হুইপ নির্ভার, পররাষ্ট্র মন্ত্রীর আকাশে মেঘের ঘনঘটা

বিবিধ, নির্বাচন

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-24 00:19:57

দিনাজুপর থেকে: হুইপের আকাশ মেঘমুক্ত, পররাষ্ট্র মন্ত্রীর আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা। উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা দিনাজপুরের দুই হেভিওয়েট প্রার্থী সম্পর্কে এমন মতামত দিয়েছেন ভোটাররা।

দিনাজপুর-৩ (সদর) আসনে এবারও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম। এই আসনে বিএনপির কোনো প্রার্থী নেই। বাছাইয়ে বাতিল হয়ে গেছেন। যে কারণে ইকবালুর রহিমের ভোট এখন অনেকটা আনুষ্ঠানিকতা মনে করা হচ্ছে। কারণ তার বিপরীতে লড়ছেন সিপিবির প্রার্থী বদিউজ্জামান বাদল, ইসলামী আন্দোলনের খায়রুজ্জামান ও মুসলীম লীগের প্রার্থী সৈয়দ মাহমুদ উল করিম। তারা কেউই ভোটের মাঠে আলোচনায় আসতে পারেন নি।

যদিও সাবেক ছাত্রনেতা ইকবালুর রহিম ১০ বছরের উন্নয়নের মাধ্যমে একটি জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছেন। তথাপিও বিএনপির মনোনীত প্রার্থীকেও শক্তিশালী মনে করা হতো। যে কারণে শক্তিশালী প্রার্থী না থাকায় হুইপ এখন নির্ভার। যে কারণে না-কি প্রচারণাতেও কিছুটা ভাটার টানার রয়েছে।

দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম পদে থেকে মনোনয়ন দাখিল করেন। রিটার্নিং অফিসার তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন। পরে তিনি নির্বাচন কমিশনও বাতিল করে দেয়। প্রার্থিতা ফিরে পেতে রিট দায়ের করে জাহাঙ্গীর আলম। এদিকে মোফাজ্জল হোসেন দুলালকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেন বিএনপি।

মনোনয়পত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে জাহাঙ্গীর আলমের প্রার্থিতা বৈধ বলে রায় দেয় হাইকোর্ট। এই রায়ের পর মোফাজ্জল হোসেন দুলালকে বাদ দিয়ে জাহাঙ্গীর আলমকে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ায় আশরাফুল আলম নামে এক ব্যক্তির পিটিশন। ১৮ ডিসেম্বর পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমের প্রার্থিতা স্থগিতের আদেশ দেন। আর তাতেই কপাল খুলে যায় হুইপের।

হুইপের জন্য জয় যতটা সহজ মনে করে হচ্ছে ততটাই কঠিন হয়ে পড়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হোসেন মাহমুদ আলীর জন্য। সাবেক এই আমলা লড়ছেন দিনাজপুর-৪ (চিরিরবন্দর ও খানশামা) আসনে। নানামুখী সংকটের মধ্যে রয়েছেন তিনি। একদিকে যেমন উন্নয়নে সন্তুষ্ট নয় এলাকাবাসি। তেমনি পুরো সময়ে দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব তার জয়ের জন্য জটিল সমীকরণে ফেলে দিয়েছে।

আওয়ামী লীগ নেতারা মন্তব্য করেছেন, তিনি আমলা থেকে রাজনীতিবীদ হয়েছেন, কিন্তু রাজনীতি ধরতে পারেন নি। আমলাই রয়ে গেছেন। মানুষের সঙ্গে তার আচার আচরণ যথাযথ ছিল না। আবার কর্মীদের সঙ্গেও নেই তার সদভাব। যে কারণে তার নির্বাচনী ক্যাম্পেইনও চলছে ঢিমে তালে। অনেক কর্মী ক্ষোভ অভিমানে ঘরে থেকে বের হচ্ছে না।

অন্যদিকে বিএনপি এই আসনে শক্তিশালী প্রার্থী দিয়েছে। ২০০৮ সালে মহাজোটগতভাবে নৌকার জোয়ারে যাকে ৪০ হাজার ভোটে হারিয়েছিলেন। সেই আক্তারুজ্জামান মিয়া এবারও হয়েছেন প্রার্থী। আক্তারুজ্জামান ২০০১ সালে হেভিওয়েট প্রার্থী মিজানুর রহমান মানুকে পরাজিত করে সংসদে গিয়েছিলেন।

জেলার ৬টি আসনের মধ্যে মাত্র দু’টি আসনে মহাজোট গঠিত হয়েছে। আর ৪টি আসন রয়েছে উন্মুক্ত। সেগুলোতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী রয়ে গেছে। এতে মহাজোটের ভোট ভাগ হয়ে যাচ্ছে। আবার আওয়ামী লীগের নিজের মধ্যেও রয়েছে নানা রকম গ্রুপিং। কিন্তু ঐক্যফ্রন্টের ভোটে রয়েছে ঐক্যবন্ধ। 

ধারণা করা হচ্ছে জেলার ৬ আসনের মধ্যে ২, ৩ ও ৫ মোটামুটি আওয়ামী লীগের জয়ের পাল্লা ভারি। অপর দিকে ১, ৪ ও ৬ আসনে বের হয়ে আসা অনেক চ্যালেঞ্জের। দ্রুত সময়ের মধ্যে জাপার প্রার্থীদের বসিয়ে দেওয়া এবং ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে নেতাকর্মীদের মাঠে নামতে পারলে পরিস্থিতি বদলাতে পারে। না হলে এসব আসন আওয়ামী লীগ হাতছাড়া হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে বলেন, দিনাজপুরের মানুষ সব সময় আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে  ২০০১ সালে কারচুপি করে আওয়ামী লীগের বিজয় ছিনতাই করা হয়। বিগত ১০ বছরের উন্নয়ন এবং মানুষের পাশে থাকায় এবার ৬টি আসনেই বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগ জয়ী হবে। অন্য যারা ভোট চাইতে আসছে উন্নয়নে তাদের কোনো অবদান নেই। মানুষ তাদের ব্যালটে জবাব দেবে।

কয়েকদিন ধরে কনকনে ঠান্ডার কিছুটা কমে আসলেও জনগণের মধ্যে ভোট নিয়ে ততটা আগ্রহ নেই। ৩০ তারিখ  আর ১০দিনের মতোই মনে করছে অনেকে। ভোট কেমন হয় এটাই যেনো তাদের প্রধান আলোচনার বিষয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর