বলিউডের ‘লেডি সুপারস্টার’ বলা হয় শ্রীদেবীকে। অনবদ্য অভিনয়, সুন্দর মুখশ্রী, চাহনি, অভিব্যক্তি –সব দিয়েই এক সময় বলিউড মাতিয়েছেন এই নায়িকা। প্রেমিকা, স্ত্রী এমনকি বিশেষ কিছু চরিত্রে অভিনয় করেও মন কেড়েছেন দর্শকের।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দুবাইয়ের এক অভিজাত হোটেলের বাথটাবে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় শ্রীদেবীকে। এর পর থেকেই সংবাদপত্র, টিভি, ফেসবুক, টুইটার – সব জায়গাতেই এই অভিনেত্রীর মৃত্যু নিয়ে জন্ম দিয়েছে নানা প্রশ্ন, রহস্যও।
এই প্রথম শ্রীদেবীর মৃত্যু নিয়ে মুখ খুললেন স্বামী বনি কাপুর। তার বন্ধুর জবানিতে এসেছে, দুবাইয়ের হোটেলে সেই রাতে কী হয়েছিল।
দীর্ঘ ৩০ বছরের বন্ধু, বলিউডের বাণিজ্য বিশ্লেষক কমল নাহতার কাছে স্ত্রীর মৃত্যু নিয়ে মুখ খুলেছেন বনি কাপুর; কমল তা টুইটারে লিখেছেন, যা নিয়ে প্রতিবেদন ছাপিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।
কমলের ভাষ্য অনুযায়ী, মুম্বাই ফিরে এসে তার 'জান'কে চমকে দিতে ফের দুবাই গিয়েছিলেন বনি। দু’জন দু’জনকে জড়িয়ে ধরেছিলেন, আনন্দে চুম্বন করেছিলেন।
অপ্রত্যাশিতভাবে কীভাবে আবার বাথটাবে শ্রীদেবীর নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখতে পেলেন, সেই সমস্ত কথাই কমল নাহতাকে বলেছেন বনি।
কমল লিখেছেন, “বারবার শ্রীদেবীকে ডেকে সাড়া না পাওয়ায় বনি বাথরুমের দরজায় টোকা দেন। বাথরুমের দরজা ঠেলা দিতেই খুলে যায়, দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করা ছিল না। তখন রাত ৮টা।”
দুবাইয়ের জুমেইরাহ এমিরেটস টাওয়ার হোটেলের ২২০১ নম্বর ঘরে তাদের কথা হওয়ার প্রায় দু’ঘণ্টা পরের এই ঘটনা, জানিয়েছেন কমল।”
বনি কমলকে বলেছেন, “২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে শ্রীদেবীর সঙ্গে আমার কথা হয়। ও বলে, ‘পাপা (এই নামেই বনিকে ডাকতেন শ্রীদেবী) আমি তোমাকে মিস করছি’। আমিও বলেছিলাম আমি তোমাকে ভীষণ মিস করছি। তখনও আমি ওকে জানাইনি যে বিকালেই আমি দুবাই যাচ্ছি।”
“মেয়ে জাহ্নবীও আমার দুবাই যাওয়াকে সমর্থন করেছিল, কারণ সেও তার মায়ের বিষয়ে বেশিই চিন্তা করতো। কখনওই মা’কে একা ছাড়তে চাইতো না। ওর ধারণা, ওর মা একা থাকলে হয় পাসপোর্ট বা অন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু হারিয়ে ফেলবে।”
“বিদেশে এই প্রথম শ্রীদেবী ২২ এবং ২৩ তারিখ একা ছিল। এর আগে আমরা কখনোই ওকে একা ছাড়তাম না।”
“আমি আমার ‘জান’কে বলেছিলাম আগামী কয়েক ঘন্টা একটি মিটিংয়ে ব্যস্ত থাকব। মিটিং শেষ করেই তার কাছে ফিরে আসব। সেকারণেই শ্রীদেবী ভয় পায়নি।”
বনির কথা অনুযায়ী কমল আরও লিখেছেন, “২৪ তারিখ দুপুর সাড়ে তিনটার বিমানে বনি দুবাই যান, হোটেলে পৌঁছায় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ। হোটেলে পৌঁছানোর পর শ্রীদেবীকে জড়িয়ে ধরেন। তারপর বনি ডিনারের প্রস্তাব দেন শ্রীদেবীকে। এরপর গোসলের জন্য হোটেলের বাথরুমে ঢোকে শ্রীদেবী।”
বনির কথা মতো, তিনি সেইসময় বেডরুমে ক্রিকেট ম্যাচ দেখছিলেন। ২০ মিনিট পরেও শ্রীদেবী না বেরোলে তিনি জোরে জোরে ডাকতে থাকেন। তখন রাত্রি ৮টা ।
“এরপর বনি বাথরুমের দরজা ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে যায়। ‘জান’ ‘জান’ বলে ডাকতে ডাকতে বাথরুমের ভেতরে ঢোকে বনি। ভেতরে ঢুকে বনি দেখতে পায় বাথটাব পানিতে পূর্ণ হয়ে আছে। শ্রীদেবীর দেহ পানিতে ডুবে রয়েছে। তার মাথাও ডুবে ছিল। সঙ্গে সঙ্গে বনি শ্রীদেবীকে তোলেন কিন্তু তখন শ্রীদেবীর কোনো সাড়া ছিল না। তখন ভেঙে পড়েন বনি।”
কমল নাহতার ভাষ্যে, “শ্রীদেবী প্রথমে অজ্ঞান হয়ে পড়ে তারপর ডুবে যায়, নাকি ডুবে গিয়ে জ্ঞান হারায়, একথা কেউই জানে না। আমাদের ধারণা, শ্রীদেবী বাঁচার জন্য শেষ চেষ্টায় হাত-পা ছোঁড়ারও সুযোগ পায়নি। কারণ বাথটাবের আসেপাশে একবিন্দুও পানি পড়ে ছিল না।”
তাই “শ্রীদেবীর মৃত্যুতে কিছুটা রহস্য এখনও রয়ে গেল।”
শ্রীদেবী চলে গেলেন। বনির জীবনেও বিপর্যয় নেমে এসেছে। দুঃখে নিমজ্জিত বনি ও তার পরিবার ।
স্বামী বনিকে ডিনারের জন্য অপেক্ষায় রেখে, লক্ষ লক্ষ ভক্তকে রেখে আকস্মিকভাবেই শ্রীদেবী চলে গেলেন ।
রামশ্বেরমের সমুদ্রে বিলীন হয়ে গেলেন বলিউডের প্রথম ‘লেডি সুপারস্টার’।