চিরবিদায় নিলেন বাংলা মঞ্চ নাটকের দিকপাল পশ্চিমবঙ্গের অভিনেত্রী শাওলি মিত্র।
ভারতীয় গণমাধ্যম জানায় রবিবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।
মৃত্যুর আগে শেষ ইচ্ছাপত্রে তিনি জানিয়ে গিয়েছিলেন, দাহকার্যের পর তাঁর মৃত্যুর খবর যেন জানানো হয় সবাইকে। সে ইচ্ছায় পূরণ করা হল।
রবিবার দুপুরে সিরিটি মহাশ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
তাঁর শেষকৃত্যে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট নাট্যকর্মী এবং রাজনীতিবিদ অর্পিতা ঘোষ। বাবা শম্ভু মিত্রের মতোই মৃত্যুর পরবর্তী নিয়ম বিধি প্রকাশ করে গেলেন তিনি। ফুলের ভারে তাঁর দেহ যেন সেজে না ওঠে এমনই নির্দেশ ছিল তাঁর।
প্রয়াত এ নাট্যব্যক্তিত্ব শেষ ইচ্ছাপত্রে তাঁর মানস-পুত্র এবং কন্যা সায়ক চক্রবর্তী এবং অর্পিতা ঘোষের উপরেই তাঁর দাহকার্যের ভার দিয়ে গিয়েছিলেন। মহা-সমারোহ বা পুষ্পস্তবকে তাঁর দেহ সাজিয়ে তোলার বিরুদ্ধে ছিলেন শাঁওলি। অন্যান্য সাধারণ মানুষের মতোই সাদামাঠা ভাবে, সবার অগোচরে চলে যেতে চেয়েছেন তিনি। সে ইচ্ছেই পালন করেছেন নিকটজনেরা।
তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনেও। গভীর শোক জানিয়েছেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দিন ইউসুফ। শোক প্রকাশ করছে বিভিন্ন নাট্যসংগঠন ও নাট্যকর্মীরা।
বাংলাদেশের প্রবাসী লেখিকা তসলিমা নাসরিন এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন-
“মঞ্চে তাঁর নাটক দেখেছি, তাঁর অভিনয় দেখেছি অপলক। এমন অবিশ্বাস্য প্রতিভা নিয়ে খুব কম মানুষই জন্মায়! প্রিয় মানুষেরা, না হোক তাঁদের সঙ্গে দেখা বা ওঠাবসা, চলে গেলে বড় খালি খালি লাগে পৃথিবী।”
প্রয়াত পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’ ছবিতে ‘বঙ্গবালা’র চরিত্রে দেখা গিয়েছিল শাঁওলিকে। অভিনয় করেছেন ‘বিতত বীতংস’, ‘ডাকঘর’, ‘পুতুলখেলা’, ‘একটি রাজনৈতিক হত্যা’র মতো একাধিক কালজয়ী নাটকে। অভিনয় সুবাদেই তিনি ২০০৯-এ পদ্মশ্রী সম্মানে সম্মানিত। এ ছাড়াও সম্মানিত হয়েছেন সঙ্গীত-নাটক অকাদেমি (২০০৩) এবং বঙ্গ-বিভূষণ (২০১২) সম্মানে। ২০১১-তে রবীন্দ্র সার্ধ্বশত জন্মবর্ষ উদযাপন কমিটির চেয়ারপার্সন ছিলেন তিনি।