‘ফিকশনের সংখ্যা কমিয়ে দিলে এমনিতেই কাজ ভালো হয়ে আসবে’

ছোটপর্দা, বিনোদন

বিনোদন ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 13:38:06


ভিন্নধর্মী গল্পের নাটক নির্মাণ করেন দর্শক নন্দিত নির্মাতা আশফাক নিপুন। তার নাটকে দেখা যায় সমাজে ঘটে চলা নানা অসঙ্গতির বাস্তব চিত্র। আজ এই নির্মাতার জন্মদিন। এমন দিনে বাংলা নাটকের গল্প ও ভবিষ্যৎ নিয়ে বার্তা২৪.কমে কথা বলেছেন। আশফাক নিপুনকে ফোনে ধরেছেন ইসমাইল উদ্দীন সাকিব।


বার্তা২৪.কম: আমাদের দেশে একই ধরণের প্রেম আর করুণ রসের কাজ বেশি হয় কেন?

আশফাক নিপুন: প্রেম রস আর করুণ রসে দোষের কিছু নেই। বাঙালীর জীবনে প্রেম থাকবেই। আর আমরা জাতি হিসেবে করুণ রসের ভক্ত। আমরা দুঃখেও কাঁদি আবার খুশিতেও কাঁদি। আমাদের এখানে বিভিন্ন ধরণের কাজই হচ্ছে। রোমান্টিক যেমন হচ্ছে, করুণ রসের কাজও হচ্ছে। কমেডি যেমন হচ্ছে, সংখ্যায় কম হলেও জীবনমুখী কাজও হচ্ছে।


বার্তা২৪.কম: ভিন্নধর্মী বা মৌলিক গল্পের অভাব বোধ তো নিশ্চয়ই করেন। এই অভাব কীভাবে কাটিয়ে উঠবো আমরা?

আশফাক নিপুন: প্রথম শর্ত প্রযোজকদের ভালো গল্প প্রমোট করতে হবে। এই ঈদে আমার যে দুটো কাজ সবচেয়ে আলোচিত ‘ভিকটিম’ ও ‘ইতি, মা’ এই দুটো কাজ বানানো সম্ভবই হতনা যদি না আমার প্রযোজক (লাইভ টেকনোলজিস) ভালো গল্পে বিনিয়োগ না করতেন। দ্বিতীয় শর্ত হলো পরিচালকের সততা। লক্ষ্য রাখতে হবে তার আগের কাজের চেয়ে এখনকার কাজটা যেন ভিন্ন হয়। দর্শক যখন আপনার কাজ দেখে, সে মোটামুটি এক ঘণ্টা সময় নিয়ে বসে। ঐ এক ঘণ্টার দায়িত্ব কিন্তু আপনার। সে পুরোপুরি আপনাকে বিশ্বাস করে এক ঘণ্টা সময় নিয়ে বসছে। সেই দর্শক যাতে মনে না করে আপনি তাকে ঠকিয়েছেন, তার পুরো সময়টা নষ্ট হয়েছে; এটা নির্মাতাদের মাথায় রাখতে হবে। এবার ঈদে ভালো কাজ হয়েছে কিছু তবে প্রতি ঈদের মত এবার খারাপ কাজের সংখ্যা তুলনামূলক কম, কারণ করোনার কারণে ৪০০/৫০০ নাটকের শুটিং করা যায়নি। যার ফলে ভালো কাজগুলো চোখে পড়ছে বেশি। আলোচনা হচ্ছে, মানুষ লিখছে, নিজের মতামত দিচ্ছে এবং বলা হচ্ছে গল্পের নাটকের দিন ফিরেছে। তাই আমাদের গড়পড়তা কাজের সংখ্যা কমাতে হবে। আর মানসম্মত কাজের সংখ্যা বাড়াতে হবে।

 আশফাক নিপুন ,ছবি: সংগৃহীত 

বার্তা২৪.কম: সব কাজ কেন মানসম্মত হয় না কেন?

আশফাক নিপুন: আমাদের একেকটা ঈদে ৩০০-৩৫০ ফিকশন তৈরি হয়। এখন আরও বেড়েছে। ইউটিউবেও আলাদাভাবে ফিকশন তৈরী হচ্ছে। সব মিলিয়ে ৪০০/৫০০ ফিকশন তৈরি হয়। এখন এই ৫০০ ফিকশনের গল্প কি আমাদের আছে? এতোগুলো ফিকশন বানানোর জন্য কি ডিরেক্টর, স্ক্রিপ্ট রাইটার, অভিনেতা, কলাকুশলী আছে? দায়টা আসলে সিস্টেমের। আপনি ৫০০ ফিকশন এক ঈদে চালাবেন কিন্তু আপনার হাতে লেখক, ডিরেক্টর, অভিনেতা নাই। যার ফলে এক এক জন ডিরেক্টর ১৫/১৬ টা করে ফিকশন বানায়। অভিনয় শিল্পীরা প্রতি ঈদে ৩০/৩৫টা কাজ করে। যার ফলে কাজগুলোর বেশিরভাগই মান সম্মত হয় না। যদি এক ঈদে ৫০০ এর পরিবর্তে সর্বোচ্চ ৫০টি কাজ হত তাহলে ৫০০ কাজ করার জন্য যেই বাজেট লাগে সেটা যদি ৫০ টা নাটকে দিলে বাজেট এমনিতেই বৃদ্ধি পাবে। যার ফলে অভিনেতা, ডিরেক্টর, রাইটার তাদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করবে। এবং এই ৫০টা নাটকের মধ্যে থাকার জন্যে আমিও আমার মাথাটা একটু বেশি খাটাবো। প্রথম ৫০টায় যার কাজ থাকবে না সে পরের বার চেষ্টা করবে আরও ভালো গল্প নিয়ে। তখনও হয়ত সে করুণ রসই বানাবে, রোমান্টিক বানাবে, কমেডি বানাবে; কিন্তু নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে। তাই ফিকশনের সংখ্যা কমিয়ে দিলে এমনিতেই কাজ ভালো হয়ে আসবে। ঈদের ছুটি ৩ দিন কিন্তু টিভিতে ঈদের প্রোগ্রাম চলে ৭ দিন ব্যাপী। মান তো পড়বেই!

