মুকুটহীন সম্রাটের চলে যাওয়ার পঞ্চম বছর

সিনেমা, বিনোদন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | 2023-12-13 20:26:13

সেই হুঙ্কার, সেই কালজয়ী সংলাপ, সেই বজ্রকন্ঠ; আজও মনে করিয়ে দেয় কিংবদন্তী এক অভিনেতার কথা।

আনোয়ার হোসেন, যার জন্ম জামালপুর জেলার সারুলিয়া গ্রামে, ১৯৩১ সালের ৬ নভেম্বর।

চলচ্চিত্রাকাশে তিনি নবাব সিরাজউদ্দৌলা, বাংলার মুকুটহীন সম্রাট।

তার বাবা নজির হোসেন, মা সাঈদা খাতুন।

পরিবারের তৃতীয় সন্তান আনোয়ার হোসেন ১৯৫১ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন জামালপুর স্কুল থেকে।

তারপর ভর্তি হন ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে।

অভিনয়ে প্রথম পা ওই স্কুল জীবনেই, আসকার ইবনে সাইকের পদক্ষেপ নাটকে।

পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে আনোয়ার হোসেন ঢাকায় চলে আসেন ১৯৫৭ সালে।

বিয়ে করেন নাসিমা খানমকে।

মাত্র তিনশো টাকা পারিশ্রমিকে, ১৯৫৮ সালে প্রথমবারের মতো রূপালী পর্দায় কাজ করার সুযোগ মেলে তার, ‘তোমার আমার’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে।

প্রথম চলচ্চিত্রেই খলনায়ক আনোয়ার হোসেন।

সেই ‘বীরেন’ ‘সূর্যস্নান-কাচের দেয়াল-বন্ধন’ শেষে হাজির হোন ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ রূপে।

তখন ১৯৬৭।

এই এক চরিত্রই তাকে পাইয়ে দেয় জীবিত কিংবদন্তী খেতাব।

তারপর, ৫২ বছরের ক্যারিয়ারে একে একে অভিনয় করেন পাঁচশতাধিক চলচ্চিত্রে।

‘লাঠিয়াল’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুবাদে প্রথমবারের মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান এই শক্তিমান অভিনেতা।

পরে আরও দুবার তিনি একই সম্মানে ভূষিত হোন।

দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদক, বাচসাস পুরস্কার সহ অসংখ্য পুরস্কার বিজেতা এই অভিনেতা আজীবন সম্মাননা পুরস্কার পান ২০১০ সালে, জীবনের প্রায় শেষ প্রান্তে এসে।

একজন শিল্পীর সারাজীবনের কঠোর শ্রমের কোনো মর্যাদা বা সম্মান আজও আমরা দিতে শিখিনি।

সুদিনে তাদের পিঠ চাপড়ালেও, দুর্দিনে ঠিকই হাত ফিরিয়ে নেই।

আমাদের চোখের সামনেই বিনা চিকিৎসায়, অর্ধাহারে, করুণ পরিণতি নিয়ে তাদের বিদায় নিতে হয়।

আনোয়ার হোসেনের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিলো।

দীর্ঘদিন বিছানায়ই কাটিয়েছেন তিনি, অবহেলায়, অনাদরে।

তেমন কেউই ছিলো না তার পাশে, কেবল স্ত্রী ছাড়া।

দেশের বাইরে থাকায় চার ছেলের কারোর সঙ্গেই দেখা হতো না তার।

দেখা হতো একমাত্র মেয়ের সঙ্গে, তাও কেবল ছুটির দিনে।

অভিমান আর চোখের জলে ভেসে টিভি পর্দা এবং পত্রিকার পাতায় নজর রেখেই কাটতো তার সারাবেলা।

আজ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮।

বাংলা চলচ্চিত্রের এই মুকুটহীন সম্রাটের চলে যাওয়ার পঞ্চম বছর।

আর কখনোই তিনি ফিরবেন না সেই কালজয়ী সংলাপ নিয়ে, বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার মহান নবাব সিরাজের ভূমিকায়; এই এক অপূরণীয় অপূর্ণতা, আমাদের চলচ্চিত্রের জন্য।

এ সম্পর্কিত আরও খবর