭টি মামলা গোলাম মাওলা রনি দায়ের করেণ সংখ্যালঘু পরিবারগুলোর বিরুদ্ধে। তবে এর কারণে বিপাকে পড়তে হয়েছিল তাকেই।

মিষ্টভাষী গোলাম মাওলা রনির বিরুদ্ধে একাধিকবার গণমাধ্যম সরব হলেও তাদের ওপর চালানো হয় অকথ্য নির্যাতন। একটি বেসরকারি টেলিভিশনের দুই সাংবাদিকের ওপর নির্যাতন চালিয়েছিলেন ২০১৪ সালে। তার জের ধরে একবার গ্রেফতারও করা হয় তাকে। পটুয়াখালির সাংবাদিক এলিটের ওপর শারীরিক নির্যাতনও করেছিলেন তিনি। সে সময় সাংবাদিকরা প্রতিবাদ করলেও উল্টো ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি।

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, আসন্ন নির্বাচনের কারণে ভুক্তভোগীদের সাথে আলোচনা করে বিবাদ মিটিয়ে নিয়েছেন রনি। ২০১৪ সালে পর থেকে ঘাপটি মেরে বসে আছে রনির ‘ভাইয়া’বাহিনী। নির্বাচনে যদি কোনোভাবে জয়ী হতে পারেন তাহলে ভাইয়া বাহিনীর খোলস ছেড়ে পুরানো চেহারায় ফিরতে খুব একটা সময় লাগবে না।

স্থানীয় বিএনপি’র মধ্যেও গোলাম মাওলা রনিকে নিয়ে চলছে ক্ষোভ। নাম না প্রকাশ করার শর্তে পটুয়াখালীর এক বিএনপি নেতা বলেন, ‘২০০৮-২০১৪ সাল পর্যন্ত বিএনপির নেতা কর্মীরা রনির নির্যাতনের শিকার হয়। কিন্তু আমাদের নির্যাতন করে এখন আমাদেরই দল থেকে নির্বাচন করতে যাচ্ছে এটা মেনে নিতে পারছি না। তার মুখে মধু অন্তরে বিষ। তিনি একবার আওয়ামী লীগে থাকেন একবার বিএনপির কাছে নমিনেশন চান। বহুরূপী মানুষ এই রনি। কেন্দ্রীয় নেতাদের গোলাম মাওলা রনির বিষয়টি নিয়ে আরো একবার ভাবা উচিত।’

এসব বিষয়ে পটুয়াখালি জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শাহজাহান খান বার্তা২৪.কম বলেন, ‘গোলাম মাওলা রনি’তো ঢাকায় থাকেন। আমরা এলাকায় এতো অত্যাচার নির্যাতনের পরেও কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু আজ গোলাম মাওলা রনিকে মনোনয়ন দেওয়া হলো। এতে আমাদের সমস্যা নেই। দল যাকে মনোনয়ন দিবে আমরা তার হয়েই কাজ করবো। কিন্তু তৃণমূলে মানুষের কাছে কার জনপ্রিয়তা বেশি সেটি দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যাচাই বাছাই করা উচিত।’

তবে এসব বিষয়ে গোলাম মাওলা রনির সঙ্গে একাধিকবার ফোন ও মেসেজ দিয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার উত্তর পাওয়া যায়নি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর