হুট করেই।
বিটিভি যখন দেখাচ্ছিলো এই সংবাদ, শোকের কালো মেঘ যেন পুরো বাংলাদেশে।
শুক্রবার, ১৯৯৬ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর।
সকাল সাতটায় সালমান শাহ’র বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী ছেলের সঙ্গে দেখা করতে ইস্কাটনের বাসায় যান।
বাসার নিচে থাকা দারোয়ান প্রথমে তাকে ঢুকতে দিচ্ছিলো না।
ঘটনাটি জানান সালমান শাহ’র মা নীলা চৌধুরী।
তার ভাষ্যমতে-
দারোয়ান বলেছে, স্যার এখনতো উপরে যেতে পারবেন না। কিছু প্রবলেম আছে। আগে ম্যাডামকে (সালমান শাহ'র স্ত্রীকে) জিজ্ঞেস করতে হবে। এক পর্যায়ে উনি (সালমান শাহ'র বাবা) জোর করে উপরে গেছেন। কলিং বেল দেবার পর দরজা খুললো সামিরা (সালমান শাহ'র স্ত্রী)।
উনি (সালমান শাহ'র বাবা) সামিরাকে বললেন ইমনের (সালমান শাহ'র ডাক নাম) সাথে কাজ আছে, ইনকাম ট্যাক্সের সই করাতে হবে। ওকে ডাকো। তখন সামিরা বললো, আব্বা ওতো ঘুমে। তখন উনি বললেন, ঠিক আছে আমি বেডরুমে গিয়ে সই করিয়ে আনি। কিন্তু যেতে দেয় নাই। আমার হাজব্যান্ড প্রায় ঘণ্টা দেড়েক বসে ছিলো ওখানে।
দেখা হলো না তখন আর ছেলের সঙ্গে বাবার।
একটা ফোন আসে বেলা এগারোটার দিকে।
সেই ফোনে সালমানের মা’কে বলা হয়, সালমানকে দেখতে হলে দ্রুত যেতে হবে।
ফোনের পরপরই মূহুর্তে বের হয়ে পড়েন নীলা চৌধুরী। চলে যান ছেলের বাসায়।
গিয়ে দেখেন-
খাটের মধ্যে যেদিকে মাথা দেবার ক,থা সেদিকে পা। আর যেদিকে পা দেবার কথা, সেদিকে মাথা। পাশেই সামিরার (সালমান শাহ'র স্ত্রী) এক আত্মীয়ের একটি পার্লার ছিলো। সে পার্লারের কিছু মেয়ে ইমনের (সালমান শাহ) হাতে-পায়ে সর্ষের তেল দিচ্ছে। আমি তো ভাবছি ফিট হয়ে গেছে।
আমি দেখলাম, আমার ছেলের হাতে পায়ের নখগুলো নীল। তখন আমি আমার হাজব্যান্ডকে বলেছি, আমার ছেলে তো মরে যাচ্ছে!
তৎক্ষণাৎ সালমান শাহকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে নেয়া হয়।
কর্তব্যরত ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকা মেডিকেলের ডাক্তাররা এই মৃত্যুকে ঘোষণা করেন আত্মহত্যা হিসেবে।
পরিবার সেটা মানেনি।
তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- সালমান শাহকে হত্যা করা হয়েছে।
এমনকী, থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ সেটিকে অপমৃত্যুর মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে।
পুলিশের ভাষ্য ছিলো- অপমৃত্যুর মামলা তদন্তের সময় যদি বেরিয়ে আসে যে এটি হত্যাকাণ্ড, তাহলে সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে হত্যা মামলায় মোড় নেবে।
তখনকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ নায়ক সালমান শাহ্।
চলচ্চিত্রভক্তদের মুখে মুখে তিনি।
তার এমন আকস্মিক মৃত্যু মেনে নিতে পারেনি কেউই।
স্তম্ভিত হয়ে যায় পুরো দেশ।
কয়েকজন তরুণীও আত্মহত্যা করেন এই শোকে।