মাশরাফির বাবার বিশ্বাস-ছেলে রাজনীতিতেও জয়ী হবে

বিবিধ, নির্বাচন

এম. এম. কায়সার, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2024-01-12 20:25:24

নড়াইল থেকে: নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার আনুষ্ঠানিকতা শুরুর পর থেকে মাশরাফি বিন মর্তুজার চেয়ে তার বাবা গোলাম মর্তুজাই একটু বেশি ব্যস্ত। নড়াইল-২ আসনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে ছেলের নির্বাচনী কর্মকাণ্ডের দেখভাল তিনিই করছেন। বিশ্রাম নেয়ার সুযোগই পাচ্ছেন না। ব্যস্ততা, পরিশ্রম সব কষ্ট ভুলে যাচ্ছেন গোলাম মর্তুজা যখন দেখেন তার ক্রিকেটার ছেলেকে মানুষ এত ভালবাসে। নড়াইলের মহিষখোলায় নিজের বাসভবনে বার্তা২৪ এর সঙ্গে মাশরাফির নির্বাচন নিয়ে বললেন অনেক কথা।

গ্রাম পর্যায়ে নির্বাচন করার অভিজ্ঞতা গোলাম মর্তুজার আছে। এবার ক্ষেত্রটা অনেক বড়; জাতীয় নির্বাচন। প্রার্থী আবার ছেলে! নতুন সেই অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে মাশরাফির বাবা বলছিলেন-‘ জাতীয় নির্বাচনের পরিসর-ব্যাপ্তি অনেক বড়। অনেক নিবিঢ়ভাবে কাজ করতে হচ্ছে। প্রচুর সময় দিতে হচ্ছে। শারীরিক ধকল যাচ্ছে। তবে সেই পরিশ্রমের কথা আর মনে থাকে না, যখন দেখি মাঠে-ঘাটে, গ্রামে মাশরাফির জন্য এত ভালবাসা ছড়িয়ে আছে। এত মানুষ আমার ছেলেকে ভালবাসে! যার কাছেই যাচ্ছি সবাই মাশরাফিকে স্বতফুর্তভাবে ভোট দেয়ার প্রতিশ্রæতি দিচ্ছে। মানুষের এই ভালবাসায় মাশরাফির বাবা হিসেবে আমি আনন্দিত, আপ্লুত।’

 

ক্রিকেট তো অনেকেই খেলে। কিন্তু সবাই মাশরাফির মতো এমন উদাত্ত, একহারা ভালবাসা পায় কই? মাশরাফির মধ্যে ভালবাসার কি অমন অমোঘ আকর্ষণ? আরো অনেকের মতো এই প্রশ্নটা মাঝে মাঝে গোলাম মর্তুজার মনেও উঁকি দেয়-‘সত্যি বলতে কি আমি নিজেকে মাঝে মাঝে এটা ভাবি। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে যখন গিয়ে যখন দেখি এখানে মাশরাফির জন্য ভালবাসার ছড়াছড়ি। এমনও মানুষ আছে যারা তাকে কখনো দেখেনি, শুধু হয়তো খেলার কারণে নামটা শুনেছে, সেই মানুষেরাও মাশরাফির প্রতি ভালবাসার ডালা সাজিয়ে বসে আছে। ক্রিকেট দিয়েই তার পরিচিতি। তারপর নিজের ও দেশের খেলা দিয়ে সে মানুষের কাছে ভালবাসার মানুষ হিসেবে কাছে এসেছে। তার প্রতি মানুষের এই যে শর্তহীন ভালবাসা, এটা দেখে আমিও মাঝে মাঝে বিস্মিত হয়ে ভাবি মানুষের চেয়ে বড় সত্য আসলে আর কিছু নাই!

নির্বাচন মানেই কিন্তু ক্রিকেটের মতো শুধু হাততালি নয়। নির্বাচন মানেই সমস্যার অন্য নাম। আর পলিটিক্স, শব্দটা শুনলেই যে অনেকে আবার চোখ বড় করে তাকান। তবে নড়াইলের নির্বাচনে এখানেও মাশরাফি ব্যতিক্রম। দিনভর নড়াইল-২ আসনের কয়েকটি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় ঘুরে কোথাও কোন সমস্যা বা অ-সম্প্রীতির খোঁজ মেলেনি। সব বয়সের, সব পেশার মানুষ ‘মাশরাফি ভাইয়ের’ ভোটের জন্য কিছু একটা করতে আগ্রহী!

