পশ্চিমবঙ্গের ভোটে তারায় তারায় যুদ্ধ

, বিনোদন

মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-23 00:49:16

মোদি আর মমতার মতো রাজনৈতিক কাণ্ডারীদের অনুসরণ করে পশ্চিমবঙ্গের ভোটের মাঠে শুরু হয়েছে তারায় তারায় যুদ্ধ। চলমান ভোটে রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল এবং প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) একাধিক চলচ্চিত্র তারকাকে মনোনয়ন দিয়েছে। অতীতে এতোজন স্টার কখনোই নির্বাচনে অবতীর্ণ হননি পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে।

শুরুটা অবশ্য হয়েছিল উত্তর প্রদেশে ১৯৮৪ সালে অমিতাভ বচ্চনের হাত ধরে। বর্ষীয়ান নেতা বহুগুণাকে রেকর্ড সংখ্যক ভোটে হারিয়েছিলেন অমিতাভ। তিনি পেয়েছিলেন মোট প্রদত্ত ভোটের ৬৮.২১% (২,৯৭,৪৬১) আর বহুবার নির্বাচনে বিজয়ী বহুগুণা হেরেছিলেন ২৫.১৫% (১,০৯৬৬৬) ভোট পেয়ে।

ফিল্মি জগত থেকে রাজনীতিতে এসে অমিতাভের গড়া রেকর্ড ভাঙা সম্ভব না হলেও অনেক তারকাই রাজনীতিতে অংশগ্রহণের অনুপ্রেরণা লাভ করেছিলেন। রাজ বাব্বর, শত্রুঘ্ন সিনহা, গেবিন্দ এমন বহু নাম রূপালি পর্দা থেকে ভারতের রাজনীতির মাঠে যুক্ত হয়েছে। দক্ষিণ ভারতের ক্ষেত্রে তো রাজনীতিতে তারকাদের রমরমা।  সেখানে বহু রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসে ও যায় তারকাদের আকাশচুম্বী ইমেজের জোরে। 

ভারতের রাজনীতিতে তারকা ইস্যু সুনামি হয়ে ঢেউ তুলেছে পশ্চিমবঙ্গের চলমান বিধানসভা নির্বাচনে। ভোটের আগে আগে যোগ দিয়েই বহু তারকা পেয়েছেন নির্বাচনে লড়ার টিকেট। বলতে গেলে, ভোটে নামানোর জন্যেই তাদেরকে দলে আনা হয় তড়িঘড়ি করে।

মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল দলের টিকিটে জয়ী মিমি, নুসরাত জাহান, দেবরা দলটির কেন্দ্রীয় রাজনীতির সঙ্গে আগে থেকেই সম্পৃক্ত। নতুন করে রাজ্যের বাঁকুড়া থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার টিকিট পেয়েছেন নায়িকা সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। নায়ক সোহম চক্রবর্তী নির্বাচন করছেন চণ্ডীপুর থেকে। অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আসানসোল দক্ষিণে। পরিচালক রাজ চক্রবর্তী দাঁড়িয়েছেন ব্যারাকপুর থেকে। কীর্তনশিল্পী অদিতি মুন্সি নির্বাচন করছেন রাজারহাট-গোপালপুর আসনে। আলিপুরদুয়ারে প্রার্থী হয়েছেন টিভি অভিনেতা সৌরভ চক্রবর্তী। নায়িকা কৌশানী মুখোপাধ্যায়কে ঘাসফুলের প্রার্থী হিসাবে দেখা যাবে কৃষ্ণনগর উত্তরে। অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিক প্রার্থী হয়েছেন উত্তরপাড়ার আসন থেকে। তৃণমূলে আরো যোগ দিয়েছেন অভিনেত্রী জুন মালিয়া, মানালি দে ও সুদেষ্ণা রায়।

গেরুয়া শিবির নামে পরিচিত বিজেপির পদ্মফুল নিয়েও লড়তে প্রস্তুত টালিউডের অনেক তারকা। এরই মধ্যে যোগ দিয়েছেন অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ, হিরণ চট্টোপাধ্যায়, যশ দাশগুপ্ত, নায়িকা শ্রাবন্তী চ্যাটার্জি ও পায়েল সরকার। নির্বাচনী খেলায় একেবারে শেষে এসে চমক দেখিয়েছেন ‘ফাটাকেষ্ট’খ্যাত মিঠুন চক্রবর্তী। দীর্ঘদিন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ হয়ে দায়িত্ব পালন করলেও এবারের নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে দলবদল করে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন এ অভিনেতা।

বিশ্লেষকরা নির্বাচনে তারকা আধিপত্যের পেছনে দুটি কারণ খুঁজে পেয়েছেন। প্রথমত, শিল্পীরা তুলনামূলকভাবে রাজনীতির প্রতি অধিকতর আগ্রহী হচ্ছেন। দ্বিতীয়ত, দলগুলো উপদলীয় কোন্দল ও রাজনৈতিক দুর্বলতা আড়াল করে তারকাদের জৌলুশের ভরে নির্বাচনে বিজয়ী হতে চাচ্ছে।

কারণ যাই হোক, ভোটের মাঠে রূপালি পর্দার স্টাররা মাটি ও মানুষের সঙ্গে মিশে গেছেন। দিন-রাত অবিরাম কাজ করছেন। বিরামহীনভাবে জনসংযোগ করছেন। মানুষকে আপন করার যাবতীয় তৎপরতায় ব্যস্ত তারা।

তবে প্রচারের মাঠে সবচেয়ে বেশি আলোড়ন তুলেছেন টালিউডের জনপ্রিয় নায়িকা সায়নী ঘোষ। কলকাতার বহুদূরের আসানসোলে মনোনয়ন পেয়ে সবচেয়ে আগে মাঠে গিয়ে হাজির হন তিনি। তারপর তারকা ইমেজকে নিমেষেই আটপৌরে বাঙালি ইমেজে পরিণত করে মিশে গেছেন আমজনতার সঙ্গে। ঘরে ঘরে যাচ্ছেন। নারী ও শিশুদের সঙ্গে মিশছেন। আসানসোলে শক্তভাবে বসে জয় নিশ্চিত করার পণ করে লড়ছেন তিনি। দলের স্লোগানের পাশাপাশি উচ্চারণ করছেন রবীন্দ্রনাথকে উদ্ধৃতি, ‘চিত্ত যেথা ভয় শূণ্য, উচ্চ যেথা শির।'

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া তারকাদের জয়ের আশা অপেক্ষাকৃত বেশি হলেও অতীতে অনেক তারকা ভোটে জিতলেও রাজনীতিতে স্থায়ী হয়েছেন কম জনই। শুধু নির্বাচনের মৌসুমে ভোটের খেলায় অংশ না নিয়ে রাজনীতিতে লেগে থাকলে অনেক তারকাই রাজনৈতিক তারকায় পরিণত হতে পারবেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর