‘কোথা থেকে যেন একটা শক্তি ভর করেছিলো’

সিনেমা, বিনোদন

রুদ্র হক, বার্তা ২৪.কম | 2023-09-01 16:48:47

টানা চল্লিশ দিন মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘ওরা ৭ জন’ চলচ্চিত্রের শুটিং শেষ করে পুরো টিম নিয়ে সিলেট থেকে ফিরছেন নির্মাতা খিজির হায়াত খান। তার ফাঁকে বার্তা ২৪.কমের মুখোমুখি হয়ে জানালেন চলচ্চিত্রটি সম্পর্কে, শুটিং পর্বের গল্প ও মুক্তির লক্ষ্য..


শুটিং প্যাকআপ হলো। কেমন লাগছে? কেমন অভিজ্ঞতা?
আমরা চল্লিশ দিনের লট শেষ করলাম একটানা। সিলেটের জৈন্তাপুর এলাকায়-যেটা আসলে মুক্তিযুদ্ধের পাঁচ নম্বর সেক্টর ছিলো। যুদ্ধের ছবি-শুট করতে গিয়েও অনেক ইমোশনাল হয়ে যাই, হয়ে গেছি। অনেক লম্বা কাস্ট লিস্ট, এত এত সহশিল্পী, সংগ্রামটা অনেক কঠিন ছিলো। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ছবি এর উপর অনেক অনেক আশীর্বাদও থাকে, যতো কষ্টই হোক কোথাও থেকে একটা গায়েবি শক্তি ছিলো যার ফলে শেষ করতে পেরেছি। এখন সবাইকে নিয়ে ঠিকঠাকভাবে ঢাকায় ফিরে, পোস্টের কাজ শেষ করি।

মেজর লুৎফর চরিত্রে খিজির হায়াত খান

গণমাধ্যমে এসেছে এটি সাতজন বীরশ্রেষ্ঠকে নিয়ে নির্মিত হচ্ছে। সিনেমার প্রেক্ষাপটটা যদি বলতেন..
না, এটি ভুল তথ্য, এটি ৭ জন বীর শ্রেষ্ঠকে নিয়ে নয়। এটা ৭ জনের একটি স্কোয়াড। যুদ্ধের সময় তারা যখন একটি মিশনে যায়, মিশনে কী হয়, তা নিয়েই গল্পটা। দু’দিনের একটা মিশন সাতদিনে গড়ায়। কী হয় সেখানে, তাদের যাত্রাপথেই যুদ্ধটাকে দেখানোর চেষ্টা করেছি।

আমরা মুক্তিযুদ্ধের পরপর ‘ওরা এগারো জন’ দেখেছি। মুক্তিযুদ্ধের পঞ্চাশবছর পর এসে ‘ওরা ৭ জন’-এ নতুন কী দেখতে পাবো?
দেখুন, মুক্তিযুদ্ধের গল্প তো মুক্তিযুদ্ধের গল্পই। কিন্তু আমার লক্ষ্য হচ্ছে, আমরা গত পঞ্চাশ বছরে যেভাবে মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলার চেষ্টা করেছি তাতে হয়তো নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধকে তাদের মতো করে তুলে ধরতে পারিনি। আমরা চেষ্টা করছি এই ছবিটা যেন তারা দেখে। ওরা যে ভিজুয়াল ল্যাঙ্গুয়েজে অভ্যস্ত, সেটাকে যেন আমরা কানেক্ট করতে পারি, এ ধরণের ছবি যদি তাদেরকে উৎসাহিত করে তাহলে তারা হয়তো আমাদের ইতিহাসটাকে জানার চেস্টা করবে। এটাই লক্ষ্য-স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা যদি সিনেমাটি দেখে তাহলেই আমাদের কষ্টটা স্বার্থক হবে।


