রাজবাড়ী-২: বিনয়ে এগিয়ে সাবু, কৌশলে জিল্লুল

বিবিধ, নির্বাচন

শাহরিয়ার হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 21:04:48

রাজবাড়ী বালিয়াকান্দি থেকে: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজবাড়ী-২ আসন এখন জমজমাট। আসনটিতে তৃতীয় বারের মতো ক্ষমতা ধরে রাখার লড়াইয়ে আছেন আওয়ামী লীগের জিল্লুল হাকিম। হারিয়ে যাওয়া আসন ফিরে পেতে মরিয়া বিএনপি জেলা সহ-সভাপতি নাসিরুল হক সাবু।

শনিবার (১৫ ডিসেম্বর) রাজবাড়ী-২ (সংসদীয় আসন-২১০) সরেজমিনে ঘুরে এ আসন সর্ম্পকে নানা রকম তথ্য জানা গেছে।

রাজনীতিবিদ হিসেবে বিনয়ের বিবেচনায় সাধারণ জনগণ এগিয়ে রাখছেন নাসিরুল হক সাবুকে। তবে গত দু’বার ক্ষমতায় থাকা জিল্লুল হাকিমকে কৌশলী রাজনীতিবিদ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন এলাকাবাসী।

পাশাপাশি জিল্লুল হাকিমের নামে তুলছেন নেতা-কর্মী প্রীতির অভিযোগ। তারা বলছেন, সাধারণ মানুষের খোঁজ-খবর না নেওয়া এই এমপি- সবকাজে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রাধান্য দেন।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই দলেরই শক্ত অবস্থানের এই আসনটিতে। দুই বার আওয়ামী লীগের দখলে থাকার পেছনে কৌশলী রাজনীতিবিদ জিল্লুল হাকিমের প্রশংসা করছেন স্থানীয় ভোটাররা।

সংশ্লিষ্ট উপজেলার যুবলীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, নৌকা প্রতীক পেতে মাঠে থাকা আওয়ামী লীগের অর্থ পরিকল্পনা উপ-কমিটির সদস্য নূরে আলম সিদ্দিক ও কেন্দ্রীয় কৃষি ও সমবায় বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য মেহেদী হাসানসহ আরও বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় প্রার্থী থাকলেও কৌশলে খাটিয়ে আসনটি নিজের করে রেখেছেন জিল্লুল।

অন্যদিকে আসনটি পুনরুদ্ধারে জোর প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে আছেন বিএনপির প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসিরুল হক সাবু।

সাধারণ ভোটাররা ভদ্রতার বিবেচনায় সবসময় এগিয়ে রাখেন বিনয়ী এই নেতাকে।

২০০১ সালে বর্তমান এমপি জিল্লুলকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিক হন তিনি। ১৭ বছর আগে প্রথম আসন পাওয়া সাবুর জয়ের পেছনে তার ভদ্রতার গুণটি বেশি কাজ করে বলে মনে করেন সাধারণ ভোটাররা।

সরেজমিনে দেখা যায়, বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনের চায়ের দোকানে সকাল থেকেই নির্বাচন নিয়ে আলোচনা চলছে। সেখানে উপস্থিত ভোটাররা বলছেন, জিল্লুলের তুলনায় বিনয়ী সাবু।

মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ থেকে শুরু করে যেকোনো বিপদে সাধারণ মানুষের পাশে থাকেন। তবে এখানে রাজনীতির মাঠে জিল্লুলের কাছে বার বারই হেরে যাচ্ছেন বিএনপির এ নেতা।

জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও কালুখালী উপজেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা তৃণমূল পর্যায়ের কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়েছি। শুধু নির্বাচন বলে না। তার আগে থেকেই সবার সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক বিদ্যমান।

কেউ যদি অভিযোগ করে রাজনৈতিক কৌশলে আমরা হেরে গেছি, সেটা ভুল। ক্ষমতাসীন দলের চাপে, গ্রেফতার হয়রানিতে আমরা হেরে গেছি। জানি, সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন দেবে না, তবে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমরা বিপুল ভোটে বিজয়ী হবো।

অন্যদিকে জেলা আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা কমিটির সদস্য নূরে আলম সিদ্দিক বার্তা২৪.কমকে বলেন, অবহেলিত বঞ্চিত মানুষের পাশে রয়েছি আমরা। আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি সাধারণ মানুষের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার। আমরা বিশ্বাস রাখি, এলাকার মানুষ আমাদের ওপর আস্থা রাখবেন।

মোট ৫ প্রার্থী নিয়ে চলতে থাকা এই আসনের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অবস্থানও কিছুটা পাকাপোক্ত। স্থানীয় লোকের মুখে জানা যায়, ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে এখানে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নির্বাচিত হলেও প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন জাতীয় পার্টি। তাই জাতীয় পার্টির প্রার্থী এবিএম নূরুল ইসলামকে ছোট করে দেখা সুযোগ নেই।

উল্লেখ্য ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ আসনটি পায়। জিল্লুল হাকিমই ক্ষমতায় আছে গত ১০ বছর ধরে। মাঝখানে ২০০১ সালে নির্বাচিত হয়েছিলেন নাসিরুল হক সাবু।

৪ লাখ ৬২ হাজার ১৬৮ ভোটারেরর এ আসনে। বড় একটা অংশ ২ লাখ ২৭ হাজার ৭৭৩ জন নারী ভোটার। তাই নারী ভোটারকে প্রাধান্য দিয়েই নির্বাচনী প্রচারণা করছেন প্রার্থীরা।

নির্বাচনী এলাকায় চলছে তুমুল প্রচার-প্রচারণ। প্রার্থীরা নিজের ও দলের অবস্থান তুলে ধরে ভোটার সমর্থন আদায়ে চেষ্টা করছেন। চেষ্টায় কে সফল হন তা জনাতে অপেক্ষা করতে হবে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

এ সম্পর্কিত আরও খবর