বিশিষ্ট কবি, গীতিকার ফজল এ খোদা আর নেই। রোববার (৪ জুলাই) ভোর ৪টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন। ৮১ বছর বয়সী এই গীতিকার করোনায় আক্রান্ত ছিলেন।
জানা গেছে- তাকে রায়ের বাজার কবরস্থানে দাফন করা হবে।
বাংলাদেশ বেতারের সাবেক পরিচালক এই গুণী মানুষটির জন্ম ১৯৪১ সালের ৯ মার্চ, পাবনার বেড়া থানার বনগ্রামে। মুহাম্মদ খোদা বক্স এবং মোসাম্মাৎ জয়নবুন্নেছার প্রথম সন্তান তিনি। ১৯৬৩ সালে বেতারের তালিকাভুক্ত গীতিকার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। ১৯৬৪ সালে তালিকাভুক্ত হন টেলিভিশনে। শিশু কিশোর সংগঠন শাপলা শালুকের প্রতিষ্ঠাতা ফজল-এ-খোদা ‘মিতা ভাই’ নামেও পরিচিত।
তার লেখা বহু গান শ্রোতাপ্রিয় হয়েছে। এর মধ্যে-‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ মুক্তিযুদ্ধে সাত কোটি মানুষকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। ১৯৭১-এ অসহযোগ অন্দোলন চলাকালে তার লেখা গণসংগীত ‘সংগ্রাম, সংগ্রাম, সংগ্রাম চলবে, দিন রাত অবিরাম’ তৎকালীন টেলিভিশন প্রচার করে।
ফজল-এ-খোদার লেখা উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে আরও রয়েছে-‘যে দেশেতে শাপলা শালুক ঝিলের জলে ভাসে’, ‘ভালোবাসার মূল্য কত আমি কিছু জানি না’, ‘কলসি কাঁধে ঘাটে যায় কোন রূপসী’, বাসন্তী রং শাড়ি পরে কোন রমণী চলে যায়’, আমি প্রদীপের মতো রাত জেগে জেগে’, ‘প্রেমের এক নাম জীবন’, ‘ভাবনা আমার আহত পাখির মতো, পথের ধুলোয় লুটোবে’ প্রভৃতি।
মূলত ছড়া দিয়ে তার লেখালেখি শুরু। তার ছড়াগ্রন্থের সংখ্যা ১০টি আর কবিতা গ্রন্থ ৫টি। এছাড়াও গান, নাটক, প্রবন্ধ, শিশু সাহিত্য ইত্যাদি নিয়ে তার সর্বমোট বইয়ের সংখ্যা ৩৩টি।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপরিবারে নৃশংসভাবে নিহত হলে ফজল-এ-খোদা তার দুঃখ এবং ক্ষোভ গানের মাধ্যমে প্রকাশ করেন, যা সেই সময়ের কল্পনাতীত ঘটনা। বশীর আহমদের সুরে মোহাম্মদ আবদুল জাব্বারের গাওয়া সেই গানটি হলো-‘ভাবনা আমার আহত পাখির মতো/ পথের ধুলোয় লুটোবে/ সাত রঙে রাঙা স্বপ্ন-বিহংগ / সহসা পাখনা লুটোবে/ এমন তো কথা ছিলো না’। যা ১৯৭৬ সালে রেকর্ড ও বেতারে প্রচারিত হয়।
প্রায় ৫০ বছরের ক্যারিয়ারে ফজল-এ-খোদা অসংখ্য দেশাত্মবোধক, আধুনিক, লোক সংগীত ও ইসলামী গান লিখেছেন। তার লেখা ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ ২০০৬ সালে বিবিসির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাংলা গানের সেরা ২০টি গানের তালিকায় ১২তম (দ্বাদশ) স্থান পায়।