মুক্তিযুদ্ধের ছবি, এই সময়ের প্রেক্ষাপট, নির্মাণ করতে গিয়ে কী কী জটিলতা ছিলো?
সবচেয়ে বড় ছিলো প্রপসের অভাব। আমরা যে বন্দুকগুলো দিয়ে যুদ্ধ করবো তা এখানে পাওয়াই যায় না, আনাও যায় না। বহু কস্টে কয়েকটা জোগাড় করেছিলাম, সেগুলোই ব্যবহার করা হয়েছে। বুঝতেই পারছেন, পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশ অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধকে ক্যামেরায় ধারণ করতে তাই আমাদেরকে এইরকম প্রত্যন্ত অঞ্চলে আসতে হয়েছে-একদম বর্ডারের কাছে। পাশাপাশি ন্যাচারাল লোকেশনে শুট, প্রায় ষাটভাগ শুটিংই রাতে ছিলো। সবকিছু মিলে কঠিন ছিলো। কিন্তু ওই যে বললাম, কোথা থেকে যেন একটা শক্তি ভর করেছিলো।

স্থানীয়দের কাছ থেকে কেমন সহযোগিতা পেয়েছেন?
এখানকার কিছু লোকাল মানুষ, আমাদেরকে চরমভাবে সহযোগিতা করেছে। কাঁদা-মাটিতে যা কখনোই সম্ভব হতো না। যে জঙ্গলগুলোতে শুট করেছি, যে গ্রামগুলোতে শুট করেছি, স্থানীয় মানুষরা সহযোগিতা করেছে। মুক্তিযুদ্ধের ছবি বলে সবার আবেগ এখনো কাজ করে। যারা হয়তো মুক্তিযুদ্ধকে দেখেছে, যারা হয়তো মুক্তিযুদ্ধের সময় ছোট ছিলো। ওই মানুষগুলো আমাদের অনেক হেল্প করেছে-ওদের ছায়াটা আমাদের সাথে ছিলো।

সোলায়মান গাজী চরিত্রে ইমতিয়াজ বর্ষণ

অভিনয়শিল্পীদের পারফর্মেন্স এ কতটুকু সন্তুষ্ট আপনি?
এটা একটা মাল্টিকাস্ট ফিল্ম। আমার প্রধান চরিত্রে ছিলেন ইন্তেখাব দিনার, সাইফ খান, শাহরিয়ার সজিব, খালিদ মাহমুদ তূর্য, ইমতিয়াজ বর্ষণ, নাফিজ আহমেদ, জয় রাজ, জাকিয়া বারী মম, তাসনিম কাশফি খুব ভালো অভিয়ন করেছে। আমি নিজেও একটা বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করেছি। বীরাঙ্গনা চরিত্রেও অনেকে অভিনয় করেছে। ভালো হয়েছে সবমিলে।

ছবিতে মুক্তিযোদ্ধাদের ভীড়ে একজন নারী হিসেবে জাকিয়া বারী মমকে দেখা যাচ্ছে। বিশেষ কোন ভূমিকা?
তার চরিত্রটির নাম অপর্ণা সেন। তার কর্মের জায়গা থেকেও তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। সবাই তো আর অস্ত্রহাতে যুদ্ধ করেনি, নিজ নিজ জায়গা থেকেও যুদ্ধ করেছে। এই চরিত্রটিও তার পেশাগত জায়গায় থেকেই যুদ্ধটা করে যায়। খুবই গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র।

অপর্ণা সেন চরিত্রে জাকিয়া বারি মম

এক লাইনে যদি ‘ওরা সাতজন’ চলচ্চিত্রকে সংজ্ঞায়িত করতে হয়?
মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের বীরগাথার গল্প

মুক্তির লক্ষ?
মাত্র শুট শেষ করলাম। লক্ষ্য আগামী বছরের কোন একটি বিশেষ দিনে, ২৬ মার্চ বা ১৬ ডিসেম্বর হলে তো কথাই নেই।

ষাট ভাগ শুটিংই হয়েছে রাতে

এ সম্পর্কিত আরও খবর