আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে একাদশ নির্বাচন: মূল আলোকপাত নিরাপত্তা ও নজরদারিতে

বিবিধ, নির্বাচন

ফাওজিয়া ফারহাত অনীকা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-23 05:31:05

দীর্ঘ দিনের প্রতীক্ষা ও উৎকণ্ঠার অবসান ঘটিয়ে শুরু হয়ে গেছে একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ছোট বোন শেখ রেহানা ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এর সঙ্গে ভোটদান সম্পন্ন করেছেন। ভোট গ্রহণের শুরু থেকেই ভোট কেন্দ্রে দেখা যাচ্ছে দীর্ঘ লাইন। ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে এখনও পর্যন্ত বেশ উৎসবমুখর পরিবেশেই ভোটগ্রহণ চলছে।

৩০ তারিখ রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ২৯৯টি আসনে চলবে এই ভোটগ্রহণ। বাংলাদেশের একাদশ নির্বাচনকে ঘিরে উত্তেজনা শুধু দেশের ভেতরেই নয়, ছড়িয়েছে বিশ্ব জুড়েও। যার প্রমাণ পাওয়া গেলো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো ঘুরে।

জনপ্রিয় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি নিউজ একাদশ নির্বাচনকে নিয়ে ‘বাংলাদেশের নির্বাচন: পোলকে ঘিরে রয়েছে কড়া নিরাপত্তা’ শীর্ষক একটি গবেষণামূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, পুরো দেশ জুড়ে প্রায় ৬০০,০০০ নিরাপত্তা কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে ভোট গ্রহণকে কেন্দ্র করে।

প্রতিবেদনটির একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাগে উঠে আসে একাদশ সংসদ নির্বাচনের গুরুত্ব। যেখানে বিবিসি বলছে, ‘১৬ কোটি জনগোষ্ঠীর বাংলাদেশ হলো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতি এবং এখানকার মানুষ জলবায়ু পরিবর্তন থেকে শুরু করে দারিদ্র্য ও দুর্নীতির মতো সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হয় প্রতিনিয়ত’।

নির্বাচনকে ঘিরে ১৭ বছর বয়সী এক কিশোর বিবিসি নিউজকে জানায়, ‘আমরা চাই দুর্নীতি দূর হোক এবং ড্রাইভাররা সঠিক ড্রাইভিং লাইসেন্স পাক যেন কাউকে অকালে মরতে না হয়’।

এদিকে প্রতিবেশী দেশ ভারতের প্রথম সারির সংবাদ মাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা ‘ভোট শুরু বাংলাদেশে, বুথে-রাস্তায় ৭ লক্ষ সেনা এবং নিরাপত্তারক্ষী’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে। যেখানে নির্বাচন ও ভোট গ্রহণকে কেন্দ্র করে জোরদার নিরাপত্তার বিষয়টি উঠে এসেছে পরিষ্কারভাবে। খবরে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময়ে- মেট্রোপলিটন এলাকায় প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে নিরাপত্তার দায়িত্বে মোতায়েন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৬ জন করে সদস্য। সশস্ত্র পুলিশ তিন জন, আনসার ১২ জন ও একজন করে গ্রাম পুলিশ। অন্য দিকে ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে বাড়তি দুই পুলিশ-সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মোট সদস্য থাকবেন মোট ১৮ জন। সব মিলিয়ে সারা বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকছে বিভিন্ন আইনশৃংখলা বাহিনীর প্রায় ৭ লাখ সদস্য। সারা দেশে যানবাহন চলাচলের উপর আরোপ করা হয়েছে বিধিনিষেধ। রবিবারে বাংলাদেশে সরকারি ছুটিও ঘোষণা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকার রাস্তায় সেনাবাহিনী টহল চলছে’।

শুধু আনন্দবাজার পত্রিকাই নয়, কলকাতা২৪ তেও উঠে এসেছে বাংলাদেশের একাদশ নির্বাচনকে ঘিরে জোরদার নিরাপত্তা ও নজরদারির বিষয়টি। তবে কলকাতা২৪ শুধু দেশের ভেতরের নিরাপত্তা নয়, সীমান্তে নিরাপত্তা ও টহলের বিষয়টিও তুলে ধরেছে। ‘পদ্মাপারের ভোট: নির্বাচন চলাকালীন সীমান্তে বাড়তি নিরাপত্তা বিএসএফের’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ‘ইতিমধ্যে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বিএসএফের তরফে হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে সীমান্তে। সিল করে দেওয়া হয়েছে ভারত-বাংলাদেশ সংলগ্ন সমস্ত বর্ডার। বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন ত্রিপুরা, মিজোরাম, মেঘালয়, অসম, পশ্চিমবঙ্গ স্থল সীমান্ত সিল করে দেওয়া হচ্ছে।

বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী এলাকায় কোস্টগার্ড অতি সতর্ক। নৌবাহিনীকেও সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক নদী পথগুলিতে চলছে বিশেষ নজরদারীর জন্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিএসএফের তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে, সীমান্ত এলাকায় বাড়তি সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সীমান্তে বাড়তি সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় আসা যে কোনও গাড়ি কিংবা মানুষের উপর তল্লাশি চালানোরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিএসএফের তরফ থেকে’।

তবে কাতার ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরা একাদশ নির্বাচনকে নিয়ে প্রকাশ করেছে ভিন্নমাত্রার প্রতিবেদন। ‘বাংলাদেশ নির্বাচন: সহিংসতার সম্ভবনার মাঝেও কোটি মানুষের ভোট’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে দেশের নির্বাচনকে ঘিরে যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি। যেখানে ভোট গ্রহণকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তার বিষয়টিও প্রাধ্যান্য পেয়েছে।

প্রতিবেদনের একটি অধ্যায়ে নির্বাচনের প্রতিপক্ষ দল ও তাদের অবস্থা ও অবস্থান নিয়ে কথা বলেছেন রাজনীতি বিশ্লেষক ও সাংবাদিক আফসান চৌধুরি। আল-জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘এর আগে কখনোই এতো দ্বন্দপূর্ণ নির্বাচন দেখিনি। এবারের নির্বাচনের উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। আমি এতোটা তীব্র অবস্থার নির্বাচন এর আগে দেখিনি। রাজনৈতিক দলগুলো একে অন্যকে প্রতিপক্ষ হিসেবে না দেখে শত্রু হিসেবে প্রতিপন্ন করছে’।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম রয়টার্স বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এর সংবাদে ভোট গ্রহণ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনে জয়ের আশাবাদের বিষয়টি তুলে ধরেছে। ‘ভোট গ্রহণ শুরু, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর তৃতীয়বারের মতো জয় লাভের প্রত্যাশা’ শীর্ষক সংবাদে বলা হয়েছে, প্রতিদ্বন্দ্বী দলের নেতা কারাবন্দী থাকার দরুন তৃতীয়বারের মতো নির্বাচনের জয়ের আশা করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সংবাদে বলা হয়, ‘প্রায় এক দশক পর দেশের পরিপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের অংশ হয়েছে কোটি কোটি তরুণ ভোটার। ২০১৪ সালের নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নির্বাচন প্রত্যাহার করেছিল নির্বাচন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ না হওয়ার অভিযোগ তুলে’।

এ সম্পর্কিত আরও খবর