চুপসে গেছে ঢাকার নির্বাচনী প্রচারণা?

বিবিধ, নির্বাচন

মনি আচার্য্য, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-10 14:37:09

জাতীয় সংসদ নির্বাচন মানেই প্রার্থীদের থেকে শুরু করে ভোটারদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার এক আমেজ। যা কিনা পাঁচ বছর পরপরই দেখা যায়। নির্বাচনকে সামনে রেখে বাড়ি বাড়ি পাড়া মহল্লায় চলবে নির্বাচনী প্রচারণা। ভোটারদের আকৃষ্ট করতে প্রার্থীদের থাকবে নানাবিধ কৌশল ও প্রতিশ্রুতি। তবে এসব প্রচারণা ও ভোটযুদ্ধে ভোটার এবং প্রার্থীর সংশ্লিষ্টতা থাকে শান্তিপূর্ণ ও সহনশীল পর্যায়ে।

আর এরই ধারাবাহিকতায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষেও সারা দেশে চলছে নির্বাচনী আমেজ। প্রার্থীরা নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করার জন্য ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছেন। প্রার্থীদের ভিন্ন ভিন্ন প্রচারণায় ভোটারও আনন্দ পাচ্ছেন। ভোট দিতে উৎসাহবোধ করছেন। কেননা বাংলাদেশে ভোট মানেই ভোট উৎসবের সঙ্গে সঙ্গে দেশের বড় বড় নেতা ও সাধারণ জনগণের এক মিলনমেলা।

সারাদেশে নির্বাচনের আমেজের উত্তাপ ছড়িয়ে পরলেও রাজধানী ঢাকাতে সেই উত্তাপে হিমেল হাওয়া বইছে। নির্বাচনী আমেজের প্রভাব ঢাকাতে খুব একটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। আগের নির্বাচনগুলোতে ঢাকাতে নির্বাচনের এমন ঠাণ্ডা আবহ বিরাজ করতে দেখেনি ঢাকাবাসী। ঢাকার নির্বাচন মানেই ছিল ভোটের উত্তাপ ও উৎসবের আমেজে ভরপুর। কিন্তু এবার ঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি আসন ছাড়া তেমন একটা নির্বাচনী আমেজ ও উত্তাপ নেই। তার সঙ্গে নেই প্রার্থীদের প্রচারণাও।

এ বিষয়ে ঢাকা-২, ঢাকা-৩ ও ঢাকা-১৪ আসনের ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখানকার বয়োজ্যেষ্ঠ ভোটাররা তাদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, আগের জাতীয় নির্বাচনগুলোতে প্রার্থীরা নানা উপায়ে ও নানা অভিনব কায়দায় ভোটের প্রচারণায় চালাত। কিন্তু এবারের নির্বাচনে সরকারী দলের প্রার্থীদের কয়েকটি পোস্টার ছাড়া নেই তেমন কোনও প্রচারণা।

তারা আরও জানান, মাঝে মধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও স্বতন্ত্র কয়েকজন প্রার্থীর পোস্টার দেখা গেলেও প্রচারণার মাঠে নেই তারা। আর সব থেকে বড় বিষয়, কাগজে কলমে বিএনপি নির্বাচনে থাকলেও ভোটের মাঠে বিএনপি নেই বললেই চলে। কিন্তু কী কারণে তারা মাঠে নামছে না সে বিষয়ে ভোটারদের কাছে স্পষ্ট ধারণা নেই।

আবার ঢাকার ২০ টি আসনের অধিকাংশ আসনের ভোটাররা মনে করছেন, বিভিন্ন কৌশলে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী মাঠে এগিয়ে। তাই সরকার দল প্রচারণার থেকে বেশি নির্বাচনী রাজনীতির ভেতরের কৌশল নিয়েই ব্যস্ত। তাছাড়া বাকি দলের প্রার্থীরা অদৃশ্য ও অজানা এক কারণে প্রচারণায় নামতে সাহস পাচ্ছেন না। এখন তাদের কি সরকারি দলের লোকজন মাঠে নামতে দিচ্ছে না সেটাও পরিষ্কারভাবে বলা সম্ভব হচ্ছে না।

এ বিষয়ে ঢাকা-২ আসনের ৫৫ নাম্বার ওয়ার্ডের ভোটার মো.সলিম আলী বার্তা২৪ কে বলেন, আগে দেখেছি নির্বাচনের সময় প্রার্থীরা কত গান বানিয়ে পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে ভোটারদের আলিঙ্গন করত। প্রচারণা চালাত। কিন্তু এবারের নির্বাচনে মাঝে মধ্যে দুয়েকজন লোক এসে পোস্টার আর লিফলেট দিয়ে চলে যায়। কোনও দলের প্রার্থীদের দেখে মনে হচ্ছে না যে তাদের মধ্যে কোনও ধরনের নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে। আর প্রার্থীদের মধ্যে আমেজ না থাকলেতো ভোটারদের মধ্যেও থাকবে না।

ঢাকা-১২ আসনের ভোটার ইনসুর আলী বার্তা২৪ কে বলেন, ঢাকা-১২ আসনের নির্বাচনী প্রচারণা একজন প্রার্থীর হাতেই মুষ্টিমেয়। তাই অন্য প্রার্থীরা প্রচারণায় আসতে পারছেন না। ফলে ঢাকা-১২ আসনে এ কথায় বলা চলে প্রচারণার কোনও আমেজ নেই। আর এ অবস্থা ঢাকার অধিকাংশ আসনে চলছে বলেই শুনেছি।

তবে এ মতের সঙ্গে ভিন্ন মত পোষণ করছেন আরেক দল ভোটাররা। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিথাই ও শীতের প্রভাব পরেছে রাজধানীর নির্বাচনী প্রচারণায়। বৃষ্টির কারণে প্রার্থী প্রচারণা চালাতে পারেননি গত কয়েকদিন। তাছাড়া বৃষ্টির পানিতে ভিজে সব পোস্টার ছিঁড়ে মাটিতে পরে যাওয়া মনে হচ্ছে যেন নির্বাচনী আমেজ ঢাকায় নেই।

আবার আরও অনেকে মনে করছেন, এবারের নির্বাচনী প্রচারণা খোলা মাঠে সভা কিংবা দেওয়ালে পোস্টার লাগিয়ে হচ্ছে না। নির্বাচনের মূল প্রচারণা হচ্ছে সাইবার ওয়ার্ল্ডে। ফলে এই প্রচারণা দৃশ্যমান কম হলেও প্রতি ভোটারের কাছে ঠিকই প্রার্থীদের নির্বাচনী বার্তা পোঁছে যাচ্ছে।

আর ভোটারদের এমন তথ্যের সত্যতাও পাওয়া গেছে ফেসবুক ও ইউটিউবেও। প্রার্থীরা নানা রকমের মিউজিক ভিডিও, ডকুমেন্টারি তৈরি করে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। ফলে পোস্টার ব্যানার মিটিং মিছিল থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনী প্রচারণা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর