দক্ষিণ ভারতের অন্ধ্র-তেলেঙ্গানা অঞ্চল জন্মস্থান হলেও সমগ্র ভারতের চলচ্চিত্রের রাজধানী বলিউডের 'কিং ফিল্ম মেকার' রামগোপাল ভার্মা। তেমনই একজন বলিউড মুঘল মণিরত্নম। দক্ষিণের এসব পরিচালক তাবৎ ভারতের ফিল্মি জগতের সেরা আইকন, যেমনভাবে অনেক দক্ষিণী নায়ক-নায়িকা শাসন করেন আরব সাগর তীরের বোম্বাই তথা মুম্বাইয়ের রূপালি পর্দার জগত।
বলিউডের ক্রাইম, ভায়োলেন্স, অ্যাকশন, সাসপেন্স চলচ্চিত্রের কথা এলেই সবচেয়ে সামনে থাকে রামগোপাল ভার্মার নাম। কোম্পানি, সত্ত্বা ইত্যাদি সুপার-ডুপার ছবির নির্মাতা রাম এবার তৈরি করছেন সমকামী নারীদের হিংসা, আক্রোশ আর মনস্তাপের সিনেমা 'ডেঞ্জারাস'। নায়িকা হিসেবে তুলে এনেছেন কলকাতার নয়নাকে।
একেবারেই নতুন বিষয়, আখ্যান আর পটভূমির কারণে ফিল্মিপাড়ায় এই গুজব চাউর হয়ে গেছে যে, 'মুম্বই গিয়ে কলকাতার নয়না গঙ্গোপাধ্যায় নাকি সমকামী হয়ে গিয়েছেন?' কারণ ছবির কাহিনিই এমন। যেখানে দেখা যাচ্ছে, পুরুষ থেকে শতহস্ত দূরে নায়িকার অবস্থান। ভালবেসেছেন তারই মতো এক মেয়েকে। পাশাপাশি জড়িয়ে গিয়েছেন অপরাধ দুনিয়ার সঙ্গেও। সাহস দেখাতে পারলেই যেখানে নিমেষে চলে আসে অজস্র টাকা।
বলিউড পণ্ডিতরা বলছেন, নয়নার এই বদল রামগোপাল ভার্মার নির্দেশেই! এমনকি, ছবিটি বোম্বাইয়া সিনেমার গ্রামার, নির্মাণশৈলী এবং ধারাকেই নাকি বদলে দেবে!
কথাটা যে সত্যি, তার প্রমাণ ছবিটি সম্পর্কে সবার আগ্রহের মধ্যেই প্রমাণিত হচ্ছে। সদ্যই মুক্তি পেয়েছে রাম পরিচালিত ছবি ‘ডেঞ্জারাস’-এর ট্রেলার আর তাতে হৈহৈ করে প্রশংসা করছে সবাই। ট্রেলারের একঝলক বলছে, যা রটেছে সেটাই ঘটেছে। সাক্ষাৎকারে নয়নাও জানিয়েন, আর জি (রামগোপাল) স্যারের হাত ধরে নিজেকে বদলে সেই ছবিতে তিনি সমকামী। ছবি জুড়ে তিনি এবং তার প্রেমিকা অপ্সরা রানি ‘ডেঞ্জারাস’ কাজকর্ম করেছেন 'ডেঞ্জারাস' নামের চলচ্চিত্রে।
রামগোপালের ছবি মানেই যেমন নতুন ভাবনা তেমনই যৌনতা আর অন্ধকার দুনিয়ার খুল্লামখুল্লা প্রদর্শন। মুক্তি পাওয়া ঝলক বা ট্রেলার বলছে, এই ছবিও তার ব্যতিক্রম নয়। বলা বাহুল্য, ভারতে সেদেশের আইনের ৩৭৭ ধারা অনুযায়ী সমকামিতা স্বীকৃত। কিন্তু এখনও এই আপত্তিকর ও বিপজ্জনক সম্পর্ক ধর্ম ও সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত নয়। তাই ছবির ঝলকের শুরুতেই পরিচালক ভারতের শীর্ষ আদালতের নির্দেশ আরও একবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন দর্শকদের। খোদ পরিচালক টুইটে জানিয়েছেন, 'ভারত তথা দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম সমকামী ছবি ‘ডেঞ্জারাস’। পুরুষের থেকে পাওয়া অকারণ আঘাত কতখানি সাংঘাতিক করে তুলতে পারে নারীকে? এই ছবি সেই গল্প বলবে। '
তবে কথাটা কতটুকু তথ্যনির্ভর ও সত্য সেটা কলকাতার টালিগঞ্জের সিনেমা সমালোচকরা ভালো বলতে পারবেন। কারণ, এমন বিষয় নিয়ে, বিশেষত যৌন রূপান্তর নিয়ে ঋতুপর্ণ ঘোষ আগেই কাজ করেছেন। ফলে ঋতু না রাম প্রথম ভারতীয় সমকামী ছবির নির্মাতা-চলচ্চিত্রকার, সেটা তর্ক সাপেক্ষ।
তবে, এটা ঠিক যে, রাম ও ঋতুর চলচ্চিত্রে সমযৌনতার সঙ্কট ও যন্ত্রণা যেভাবে উন্মোচিত হয়েছে, তাতে ভারতের মতো প্রাচ্যদেশে এ বিষয়ের পক্ষে আইনের যৌক্তিকতাও আরেকবার নতুনভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। খোদ আমেরিকা ও ইউরোপে যখন সমকাম ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনছে, তখন ভারতে ক্রমবর্ধিষ্ণু সমকামের বিপদকে আভাসিত করেছে সিনেমাগুলো। ফলে রামের ছবি অভিভাবক, পরিবার, সমাজ ও আইন প্রণেতাদের সমকামিতার ভারতীয় বিপদ ও বিভীষিকা সম্পর্কে নতুন করে ভাবাবে এবং এক্ষেত্রে আইনের কঠোর পদক্ষেপকে ত্বরান্বিত করবে।