‘নব্বই শতাংশ নিশ্চিত ‘গোর’ অস্কারে মূল প্রতিযোগীতার জন্য মনোনীত হবে’

সিনেমা, বিনোদন

পার্থিব স্বর্গ, বার্তা ২৪.কম | 2023-12-26 19:42:24

ইংরেজী ভাষা এবং অস্কার সার্টিফাইড আন্তর্জাতিক হলে মুক্তি পাওয়ার শর্ত পুরণের মধ্য দিয়ে অস্কারের সাধারণ প্রতিযোগীতা বিভাগে লড়ার জন্য জমা পড়েছে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ‘দ্য গ্রেভ’। যার বাংলা সংস্করণ ‘গোর’ ২০২০ সালে মুক্তি পেয়েছিলো বাংলাদেশে। এছাড়াও চলতিবছর উত্তর হলিউডের ‘লেমলে নহো’ প্রেক্ষাগৃহে বানিজ্যিকভাবে মুক্তি পায়। চলচ্চিত্রটির নির্মাতা, কাহিনীকার ও অভিনেতা গাজী রাকায়েত জানিয়েছেন, ৯০ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে সিনেমাটি নমিনেশনের মুল প্রতিযোগীতায় টিকে যাওয়ার।


অস্কারে ছবি জমা দেওয়ার গল্পটা বলুন...
‘গোর’ নির্মাণের সময় থেকেই আমার প্রত্যাশা ছিলো সিনেমাটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রদর্শিত হোক। ফলে, আমি নির্মাণের সময়ই বাংলা এবং ইংরেজী দুটি ভাষাতেই সিনেমাটি নির্মাণ করি। বাংলায় এর নামকরণ হয় ‘গোর’ আর ইংরেজীতে ‘দ্য গ্রেভ’। পরবর্তীতে আমি সুযোগ খুঁজতে থাকি কী করে বৈশ্বিক সভায় ‘দ্য গ্রেভ’-এর উপস্থাপন সম্ভব হবে। তখন আমি জানতে পারি ইংরেজী ভাষার চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে ওদের নিদৃষ্ট কিছু শর্ত পূরণ করে সাধারণ বিভাগে প্রতিযোগীতার জন্য চলচ্চিত্র জমা দেওয়ার সুযোগ আছে। আমি সব শর্ত পুরণ করে জমা দেই। এবং প্রতিযোগীতায় জমা পড়ার যোগ্য বিবেচনায় এটিকে গ্রহণ করা হয়।


‘দ্যা গ্রেভ’ অস্কারে মনোনীত হতে কতটুকু আশাবাদী আপনি?
এখন শর্ট লিস্টের জন্য অপেক্ষা। আগামী বছরের শুরুর দিকে সেই সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশিত হলেই কেবল আমরা জানতে পারবো ‘দ্য গ্রেভ’ কিংবা ‘রেহানা মারিয়াম নূর’ মুল নমিনেশন প্রতিযোগীতার জন্য মনোনীত হলো কিনা। তবে তাদের সাথে আমার এখন পর্যন্ত যে ধরনের মেইল আদান প্রদান হয়েছে তাতে আমি নব্বই শতাংশ নিশ্চিত হয়েছি চলচ্চিত্রটি প্রতিযোগীতার জন্য মনোনিত হবে। শর্টলিস্ট এলে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে জেনারেল ক্যাটাগরিতে এভাবে বাংলাদেশের কোনো চলচ্চিত্র আগে জমা পড়েনি। আসলে এভাবে ছবি জমা দেওয়া সম্ভব এটাই অনেকে জানেনই না।

আপনি বলছেন, শুরু থেকেই ইচ্ছে ছিলো এটিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়ে যাওয়ার। কী আছে দ্য গ্রেভ চলচ্চিত্রে যা সারা পৃথিবীকে দেখাতে হবে? এবং সেখানে বাংলাদেশকে কতটা প্রতিনিধিত্ব করবে এই সিনেমা?
দেখুন আমাদের অবস্থা অনেকটা টিনের তলোয়ার দিয়ে যুদ্ধ করতে চাওয়ার মত। লাখ লাখ ডলার দিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রের বিপরীতে আমরা সামান্য বাজেটের সিনেমা নিয়ে প্রতিযোগীতা করতে চাইছি। মানতে হবে আমাদের হাজারও সীমাবদ্ধতা। তবে আমাদের শক্তিও আছে। সেটি আমাদের গল্প ও নির্মাণ ভাবনা। ‘দ্য গ্রেভ-এরও সবচেয়ে শক্তিশালী দিক এর স্টোরি লাইন আপ।

২২ বছর আগে আমি ‘গোর ’নামের টেলিভিশন নাটক বানিয়েছিলাম। তখন থেকেই এটিকে চলচ্চিত্র রুপায়ণের স্বপ্ন নিয়ে ঘুরেছি। এর কাহিনী অভিনয় এবং নির্মাণ একই সাথে আমার করা। মানে দীর্ঘদিন ধরে ‘দ্য গ্রেভ’কে আমার ভেতর লালন পালন করেছি। তাকে পরিণত হতে দিয়েছি। আমার আগের চলচ্চিত্র ‘মৃত্তিকা মায়া’র সফলতা আমাকে আত্মবিশ্বাস এনে দেয় এটি নির্মানের। পাশাপাশি সিনোমাটোগ্রাফী এবং সাউন্ড দুটোতেই আন্তর্জাতিক মান ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। নাহলে আস্কারে জমা দেওয়া সম্ভব হতো না।

