‘কারো মনে তুমি দিও না আঘাত, সে আঘাত লাগে কাবার ঘরে’ গানের গীতিকার ও রচয়িতা এবং একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি ও গীতিকার আজিজুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৭৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর গ্যাংগ্রিন রোগে আক্রান্ত হয়ে পিজি হাসপাতালে তিনদিন চিকিৎসা শেষে মারা যান তিনি।
এর আগে ১৯৭৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। সে সময় তাকে ভর্তি করা হয়েছিলো তৎকালীন ঢাকার পিজি হাসপাতালে।
১৯১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি কুষ্টিয়া জেলার গড়াই নদীর তীরে হাটশ হরিপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
একুশ পদকপ্রাপ্ত কবি আজিজুর রহমানের মৃত্যুর ৩৬ বছর পার হলেও সরকারিভাবে তার স্মৃতি সংরক্ষণ ও স্মৃতিচারণে নেওয়া হয়নি কোনো পদক্ষেপ। অবহেলিত অবস্থায় পরে আছে তার বাসতভিটা ও সমাহিত চত্বর। নিশ্চিহ্ন হতে বসেছে তার সমাধিস্থলসহ সকল স্মৃতিময় স্থান ও কর্মকাণ্ড।
কবি আজিজুর রহমানের বাবা বশির উদ্দিন প্রামানিক, মা সবুরুন নেছা। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ৩ ছেলে ও ৪ মেয়ের জনক। ১৯৩১ সালে ঝিনাইদহের ফুল হরিগ্রামের আজহার সিকদারের কন্যা ফজিলাতুন্নেসাকে বিয়ে করেন।
তিনি ঢাকা বেতারের চাকরিজীবী ছিলেন। ১৯৫৪ সালে প্রথমে অনিয়মিত এবং পরে নিয়মিতভাবে যোগ দেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সেখানে চাকরিতেই ছিলেন। এছাড়া তিনি সাংবাদিক ছিলেন। দৈনিক পয়গম পত্রিকায় ১৯৬৪ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত সাহিত্য বিভাগের সম্পাদক ছিলেন। ঢাকা থেকে প্রকাশিত কিশোর মাসিক ‘আলপনী’রও সম্পাদক ছিলেন।
১৯৩৪ সালে তার দাদা চাঁদ প্রামানিকের নামে হরিপুর গ্রামে গড়ে তোলেন ‘চাঁদ স্মৃতি পাঠাগার’। এটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ একটি পাঠাগার ছিলো। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ বইয়ের খোঁজে আসতেন এই পাঠাগারে। তার সাংগঠনিক ক্ষমতা ছিলো প্রবল। কবি আজিজুর রহমানই প্রথম তার জন্মস্থান কুষ্টিয়া জেলার ইতিহাস রচনায় উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
তিনি প্রায় ৩ হাজার গান লিখেছেন, যা আজও আমাদের দেশের মানুষের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ‘ভবের নাট্যশালায় মানুষ চেনা দায় রে’, ‘কারো মনে তুমি দিও না আঘাত, সে আঘাত লাগে কাবার ঘরে’, ‘আকাশের ঐ মিটি মিটি তারার সাথে কইবো কথা, নাই বা তুমি এলে’, ‘পৃথিবীর এই পান্থশালায়, হায় পথ ভোলা কবি’, ‘আমি রূপনগরের রাজকন্যা রূপের জাদু এনেছি’, ‘বুঝি না মন যে দোলে বাঁশিরও সুরে’, ‘দেখ ভেবে তুই মন, আপন চেয়ে পর ভালো’, ‘পলাশ ঢাকা কোকিল ডাকা আমারই দেশ ভাই রে’।
এছাড়াও ৩০০ উপরে কবিতা রচনা করেছেন। তার মধ্যে ‘নৈশনগরী’, ‘মহানগরী’, ‘সান্ধ্যশহর’, ‘ফেরিওয়ালা’, ‘ফুটপাত’, ‘তেরশপঞ্চাশ’, ‘সোয়ারীঘাটের সন্ধ্যা’, ‘বুড়িগঙ্গার তীরে’, ‘পহেলা আষাঢ়’, ‘ঢাকাই রজনী’, ‘মোয়াজ্জিন’, ‘পরানপিয়া’, উল্লেখযোগ্য। এ কবিতাগুলো এক সময় নবযুগ, নবশক্তি, আনন্দবাজার পত্রিকা, শনিবারের চিঠি, সওগাত, মোহাম্মাদী, আজাদ, বুলবুল পত্রিকায় নিয়মিত ছাপা হতো।