কিংবদন্তি রকস্টার আইয়ুব বাচ্চুর প্রয়াণের তৃতীয় বার্ষিকী আজ (১৮ অক্টোবর)। এমন দিনে নতুন খবর জানালেন, তাঁর স্ত্রী ফেরদৌস আক্তার চন্দনা জানালেন তাঁর স্মৃতি রক্ষায় মিউজিয়াম তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে তার পরিবার। সোমবার গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি একটি জাদুঘর করতে। আইয়ুব বাচ্চুও এটাই চাইতেন।”
আইয়ুব বাচ্চুর এই মিউজিয়ামে থাকবে আইয়ুব বাচ্চুর বিশ্বের নানা স্থান থেকে সংগ্রহ করা ৪০টি গিটারসহ তার ফেলে যাওয়া নানা স্মৃতি বিজড়িত ব্যবহার্য জিনিস। জীবিত অবস্থায় এই প্রতিবেদককে আইয়ুব বাচ্চু জানিয়েছিলেন তাঁর গিটারগুলো সংরক্ষণ নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা। “এই গিটারগুলো আমার খুবই প্রিয় গিটার। আমার কাছে এগুলো অমূল্য সম্পদ। প্রাণের চেয়ে বেশি প্রিয়। মানুষতো সবচেয়ে বেশি নিজেকেই ভালোবাসে। আমি গিটারগুলোকেভালোবাসি। এগুলো সমসাময়িক গিটার। বিখ্যাত সব ডিজাইনারের ডিজাইন করা গিটার এগুলি। এই দামি দামি গিটারগুলো সব নষ্ট হয়ে যাবে তা হতে পারে না।”
তবে, জাদুঘর স্থাপন করাটাকে খুব একটা সহজ মনে করছেন না চন্দনা। তিনি বলেন, “প্রচুর খরচ আছে। যেতে হবে অনেক জায়গায়। দেখি কতটা পেতে পারি! সরকারি বা ব্যক্তিগত উদ্যোগ হোক- অনেকেরই এখানে যুক্ত হওয়ার সুযোগ আছে।”
আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুর পর তার স্টুডিও ‘এবি কিচেন’ ধরে রাখার চেষ্টা করেছিলো তার পরিবার। কিন্তু ছয়মাসের বেশি তা সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে আক্ষেপ আছে চন্দনার। তিনি বলেন, “যে মানুষটা যেখানে বসে গান তৈরি করতেন, সেখানে হাল ধরার মতো কেউ নেই। তার সন্তানরা সেভাবে গান করে না। যেহেতু ভাড়া বাসায় এটা ছিল, তাই একপর্যায়ে আমাকে ছেড়ে দিতে হয়েছে। তার অনেক গিটার। সেগুলো বাসাতেই রেখেছি। আমি নিজেই নিয়মিত পরিষ্কার করি। সেগুলো নিয়ে কিছু একটা করার চেষ্টা করছি।”
গত বছর আইয়ুব বাচ্চুর দ্বিতীয় প্রয়াণ দিবসে প্রথমবারের মতো সরকারি উদ্যোগে তৈরি করা হয় আইয়ুব বাচ্চুর ওয়েবসাইট। এতে সংরক্ষিত হয় তাঁর ২৭২টি গান, তাঁর জীবনী ও নানা গানের মিউজিক ভিডিও।
১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আইয়ুব বাচ্চু। ১৯৭৮ সালে ফিলিংস ব্যান্ডের মাধ্যমে সংগীত জগতে তার পথচলা শুরু হয়। ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সোলস ব্যান্ডে লিড গিটারিস্ট হিসেবে যুক্ত ছিলেন তিনি। ১৯৯১ সালে এলআরবি ব্যান্ড গঠন করেন আইয়ুব বাচ্চু। এর প্রথম অ্যালবাম ‘এলআরবি’ বাজারে আসে ১৯৯২ সালে। এলআরবির অন্য অ্যালবামগুলো হলো ‘সুখ’ (১৯৯৩), ‘তবুও’ (১৯৯৪), ‘ঘুমন্ত শহরে’ (১৯৯৫), ‘ফেরারি মন’ (১৯৯৬), ‘আমাদের’ (১৯৯৮), ‘বিস্ময়’ (১৯৯৮), ‘মন চাইলে মন পাবে’ (২০০১), ‘অচেনা জীবন’ (২০০৩), ‘মনে আছে নাকি নাই’ (২০০৫), ‘স্পর্শ’ (২০০৮), ‘যুদ্ধ’ (২০১২), ‘রাখে আল্লাহ মারে কে’ (২০১৬)।
১৯৮৬ সালে প্রকাশিত ‘রক্তগোলাপ’ তার প্রথম প্রকাশিত একক অ্যালবাম। তার সাফল্যের শুরুটা হয় দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ‘ময়না’র (১৯৮৮) মাধ্যমে। ১৯৯৫ সালে বাজারে আসে তার তৃতীয় একক অ্যালবাম ‘কষ্ট’। এর প্রায় সব গানই জনপ্রিয়তা পায়। বিশেষ করে ‘কষ্ট কাকে বলে’, ‘কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘অবাক হৃদয়’, ‘আমিও মানুষ’ গানগুলো। তার অন্য একক অ্যালবামগুলো হলো, ‘সময়’ (১৯৯৮), ‘একা’ (১৯৯৯), ‘প্রেম তুমি কি’ (২০০২), ‘দুটি মন’ (২০০২), ‘কাফেলা’ (২০০২), ‘রিমঝিম বৃষ্টি’ (২০০৮), ‘বলিনি কখনো’ (২০০৯), ‘জীবনের গল্প’ (২০১৫)।
২০১৮ সালে ১৮ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন জনপ্রিয় এ শিল্পী।