 আশফাক নিপুন ,ছবি: সংগৃহীত 

বার্তা২৪.কম: ফ্রি কন্টেন্ট থেকে বিশ্ব এখন পেইড কন্টেন্টের দিকে যাচ্ছে। আমারা সেই পথে হাঁটছি কচ্ছপের গতিতে। আমাদের দর্শক ফ্রি দেখতে দেখতে টাকা দিয়ে ভাল কাজ দেখবে কেন?

আশফাক নিপুন: ফ্রি দেখাতে অবশ্যই ক্ষতি হচ্ছে। আমি ইউটিউবে ফ্রি কন্টেন্টের বিপক্ষে সবসময়। কোনো কাজ পৃথিবীতে ফ্রি দেখানো উচিৎ না, যদি না আপনি চ্যারিটির জন্য কাজটি করছেন। আপনি দোকানে ডিম কিনতে গেলেও কেউ আপনাকে ফ্রীতে ডিম দিবে না কিন্তু কন্টেন্টের বেলায় আমরা ফ্রী কন্টেন্ট দেখতে চাই। আপনি এমনভাবে দর্শকদের অভ্যস্ত করছেন ফ্রি দেখার, যার ফলে টেলিভিশনেও তাদের মুনাফা আসছে না। মাত্রাতিরিক্ত বিজ্ঞাপন বিরতির অজুহাতে দর্শক টেলিভিশন দেখে না। টেলিভিশন চ্যানেল তখন নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল খুলে ফেলে এবং এটার উপর পুরোপুরি নির্ভর করা শুরু করে। আপনি এভাবে ইন্ডাস্ট্রি চালাতে পারেন না। আমাদের এখানে ওটিটি প্লাটফর্ম আশানুরূপ ভাবে অপারেটর করতে পারেনি শুরুর দিকে। ফলে সমস্যাটা গভীর হয়েছে। আমার কথা যদি বলি, ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে আমার কোনো কাজই ইউটিউবে আসেনি। ওটিটিতে গেছে। এখন আমাদের ওটিটিদেরও দায়িত্ব অধিকাংশ মানুষকে কাছে পৌছানো। আমরা ইউটিউবে ফ্রি ও মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউয়ের প্রভাবে টাকা দিয়ে নাটক কেউ আর দেখতে চাই না। আর যদি টাকা দিয়ে সাবস্ক্রাইব করে দেখিও, সেখানেও ঝামেলা। আপনি বায়স্কোপ দেখতে গেলে গ্রামীণফোনের সিম ছাড়া দেখতে পারবেন না। রবি টিভি প্লাস দেখতে গেলে রবি সিম লাগবে। বায়স্কোপ, রবি টিভি প্লাস আবার আপনি দেশের বাইরে দেখতে পারবেন না। এরা নেটফ্লিক্স এর মতো ১৭০টা দেশে এখনো প্লাটফর্ম করতে পারেনি। সামনে হয়ত পারবে তবে এখনো পারেনি। যার ফলে আমাদের কাজ দেখা থেকে একটা বিরাট সংখ্যক দর্শক ব্যাহত হচ্ছে। অধিকাংশ নির্মাতা, কলাকুশলীরাও আগ্রহ হারাচ্ছে এই কারণেই। আমি যখন একটা কাজ করি তখন আমি চাই সর্বোচ্চ সংখ্যক দর্শকদের কাছে পৌঁছাক। আবার এটাও চাই ফ্রিতে যেন কেউ না দেখে। ফ্রিতে দেখলে কারও লাভ হয় না দিন শেষে। শুধু একটা ভার্চুয়াল ভিউ দাঁড়ায় মিলিয়ন ভিউ যার বিপরীতে আয়ও কম। লাভটা উঠে আসেনা। অন্যদিকে যখন আমি ওটিটির জন্য বানাচ্ছি তখন দর্শকরা হয়ত জানতেই পারছে না কাজটার কথা। সমস্যাটা দ্বিমুখী। ফ্রির প্রভাবে ওটিটিতে ফেরানো একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ। চ্যালেঞ্জটা নিতে হবে যারা অপারেটর করে তাদের। না হলে নেটফ্লিক্স বছরে ২০০ কোটি টাকার ব্যবসা করে চলে যাবে, আর আমরা পিছিয়ে থাকবো।

 আশফাক নিপুন ,ছবি: সংগৃহীত 

বার্তা২৪.কম: সিনেমার দাবি উঠছে, সিনেমা কবে আসছে?

আশফাক নিপুন: এ বছর মুভির কোনো শুটিং হবে বলে মনে হয় না। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছরে ইনশাআল্লাহ্‌। আবার নতুন করে পরিকল্পনা করতে হবে। কারণ আগের পরিকল্পনা দিয়ে তো এখন শুটিং করা হবে না। এখন করোনার জন্য অনেক কিছু পাল্টে গেছে। প্রি প্রোডাকশন থেকে শুরু করে কোথায় কোথায় শুটিং করতে পারবো সেসব নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। দেখা যাক।

এ সম্পর্কিত আরও খবর