এই প্রসঙ্গে গোলাম মর্তুজা বললেন-‘নির্বাচনে তো দল-প্রতিপক্ষ থাকবেই। বিভিন্ন দলের প্রার্থী তো থাকেই। তারপর মাশরাফির আসনে এখন পর্যন্ত কোন ধরনের অপ্রীতিকর কিছু আমার চোখে ধরা পড়েনি। আমরা সবাই খুব শান্তিপূর্ণ এবং সম্প্রীতির মধ্যে দিয়েই নির্বাচকালীন সময়টা পার করছি। চারধারে বেশ উৎসব উৎসব একটা আমেজ। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তো বিশাল একটা দল। আর নড়াইলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একটা শক্ত অবস্থান আছে অনেক আগে থেকেই। জেলা আওয়ামী লীগ, জেলা ছাত্রলীগ, মহিলা জেলা আওয়ামী লীগ ও থানা শাখা সবাই বেশ স্বতঃস্ফূর্ত নির্বাচনে কাজ করে যাচ্ছেন।’ 

মাশরাফির রাজনীতি এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে গোলাম মর্তুজা জানালেন-‘সত্যি বলতে কি আমরা সবসময়ে চেয়েছি নির্বাচন থেকে দূরে থাকতে। আর আমার ছেলেও নির্বাচন থেকে দূরে থাকতেই চেয়েছিলো। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেই যখন মাশরাফির ব্যাপারে আগ্রহ পোষণ করছেন, তখন আমরা মাশরাফির নির্বাচনে আসার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি আমার ছেলেকে বলেছি, তুমি যেহেতু বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নিয়েছিলে, সফল হয়েছো, আমার বিশ্বাস তুমি এখানে রাজনীতিতেও সফল হবে।’

-রাজনীতি কেমন কঠিন হবে মাশরাফির জন্য?

গোলাম মর্তুজা জানালেন-‘এটা তো নিঃসন্দেহে চ্যালেঞ্জিং। খেলাধূলা এক মেরু। আর রাজনীতি সম্পূর্ণ আরেকটি ভিন্ন মেরু। খেলাধুলায় নিজস্ব পারফরমেন্সেই তেরি করতে হয়। কিন্তু রাজনীতি শুধু নিজস্ব পারফরমেন্সে হয় না। এখানে সামগ্রিক একটা বিষয় কাজ করে। সবাইকে নিয়েই সফল হতে হবে এখানে। সেই দৃস্টিকোন থেকে অবশ্যই রাজনীতি মাশরাফির জন্য চ্যালেঞ্জিং একটা ধাপ হবে।

তবে বাবা হিসেবে আমি বিশ্বাস করি, খেলার মাঠে মাশরাফির যেমন ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্ব গুন দেখা গেছে, এখানে এই রাজনীতির মাঠেও সেটা সে করে দেখাতে পারবে। যেহেতু তার কোন লোভ-লালসা নেই। সে কখনো নিয়মের বাইরে যাবে না। অন্যায় কোন কিছুর সঙ্গে সে যাবে না। সততা নিয়ে, মানুষের ভালবাসা নিয়ে, একজন গ্রহণযোগ্য মানুষ হিসেবেই রাজনীতিতে মাশরাফির আত্মপ্রকাশ ঘটবে।’ 

২৩ ডিসেম্বর সকাল থেকে নড়াইলে মাশরাফির প্রচারণা শুরু হবে। ২২ টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভার প্রতিটিতে যাবেন বলে আশা করছেন মাশরাফি। প্রচারণার জন্য সবমিলিয়ে তিনি মাত্র পাঁচদিন সময় পাবেন। এই অল্প সময়ের মধ্যেই এতো বিশাল জায়গা জুড়ে তাকে গনসংযোগ চালাতে হবে। তবে কোন জনসভার আয়োজন রাখা হয়নি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর