সুরের তাপস, গানের তাপস...

সুরতাল, বিনোদন

রুদ্র হক, বার্তা ২৪.কম | 2023-12-15 14:32:24

সুরেই যেন জন্ম তার। সুরেই পথচলা। ৬ বছর বয়স থেকে গান শেখা শুরু। ৮ বছরের মাথায় প্রথম গানের অ্যালবাম। তারপর আর থেমে নেই। ৩২ বছর ধরে গানের এই তপস্বী আপন সুরে পথ চলেই বাংলাগানকে বিশ্বমানে উপস্থাপন করেছেন, আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছেন- তিনি সংগীত পরিচালক কৌশিক হোসেন তাপস। দেশি বিদেশি শিল্পীদের সমন্বয়ে তার অনবদ্য সৃষ্টি ‘উইন্ড অব চেঞ্জ’ আজ বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। দেশের সংগীতাঙ্গনকে এক ছাতার নিচে এনেছেন দেশের প্রথম এইচ ডি মিউজিক চ্যানেল গানবাংলার মাধ্যমে। প্রতিনিয়ত দেশের তৈরি গানগুলো মিউজিক ভিডিও আকারে শ্রোতাদের সামনে উপস্থাপন করছে চ্যানেলটি।

সংগীতশিল্পীদের আড্ডা, নতুন গান তৈরি ও সৃষ্টিশীলতা চর্চার ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে গানবাংলা প্রাঙ্গন। প্রতিদিনই গানবাংলার স্টুডিওতে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন গান। শিল্পীরা নীরিক্ষা করছেন সুর ও কথার। সবার জন্য উন্মুক্ত এ সংগীতাঙ্গন সৃষ্টির পেছনের কারিগর কৌশিক হোসেন তাপস। তরুণ সংগীতশিল্পীদের কাছে তিনি যেমন এক জনপ্রিয় চরিত্র, তেমনি অগ্রজ শিল্পীদের ক্ষেত্রেও তিনি যেন হয়ে উঠছেন আস্থার প্রতীক। সংস্কৃতি অঙ্গনের নানা হতাশার ভেতরও সংগীত নিয়ে দূরগামী চিন্তা ও তার বাস্তবায়ন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন তরুণ কৌশিক হোসেন তাপস। শিল্পীদের মর্যাদা ও সম্মান রক্ষায় তার ভূমিকা ইতিমধ্যেই শিল্পীসমাজে দারুণ স্বীকৃত।

সোমবার তার ৩৮তম জন্মদিনে দেশবরেণ্য শিল্পীরা একযোগে শুভেচ্ছা জানলেন তাকে। মূল্যায়ন করলেন তার কাজের, জানালেন প্রত্যাশার কথা। অনুজের প্রতি এমন প্রাণ খোলা প্রশংসায় তারাও যেন স্থাপন করলেন অনন্য দৃষ্টান্ত। গানবাংলা টেলিভিশনের ক্যামেরায় ধারণকৃত  বক্তব্যগুলো বার্তা ২৪.কমের পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো।

গাজী মাজহারুল আনোয়ার

কৌশিক হোসেন তাপস, একটি নাম নয়, তার নাম শুনে মনে হবে যেন একটি প্রতিষ্ঠান। আমাদের সংগীতকে প্রসারিত করে দেয়ার জন্য সে অবিরাম সংগ্রাম করে যাচ্ছে। তাপসের জন্য প্রার্থনা করে বলতে চাই, আল্লাহ যেন তার আয়ু দীর্ঘায়ূ করে দেয়। শুভ জন্মদিন তাপস।

আলম খান

সবসময় নতুন কিছু সৃষ্টি করার চেষ্টা করে। আমাদের পুরনো গানগুলোকে নতুন আঙ্গিকে তৈরি করে, একটা বিশাল পরিবর্তন এনেছে। তাপসের কাছে আমার প্রত্যাশা-যারা নতুন শিল্পী, একেবারেই যাদেরকে কেউ চেনে না, এরকম কিছু শিল্পী সে নিয়ে আসুক। শুভ জন্মদিন তাপস। আগামীতে যতগুলো জন্মদিন আসবে তোমার জন্য অগ্রীম শুভেচ্ছা।

আমাদের দেশের সংগীত, সংগীত প্রযোজনাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করেছেন। তার সৃজনশীলতা দিয়ে সংগীত শিল্প তথা সংগীত অনুষ্ঠান প্রযোজনাকে আরও উন্নততর করে তুলবেন এ প্রত্যাশা রইলো। তাপসকে তার জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

শাহীন সামাদ

তুমি একাধারে শিল্পী, সুরকার, গীতিকার এবং সংগীত পরিচালক। এটা কিন্তু কম কথা নয়, অনেকের মধ্যেই এ গুণটা থাকে না। একজন জাত শিল্পী, এ জন্যই শিল্পীদের প্রতি তার এত মায়া। গানগুলোর মধ্যে যে নতুনত্ব এনেছো, এ জন্য প্রশংসার পাত্র তুমি। শুভ জন্মদিন তাপস।

রফিকুল আলম

বাংলাদেশে যারা অতীতে কাজ করেছেন সংগীতে বা বর্তমানে করছেন, তাদের মধ্যে তাপসকে আমি প্রথম জায়গায় রাখতে চাই। খুব ভালো একজন যন্ত্রশিল্পী, খুব ভালো একজন গিটারবাদক, খুব চমৎকার পিয়ানো বাজায়, যন্ত্রশিল্পী হয়ে সংগীতপরিচালক হলে কিন্তু বিরাট একটা সুবিধা হয়। এ সুবিধাটাকে তাপস নানাভাবে কাজে লাগিয়েছে। তাপসকে আমি খুব সাধুবাদ জানাই, অনেক আশীর্বাদ করি। জন্মদিনে অন্তরের অন্ত:স্থল থেকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

খুরশীদ আলম

সবথেকে বড় ব্যাপার একজন করিৎকর্মা লোক। কাজপাগল লোক। যেহেতু নিজে একজন ভালো সংগীত পরিচালক এবং গান বোঝেন। সেহেতু তিনি বোঝেন কাকে দিয়ে কোন গানটি গাওয়ালে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। নতুনদের নিয়ে কাজ করতে চায়। একটু ভিন্নধর্মী কাজ করার তার প্রয়াস। তাপসকে বলবো, তুমি এগিয়ে যাও। আমরা তোমার সঙ্গে আছি।

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা
তাপসকে দেখে আমার প্রথম যেটা মনে হয়েছিলো-বাংলায় যে একটা কথা আছে, গানপাগল। তার যথার্থ উদাহরণ-তাপস। কখনো কম্পোজার হিসেবে, কখনো অরগানাইজার হিসেবে, কখনো গায়ক হিসেবে, পেট্রোনাইজার হিসেবে শিল্পীদের প্রতি তার বেশ জোরালো ভূমিকা আছে। আমি বিশ্বাস করি, তার আরও উত্তোরত্তর বৃদ্ধি পাবে। এত সুন্দর করে এত অরগাইনডভাবে সে যে কাজ করে, শিল্পীদের সম্মানের জায়গাটা, শিল্পীদের সৃজনশীলতার জায়গাটা, কোন শিল্পী তাপসের সাথে কাজ করে বলতে পারবে না যে, আমার ভালো লাগে নি। এটিই হচ্ছে তাপসের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব। তাপসের আগামী দিনগুলো সুন্দর ও শান্তিময় হোক।

ফেরদৌস আরা

একজন শিল্পী একদিনেই হন না। আর সেই কাজটি তাপস করছে একেবারে ছোটবেলা থেকে। আমি বলবো, একজন শিল্পী তাপসকে আমি অনেক বেশি শ্রদ্ধা করি। শিল্পী হিসেবেই শুধু নয়, শিল্পীকুলের পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা।

ফাতেমা তুজ জোহরা

বয়সতো তার এমন কিছু হয়নি। এত কম বয়েসে এত সুন্দর করে চ্যানেল পরিচালনা করছে, বিশেষ করে গানগুলো পরিচালনা করছে। আমাদের ট্র্যাডিশনাল ফর্ম অফ মিউজিক, সেটা কিন্তু চেঞ্জ হয়ে, সত্যি সত্যি ‘উইন্ড অফ চেঞ্জ’; কথাটা খুবই সংগত। এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না যে গানগুলো ভালো হচ্ছে। বাংলা গানের রূপটা একটু পরিবর্তিত হলে পরবর্তী প্রজন্ম খুব ভালোভাবে নেবে, খুব আলোড়িত হবে। তার ক্রিয়েটিভিটিকে আমি খুব সাধুবাদ জানাই।

আবিদা সুলতানা

ও পাগল হয়ে যায় গান শুনলে। যেখানে গানের কিছু একটা থাকে, তাকে আর সেখান থেকে ওঠানো যায় না। শুভ জন্মদিন তাপস। হ্যাপি বার্থ ডে!

