ফরিদপুর-৪: দরদি নিক্সনে ভরসা, ঝুঁকিতে নৌকা!

বিবিধ, নির্বাচন

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | 2023-09-01 14:40:14

ভাঙ্গা (ফরিদপুর) উপজেলা থেকে: ‘টাকা-পয়সা চাই না, কেউ যদি আইস্যা জড়ায় ধরে বলে, মা! কি খবর?- তাতেই শান্তি! আমরা গরীবরা টাকার জন্য মরি না, একটু ভালো ব্যবহার চাই! নিক্সন চৌধুরী ধোপা, গরীব, ফকিরকে- বিনাদ্বিধায় বুকে টেনে নেয়। ও আমাদের কাছের লোক, ডাকলে পাই।’

ফরিদপুর -৪ আসনের সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরীকে নিয়ে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ভাঙ্গা পৌরসভার চা বিক্রেতা মীরা বেগম। চার সন্তানের জননী মীরা- সন্তানের সংসারে বোঝা না হয়ে নিজেই চায়ের দোকান দিয়ে বসেছেন।

সারাদেশের মতো নির্বাচনী জ্বরে ভুগছে ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন ফরিদপুরের এই তিন উপজেলাও।

শনিবার (১৫ ডিসেম্বর) ভাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে পা দিতেই ভোটের এ উত্তাপ টের পাওয়া গেলো। কানে আসে সাউন্ডবক্সের জোরালো শব্দ। পাশাপাশি দুই বক্স থেকে আসছে নির্বাচনী প্রচারণা। একটিতে থেকে শব্দের ঝনঝনানি, 'জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনার সালাম নিন নৌকা মার্কায় ভোট দিন; অপরটিতে অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা স্বরে’ গরীবের বন্ধু নিক্সন ভাই, তাকে সিংহ মার্কায় ভোট দেই।’

ভাঙ্গা সদরপুর ও চরভদ্রাসন নিয়ে ফরিদপুর-৪ আসন। প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার ভোটারের এ অঞ্চলে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ড. কাজী জাফর উল্লাহ। ধানের শীষের প্রার্থী খন্দকার ইকবাল হোসেন সেলিম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সিংহ প্রতীকে নির্বাচনে লড়ছেন মজিবুর রহমান চৌধুরী (নিক্সন)। প্রতিটি দল মনোনীত প্রার্থীদের প্রচারে জমে উঠেছে ভোটের প্রচারণা। মোড়ে মোড়ে রঙিন পোস্টার আর ব্যানারে সয়লাব। চলছে সভা-সমাবেশও।

প্রার্থী সম্পর্কে চুল-চেরা বিশ্লেষণে ব্যস্ত ভোটাররাও। সরেজমিন ঘুরে দশম সংসদের এমপি নিক্সন চৌধুরীর জনপ্রিয়তা বেশ টের পাওয়া গেল। আওয়ামী লীগ প্রার্থী কাজী জাফর উল্লাহ হেভিওয়েট প্রার্থী হলেও এখানে তার গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে নিক্সন চৌধুরী। আওয়ামী লীগের এ ঘাঁটিতে বিদ্রোহী হয়ে তরুণ এ রাজনীতিবিদ গত ৫ বছরে জনগণের সঙ্গে ভালো সংযোগ স্থাপন করতে পেরেছেন বলে এলাকাবাসীর দাবি।

চর এলাকার উন্নয়ন, গরীব-দু:খী মানুষের সঙ্গে সহজে মিশে যাওয়ায়, ক্ষমতায় থাকাকালীন অধিকাংশ সময় এলাকায় থাকা সব মিলে খেটে খাওয়া মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে নিক্সন চৌধুরী। তাই ভোটারদের দাবি, ভোটের পাল্লা নিক্সন চৌধুরীর দিকেই ভারি।

২০১৪ সালের নির্বাচনে বিদ্রোহী হয়ে বিপুল ভোটে নৌকা প্রার্থী কাজী জাফরুল্লাহকে পরাজিত করছিলেন নিক্সন। সেই তিন উপজেলার আওয়ামী লীগের একাংশ তাকে সমর্থনও দিয়ে যাচ্ছেন।

ভাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় রিকশা চালক আবেদের সঙ্গে। নিজের রিকশায় ঝুলিয়ে সিংহ মার্কা। তিনি বলেন, এ আসনে নিক্সন ভাইর বিকল্প নাই। উনি তো আওয়ামী লীগের লোক, যারা আওয়ামী লীগের লোক তারাও তাকে ভোট দেবে। ধানের শীষ এখানে দুধ-ভাত। কাজী জাফরের আর ভোট নেই।

ভাঙ্গা পৌরসভার প্যানেল মেয়র ফয়েজ মিয়ার ছেলের হায়াত মোল্লা নিক্সন চৌধুরীর নির্বাচনী কাজে যুক্ত। হায়াত মোল্লার দাবি, আওয়ামী লীগের লোকজনও কাজী জাফরকে ভোট দেবে না। এখানে আওয়ামী লীগের সমস্যা নৌকার মাঝি নিয়ে। যদি নিক্সন চৌধুরীকে নৌকার মাঝি করা হত তাহলে নৌকা জয়ী হত। আওয়ামী লীগে আমাদের সমস্যা নেই, সমস্যা হচ্ছে ব্যক্তিতে।

ভাঙ্গা পৌরসভার বাড়াইডাঙা (২ নং ওয়ার্ড) বাসিন্দা তহমিনা বেগম বলেন, নিক্সন চৌধুরী জনগণের নেতা। চরের মানুষের সঙ্গে রাত কাটায় সে। চরে বিদ্যুৎ পৌছে দিয়েছে। এখনকার মহিলাদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়। এ আসনে অন্য কেউ জিততে পারবে না।

বর্ণমালা প্রেসের কর্ণধার বাহার খান নির্বাচনী পোস্টার নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ইউনিয়ন, উপজেলা সব নির্বাচনের ভালো খবর রাখেন তিনি। বাহার খানেরও অভিমত, নির্বাচনে খুব বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে না। নিক্সন চৌধুরী জিতবে, আওয়ামী এখানে আসন পাবে না। যদি নিক্সন নৌকা থেকে দাঁড়াত তাহলে আওয়ামী লীগ জিতত।

এ আসনের ভোটাররা জানান, এখানে ভয় বা আতঙ্কের পরিবেশ নেই। সবাই প্রচারণা চালাচ্ছে। তবে কাজী জাফর উল্লাহ ও নিক্সন চৌধুরীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর