মনে হয় না বিএনপি নির্বাচনে থাকবে: শামীম ওসমান

বিবিধ, নির্বাচন

রেজা-উদ্-দৌলাহ প্রধান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-24 18:23:50

ফতুল্লা (নারায়ণগঞ্জ) থেকে ফিরে: জাতীয় নির্বাচনের ক্ষণগণণা শুরু হয়েছে। প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনে তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, চলছে প্রার্থীতা বাছাইপর্ব। ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর প্রার্থীরা পুরোদমে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করবেন। কিন্তু এই সময়েও ক্ষমতাসীন সরকার আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনৈতিক জোট ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে আসবে না বলে বিশ্বাস করেন নারায়ণঞ্জ-৪ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান।

তিনি বলেন, ‘আমি এখনও মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি ওরা (বিএনপি-জামায়াত) ইলেকশন করবে না। কারণ মাঠের যে অবস্থা, সেটা তাদের ফেভারে না। আমরা তিন পুরুষ ধরে রাজনীতি করি। এক জায়গার ভাত টিপলে বোঝা যায়, ভাতের কী অবস্থা। আমার এলাকায় ভাত টিপে দেখেছি, আশপাশের এলাকারও খবর রাখি। মানুষের যে জোয়ার দেখতেছি সেটা কিন্তু ওরাও বুঝতেছে।’

শনিবার (১ ডিসেম্বর) নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বার্তা২৪.কম-এর মুখোমুখি হয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও নৌকার মনোনীত প্রার্থী শামীম ওসমান, ওই সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

শামীম ওসমান বলেন, ‘ওদের রাজনীতিতে নীতি নেই। কত বড় বড় নীতির কথা, আদর্শের কথা ড. কামাল হোসেনরা বলেছেন; এখন তো জামায়াতের সঙ্গে তাদের সব কিছু মিলে যাচ্ছে। এমন নৈতিকতার অধপতন যাদের ভেতরে আছে, তাদের জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে। তাছাড়া যেভাবে তিন-চারটা করে নমিনেশন দিয়েছে একেক এলাকায়। সেটাও প্রশ্ন সাপেক্ষ বিষয়।’

সন্ত্রাস ও নাশকতা করলে বিএনপি-জামায়াতকে নারায়ণগঞ্জে থাকতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শামীম। তিনি বলেন, আমার যেটা মনে হচ্ছে নির্বাচনটাকে আটকে দিয়ে মাঝখানে অন্যকোনো শক্তিকে নিয়ে খেলতে পারে তারা। কিন্তু আপনি নিশ্চিত থাকেন, সেটা তারা পারবে না। তাদের কোনো গতি নেই। কারণ মানুষ এটাকে ভালো চোখে নেবে না। আর যদি করতে চায়, তাহলে বাংলাদেশে তাদের রাজনীতি এখানেই ইতি হয়ে যাবে। ২০১৩-১৪ সালের মতো পরিস্থিতি যদি সৃষ্টি করতে চায়, জনগণ এবার আর ছাড় দেবে না। আমার মনে হয় না তাদের আর বাংলাদেশে থাকা হবে। অন্তত আমার এলাকা নারায়ণগঞ্জ; এতটুকু বলতে পারি থাকতে পারবে না।

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর প্রতিদিনই নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন ওয়ার্ডে উঠান বৈঠক ও পথসভায় অংশ নিচ্ছেন শামীম ওসমান। পথসভায় লম্বা বক্তব্য দিলেও জনগণের কাছে ভোট চাইছেন না তিনি। প্রচারণায় তার নতুন কৌশল বেশ আলোচনার সৃষ্টি করেছে। শামীম বলেন, আমি বিদেশে নিজের চোখে দেখেছি কেউ যেয়ে বলেন না আমাকে ভোট দেন, প্রার্থীরা সেখানে শুধু তাদের প্রচারপত্র দিচ্ছে। কেননা মানুষ এখন সচেতন। তাই আমি একই কায়দায় কয়দিন চলব। কাউকে না কাউকে তো ঘন্টাটা বাঁধতে হবে।

তিনি বলেন, ‘আমি কাজ করেছি। মানুষকে কিন্তু বোকা ভাবার কারণ নেই। পিপলস ইজ ভেরি স্মার্ট। আমরা দায়িত্ব শুধু তাদের ভেতরটা জাগিয়ে দেওয়া। মানুষকে বুঝিয়ে দেওয়া, তুমি ভালো কাজটা সমর্থন করো; অন্ধভাবে মন্দকে সমর্থন করো না। আমি দেখছি, মানুষ এটাকে গ্রহণ করছে। কাজ করলে কাজের মূল্যায়ন হবে। ’

তার মতে, উন্নয়নটা যদি প্রতিযোগিতাপূর্ণ হয় তাহলে কিন্তু বেটার বাংলাদেশ হয়। আর সব জায়গায় যদি একই প্র্যাকটিস হয়, তাহলে নারায়নগঞ্জ সুন্দর হবে; সারা বাংলাদেশ সুন্দর হবে। ইনডিভিজ্যুয়ালি কোনো একটা জায়গাকে ঠিক করা যাবে না। এভাবে আমরা যদি একসঙ্গে আগাই তাহলে, বাংলাদেশ গড়তে খুব বেশি সময় লাগবে না।

পথসভায় বাংলাদেশকে ‘মা’ আর নারায়নগঞ্জকে ‘মেয়ের’ সঙ্গে তুলনা করে মেয়েকে সাজানোর ইচ্ছা তার। এ সুযোগ দিতে ভোটারদের কাছে দাবি করেছেন শামীম ওসমান। তিনি বলেন, আমার টার্গেট হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ হবে একটা এডুকেশনাল ও মেডিকেল হাবস। এগুলো কারা করতে পারেন আমরা জানি। বাংলাদেশের টপমোস্ট ইনভেস্টরস- তাদেরকে চিনি। আমি ইতোমধ্যে দেশের বড় বড় শিল্পগ্রুপগুলোর সঙ্গে কথা বলেছি, যারা বিজনেস সেক্টরে টাইকুন্স। আমাকে কথা দিয়েছেন, তারা আন্তর্জাতিকমানের ইউনিভার্সিটি, কলেজ ও স্কুলের চেইনগুলোকে এখানে আনার ব্যবস্থা করবেন।

শামীম ওসমান বলেন, ঢাকা ইজ এ ডেড সিটি। যে সিটিতে মানুষ থাকার কথা ৩০-৪০ লাখ, সেখানে মানুষ থাকছে দুই-আড়াই কোটি। আপনি করবেনটা কী? তাই আমার এই জোনটাকে যদি পূর্বাঞ্চল ধরেন, তাহলে নায়ারণগঞ্জ থেকে আপটু কক্সবাজার ২২টা জেলা আছে। ২২টা জেলার মানুষ যখন অসুস্থ হয়, সবাই ঢাকাকে টার্গেট করে। যার পয়সা আছে সে টার্গেট করে স্কয়ার, অ্যাপোলো, ল্যাবএইড হাসপাতাল । যেতে যেতে যারা সিরিয়াস পেসেন্ট ওই ট্রাফিক জ্যামে আটকে অনেকের মৃত্যু হয়। আমার এই রিংরোডে যদি হয়, তাহলে কিন্তু পুরান ঢাকার পুরো বেল্ট, ২২টা জেলার মানুষকে কিন্তু আর ঢাকায় যেতে হয় না। আমি ইতোমধ্যেই কথা বলেছি । ভারতের একটি হাসপাতাল ৫০০ বেডের কাজ অলরেডি শুরু হয়েছে নারায়ণগঞ্জে।


তিনি বলেন, দেশের নীট গার্মেন্টেসের ৭৫ ভাগই আমার নির্বাচনী এলাকায়। আমরা বাংলাদেশের টোটাল ট্যাক্সের প্রায় ২১-২৫ শতাংশ কাভার করি। আমরা কিন্তু নারায়ণগঞ্জে যতটুকু উপকৃত হয়েছি সেটা হলো- ১৯৯৬-২০০১ সালে। এর পর থেকে কিন্তু উন্নয়ন সেভাবে ধরে রাখতে পারিনি। একটা সময় নারায়ণগঞ্জ ছিল কৃষি জোন। কিন্তু এখন সেটা হয়েছে অন্যতম বড় ইন্ডাস্ট্রিয়াল বেল্ট। ২০০১-এর পর যারা নির্বাচিত হয়েছে তারা কোনো কাজ করেনি। আর কাজ না করাতে অবকাঠামোর অবস্থা এতটাই ভেঙে পড়েছে যে, এটা ঠিক করতে আমাদের প্রচণ্ড কষ্ট হয়েছে এবং হচ্ছে। আমরা একটা পর্যায়ে চলে এসেছি এখন। বলছি না, শতভাগ কাজ হয়েছে। ৮০-৮৫ শতাংশ কাজ শেষ করতে পেরেছি। আরও কিছু অবকাঠামো যদি আমরা করতে পারি, তাহলে মানুষের বেসিক প্রয়োজনগুলো পূরণ হয়ে যাবে।

আর ডিএন্ডডি যে প্রকল্পটা হচ্ছে, সেটা যদি আল্লাহর হুকুম হয়; আর আমাদের আপা যদি আবারও প্রধানমন্ত্রী হন (তিনিই হবেন- ইনশাআল্লাহ)। ডেমরা থেকে শুরু করে সিদ্ধিরগঞ্জ পর্যন্ত ইতোমধ্যেই ৯৯টা খাল উদ্ধার করা হয়েছে। এগুলোকে উদ্ধার করে লেকের মতো করে তৈরি করা হবে। আমরা চেষ্টা করছি এ লেকের মধ্য দিয়ে নৌ চলাচলের ব্যবস্থা করতে।

শামীম বলেন, ইতোমধ্যে একটা ইউনিভার্সিটির অনুমতি পেয়েছি। বুলেট ট্রেন আনতেছি। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ডাবল রেল লাইনের কাজ শুরু হয়েছে। ইলেকট্রিক ট্রেন, ডিএনডি প্রকল্প, ইউনিভার্সিটি তাহলে সিটি কিন্তু আর ঢাকা থাকে না সিটি হবে নারায়নগঞ্জ। আমার সেটাই লক্ষ্য।

এ সম্পর্কিত আরও খবর