আমি বলবো অভিনয়ও এর আরেকটা শক্তির দিক। এবং দিন শেষে এটি বাংলাদেশের সিনেমা। এখানে একটি চরিত্র আছে যে পায়ে হেটে বাংলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘোরে। তার পিছি পিছে ‘দ্য গ্রেভ’-এর দর্শকরাও সারা বাংলাদেশের রুপ-কৃষ্টি-প্রকৃতি দেখে নেবে একটি চলচ্চিত্রেই । ফলে ‘দ্য গ্রেভ’ বাংলাদেশেরই প্রতিনিধিত্ব করবে।

যেহেতু এটি জমা পড়েছে প্রতিযোগীতার জন্য এখন আমার প্রত্যাশা থাকবে মনোনয়ন বিভাগ নিয়ে। এটা ভেবে আনন্দ লাগছে বিশ্বের সেরা দশ হাজার চলচ্চিত্র বোদ্ধার শর্টলিস্টে যাবে আমাদের ‘দ্য গ্রেভ’ চলচ্চিত্রটি।


একই সাথে দুটি ভাষায় শুটিং করেছিলেন। বাংলা এবং ইংরেজী। কতটা কঠিন ছিলো কাজটা?
খুবই কঠিন কাজ ছিলো সেটি। যেহেতু অনুদানের ছবি, আমাকে বলা হয়েছিলো আপনাকে তো শুধু বাংলায় নির্মাণের জন্য আমরা অনুদান দিয়েছি। কিন্তু আমি বলেছি এটি নির্মাতা হিসেব আমার সিদ্ধান্ত। খুবই কঠিন হলেও স্ব স্ব অভিনেতাকে দিয়েই তার ডাবিং করিয়েছি। আমরা ব্রিটিশ উচ্চারণ ভঙ্গিকে প্রধান্য দিয়েছি। চেষ্টা ছিলো সঠিক উচ্চারণ ভঙ্গি ধরে রাখার।

বাংলা চলচ্চিত্রের ক্রান্তিকাল চলছে দীর্ঘদিন। তার উপর করোনার আঘাতে সব কিছু স্থবির হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু সম্প্রতি ‘রেহেনা মারিয়াম নূর’, আপনার ‘দ্য গ্রেভ’ কিংবা ‘কামার সাইমন-এর ‘অন্যদিন...’-এর মত চলচ্চিত্রগুলো বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আলোচিত হচ্ছে। এটিকে কি আপনি নতুন কোন সম্ভাবনা হিসেবে দেখছেন কিনা?
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আসলে একেবারে উল্টো স্রোতে বইছে। যখন সব কিছু স্বাভাবিক থাকে তখনই প্রত্যাশা করা যেতে পারে। তবে এটাও ঠিক সব কিছু ধ্বংস হয় নতুন করে শুরু হওয়ার জন্য। আমি সেই উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখতে পারছি। সেটি বানিজ্যিক ধারা হোক কিংবা অন্য যেকোন ধারার চলচ্চিত্র হোক। আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র খুব শিগগিরই ঘুরে দাঁড়াবে। কারণ বাংলাদেশ গল্পের দেশ। আমরা গল্প শুনতে এবং বলতে ভালোবাসি।

সিনেমার এই সংকট উত্তরণে আপনার পরামর্শ কী থাকবে?
অনেক মেধাবী তরুন রয়েছে। কিন্তু তাদের মেধার প্রকাশ ঘটাবার উপযুক্ত পরিবেশ নেই। উপজেলা পর্যায়ে সিনেমা হলগুলোকে উন্মুক্ত করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করতে হবে। এত বছরেও আমাদের ফিল্ম ইনস্টিটিউটা হলো না। হাইলি টেকনিক্যাল একটা মাধ্যম আমাদের চলচ্চিত্র। অথচ আমাদের ছেলে মেয়েদের পড়ালেখা করার কোনো সুযোগ নাই। ফলে শুধু দু’একটা বিদেশী অ্যাওয়ার্ড পাওয়া সিনেমা দিয়ে আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পকে বাঁচানো সম্ভব নয়। তবু আশা করি আগামী ৫ বছরের মধ্যে আমরা ঘুরে দাঁড়াবো।


এক নজরে গোর-দ্য গ্রেভ

গোর-দ্য গ্রেভ
পরিচালক: গাজী রাকায়েত
প্রযোজক: ফরিদুর রেজা সাগর[
চিত্রনাট্যকার: গাজী রাকায়েত
কাহিনিকার: গাজী রাকায়েত
উৎস: গোর (নাটক), ১৯৯৮

শ্রেষ্ঠাংশে
গাজী রাকায়েত
মৌসুমী হামিদ
দিলারা জামান
মামুনুর রশীদ
আশিউল ইসলাম
সুষমা সরকার
এ কে আজাদ সেতু
দীপান্বিতা মার্টিন
ওমর ফারুক
শামীমা তুষ্টি
অর্থা (শিশু শিল্পী)
এসএম মহসীন
গাজী আমাতুন নূর

সুরকার:  মোঃ ফজলে কাদের স্বাধীন
চিত্রগ্রাহক: পঙ্কজ পালিত, নিয়াজ মাহবুব
সম্পাদক: মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম রাসেল
প্রযোজনা কোম্পানি: ইমপ্রেস টেলিফিল্ম
পরিবেশক: ইমপ্রেস টেলিফিল্ম (বাংলাদেশ)
ইলিয়ট ক্যানবার (যুক্তরাষ্ট্র)
মুক্তি: ২৫ ডিসেম্বর ২০২০ (বাংলাদেশ), ১৪ মে ২০২১ (লস এঞ্জেলেস)
দৈর্ঘ্য ১৩২ মিনিট

এ সম্পর্কিত আরও খবর