কিরণ চন্দ্র রায়

সংগীতাঙ্গনে তার যে পদচারণা তা ভূয়সী প্রশংসার দাবি রাখে। এই প্রজন্মের মানুষের বোধের জায়গুলো যদি তাপসের মতো শানিত হয়, তাহলে বাংলাদেশের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি ধন্য হবে। জন্মদিনে দীর্ঘায়ূ, কর্মময় এবং শান্তিময় জীবন কামনা করছি।

অদিতি মোহসীন

একটি গানও যখন সে নির্মাণ করে, তখন তার একটা ভাবনা চিন্তা, একটা যত্ন একটা ভালোবাসার সঙ্গে সে কাজটা করে। সব গানেরই তো একটা পেছনের গল্প থাকে, সে গল্পটিকে সে খুব সুন্দর করে শ্রোতাদের সামনে তুলে ধরবার চেষ্টা করে। সংগীতায়োজনের ভেতরেও বলতে হবে তাপসের একটি নিজস্বতা আছে। যত্ন করে কাজ করার প্রবণতাটা আজকাল খুব একটা দেখা যায়না, সেটা আমি তাপসের মধ্যে খুব দেখি।

প্রসঙ্গত, ১৯৮৩ সালের এই দিনে সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন কৌশিক হোসেন তাপস। শৈশব থেকেই মূলধারার গানের সঙ্গে তার সখ্য। তার সঙ্গীতপ্রীতি দেখে বাবার কিনে দেওয়া কি-বোর্ডের মাধ্যমে শুরু হয় সঙ্গীতে সপ্রতিভ যাত্রা। পাশাপাশি গিটার, বাঁশি ও পারকাশনে অল্প বয়সেই পারদর্শিতার প্রমাণ দেন তাপস। মাত্র আট বছর বয়সে স্বকণ্ঠে গানের অ্যালবাম প্রকাশ করে জানান দেন নিজের প্রতিভা। 

বাংলার বাউল বয়াতি ও লোকশিল্পীদের সঙ্গে তার অকৃত্রিম আত্মিক যোগাযোগ একদিকে তাকে বাংলার সমৃদ্ধ লোকসঙ্গীত ধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছে, অন্যদিকে বাংলাদেশের ব্যান্ডসঙ্গীতের দিকপালদের সঙ্গে ওতপ্রোত সম্পর্ক তাকে আন্তর্জাতিক সঙ্গীত ধারায় ঋদ্ধ করেছে।

তাপসের রচিত ও সুরারোপিত গানে যেমন কণ্ঠ দিয়েছেন দেশবরেণ্য শিল্পীদের অনেকেই, তেমনি অংশ নিয়েছেন তার নির্দেশিত মিউজিক ভিডিওতে। সুরস্রষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। বহু মিউজিক ভিডিওর প্রযোজনা ও পরিচালনা, বহু সঙ্গীত রচনা, সুরারোপ ও দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন কনসার্টে সঙ্গীত পরিবেশন তার অভিজ্ঞতার ঝুলিকে সমৃদ্ধ করেছে।

অশান্ত বিশ্বকে শান্তির আহ্বান জানাতে তাপসের ‘মিউজিক ফর পিস’ স্লোগানটি বিশ্বময় ছড়িয়েছেন ‘উইন্ড অব চেঞ্জ’ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে। যাতে একাত্মতা জানিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ১৪১ জন খ্যাতনামা মিউজিশিয়ান। সংগীত পরিচালক ও শান্তির দূত হিসেবে এমন অবদান রাখায় ইতিমধ্যে তিনি অর্জন করেছেন দাদাসাহেব ফালকে এক্সিলেন্সি অ্যাওয়ার্ড (২০১৮) ও মাদার তেরেজা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড। সুরকার হিসেবে ২০১৩ সালে পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

এছাড়া দেশের অন্যতম বৃহৎ ইভেন্ট প্রতিষ্ঠান ওয়ান মোর জিরো’র প্রধান নির্বাহী হিসেবে একদশক ধরে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করে প্রশংসিত হয়েছেন গুণী এই শিল্পী।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর