বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ছড়াবে শিক্ষার আলো, প্রজন্মের মনে জাগাবে উন্মেষ। কিন্তু সেখানে যখন ধর্ষণের মতো নিকৃষ্টতম অপরাধ সংঘটিত হয়, তখন সাধারণ জনগণ থেকে বিশিষ্টজন, সবার মনেই উদ্বেগ ও ক্ষোভ সৃষ্টি করবে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি দেশের অন্যতম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় তেমনই এক ঘৃণ্য কলঙ্কের সাক্ষী হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, স্বামীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছাত্রাবাসে আটকে রেখে তার স্ত্রীকে পাশের জঙ্গলে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান এবং বহিরাগত মামুনুর রশিদ। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান ছয় শিক্ষার্থীর সনদ স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর মধ্যে চার জনই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা।
এ ঘটনায় ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশের ১৮ জন বিশিষ্ট নাগরিক। এর মধ্যে রয়েছেন হাসান ইমাম, রামেন্দু মজুমদার, ফেরদৌসী মজুমদার, মামুনুর রশীদ, সারা যাকের, নাসির উদ্দীন ইউসুফের মতো কিংবদন্তি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।
গতকাল ৬ ফেব্রুয়ারি গণমাধ্যমে পাঠানো তাদের সম্মিলিত বক্তব্য, ‘আমরা এ ঘটনায় হতবাক ও ক্ষুব্ধ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতোপূর্বে আরও ঘটনা ঘটেছে। কোনও ধর্ষণের তদন্ত বা সুরাহা কর্তৃপক্ষ করেনি। বিশাল এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা আনার কোনও কার্যকর পদক্ষেপ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নেয়নি। এই সুযোগে উচ্ছৃঙ্খল কতিপয় ছাত্র এই ধরনের অমানবিক ঘটনা ঘটাতে সক্ষম হচ্ছে। এই ধর্ষক ছাত্রদের যে কথিত রাজনৈতিক পরিচয় গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, তা আমাদের শঙ্কিত করে তুলেছে। আজকের যে ছাত্র, সে আগামী দিনের রাষ্ট্র ও সমাজ পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত হবে। সেই ছাত্রদের যদি এই নৈতিক অধঃপতন হয়, তবে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা চরম উদ্বিগ্ন।’
তারা আরও বলেছেন, ‘আমরা দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই যে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে এ হীনকর্ম জনগণের মাঝে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। আমরা সরকারের কাছে এই জঘন্য অপরাধের দ্রুত তদন্ত ও বিচার চাই। এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের পূর্ণ নিরাপত্তা বিধান করে শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য কঠিন পদক্ষেপ ও শক্ত অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা আশা করি, বাংলাদেশের কোথাও আর কোনও নারী ধর্ষিত হবে না।’
লিখিত এই বিবৃতিতে আরও যারা একাত্ম হয়েছেন, তারা হলেন অনুপম সেন, সারওয়ার আলী, আবেদ খান, মফিদুল হক, মুনতাসীর মামুন, শাহরিয়ার কবীর, কেরামত মওলা, মিলন কান্তি দে, লাকী ইনাম, শিমূল ইউসুফ, গোলাম কুদ্দুছ ও আহকামউল্লাহ।