জন্মনাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন।
মাত্র চার বছরের ক্যারিয়ার, করে ফেলেছেন ২৭টি চলচ্চিত্র।
এতগুলো চলচ্চিত্রে সালমানের নায়িকা ছিলেন মাত্র আটজন।
নায়িকাদের মধ্যে প্রায় সবাই-ই বিভিন্ন সময় কথা বলেছেন সালমান শাহ বিষয়ে।
সালমান শুধু একজন অভিনেতাই ছিলো না, সে ছিলো আমার শৈশব, কৈশোরের বন্ধু। একসাথে পথ চলা ছোটবেলা থেকেই। মাঝপথে বিরতির পর সোহানুর রহমান সোহান স্যারের ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবির মাধ্যমে আমাদের বন্ধুত্ব আবার নতুন করে শুরু হয়।
যদিও মাত্র চারটি ছবিতে আমি সালমানের সঙ্গে কাজ করেছি, কিন্তু আমার প্রকৃত বন্ধু ছিলো সে। হয়তো কোনো এক অজানা কারণে ওর সঙ্গে আমার আর বেশি ছবি করা হয়নি। তারপরও আমাদের বন্ধুত্ব এতটুকু কমেনি।
আজও আমি যখন 'কেয়ামত থেকে কেয়ামত', 'অন্তরে অন্তরে' ছবির কোনো গান টিভিতে দেখি, মনের অজান্তেই চোখের সামনে ভিড় করে সেই সময়ের স্মৃতি। আজ এতটা বছর পরও তাকে ভুলে যাওয়া সম্ভব হয়নি। হয়তো কখনও পারবো না তাকে ভুলে যেতে।
সালমান শাহ আমার খুব প্রিয় ছিলো। সে আমাকে পিচ্চি বলে ডাকতো। আমি তো তখন অনেক ছোট ছিলাম। সালমান বলতো- এই পিচ্চি এদিক আয়। আমার তো কোনো বোন নেই। এই পিচ্চি তুই আমার ছোট বোন।
আমি ও সালমান দুজনেই শুটিং করার ফাঁকে দুষ্টুমী করতাম। শুধু আমার সঙ্গেই নয়, সবার সঙ্গেই ও খুব বন্ধুভাবাপন্ন ছিলো। আর্টিস্ট-ডিরেক্টরদের সঙ্গে কীভাবে কাজ করতে হবে তা বুঝতো, তাদের সঙ্গে ভালোভাবে মিশতো। ও অনেক মজার মানুষ ছিলো। এমনও হতো, মজা করতে করতে কখন যে শুটিং শেষ হয়ে যেতো, টেরও পেতাম না।
একদিন আমার মন ভীষণ খারাপ ছিলো। গোমড়া মুখে সেটে বসে ছিলাম। সালমান জানতে চাইলো, কী হয়েছে? আমি যখন কৌশলে এড়িয়ে গেলাম, ও বুঝতে পারলো মন খারাপের কারণ বলতে চাচ্ছি না।
এরপর শুরু হলো ওর পাগলামি। আমাকে নানা ধরনের গল্প আর এমনভাবে অঙ্গভঙ্গি করেছে, যা দেখে না হেসে পারলাম না। এখনও মন খারাপ হলে সালমানের কথা মনে পড়ে- এই বুঝি সালমান এসে মনটা ভালো করে দেবে। কিন্তু এখন আর মন ভালো করতে কেউ আসে না।
সালমানের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা অন্যরকম ছিলো। সহকর্মী ছাড়াও আমাকে সে বড় ভাইয়ের স্ত্রী হিসেবে সম্মান করতো। 'ভাবি' সম্বোধনে মিষ্টি মধুর তার ডাক আজও কানে বাজে। একসঙ্গে কাজ করতে করতে বন্ধুত্ব হয়।
সারাক্ষণ ও দুষ্টুমিতে মেতে থাকতো। দেশের বাইরে গেলে আমার জন্য তার উপহার আনা চাই-ই চাই। নাঈমকে বেশ পছন্দ করতো। আমি উপহার পেলে নাঈমও পেতো। তার সঙ্গে অনেক শেয়ারিংও ছিলো। চলচ্চিত্র একটা পরিবার। পরিবারের সদস্যরা যেমন সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করেন, তেমনি আমরাও করতাম। কোনো কিছু খেলে ভাগাভাগি করে খেতাম- এসব এখন শুধুই স্মৃতি।
শিল্পী হিসেবেও সালমান ছিলো অসাধারণ। অতি অল্প সময়ে চলচ্চিত্রাঙ্গনকে অনেক কিছু দিয়েছে সে। সবার বিপদে-আপদেও এগিয়ে আসতো। চলচ্চিত্রে আমরা একটা পরিবর্তন এনেছিলাম। সালমান আরও অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছে। আমি চলচ্চিত্রাঙ্গন থেকে বিদায় নিলাম। সালমানও চলে গেলো। তৈরি হলো এক ধরনের শূন্যতা।