বাড়ি লাগোয়া সড়ক। বড়জোর বিশ-পঁচিশ হাতের ব্যবধান। সড়কের ওপারেই কবরস্থান। যেখানে আম-কাঁঠালের ছায়ায় শুয়ে আছে শিল্পীর মা-সহ কত কত মানুষ। জীবন থেকে মৃত্যুর দূরত্ব যেন এই একটি সড়ক। আর সাদি মহম্মদ সেই সড়ক পাড়ি দিলেন তানপুরা বাজাতে বাজাতে বুধবারের (১৩ মার্চ) সন্ধ্যায়, সবার অলক্ষ্যে। ইফতার সেরে বসেছিলেন রেয়াজে। কে জানতো, জীবনে শেষবারের মতো তানপুরায় সুর তুলছিলেন তিনি! তানপুরার বিষণ্ণ সুরেই ডুব দিয়েছিলেন অনন্তযাত্রায়। স্বেচ্ছামৃত্যুর হাত ধরে। তার জানাজার নামাজ আজ বৃহস্পতিবার বাদ জোহর মোহাম্মদপুর জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মোহাম্মদপুর জামে মসজিদ কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
গানে গানে এই শিল্পীকে বিদায় জানাতে তার বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, খুরশীদ আলম, অপি করিম, শামিম আরা নিপা ও ফরিদা পারভিনসহ আরও অনেকে।
এ সময় তাদের গাইতে শোনা যায় রবীন্দ্রসংগীত, ‘তোমার অসীমে প্রাণমন লয়ে যত দূরে আমি ধাই, কোথাও দুঃখ, কোথাও মৃত্যু, কোথা বিচ্ছেদ নাই, তোমার অসীমে প্রাণমন লয়ে, যত দূরে আমি ধাই।’
২০০৭ সালে ‘আমাকে খুঁজে পাবে ভোরের শিশিরে’ অ্যালবামের মাধ্যমে তিনি সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ২০০৯ সালে তার ‘শ্রাবণ আকাশে’ ও ২০১২ সালে তার ‘সার্থক জনম আমার’ অ্যালবাম প্রকাশিত হয়।
২০১২ সালে তাকে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার প্রদান করে চ্যানেল আই। ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি তাকে রবীন্দ্র পুরস্কার প্রদান করে।
বাবা-মায়ের ইচ্ছা অনুযায়ী ১৯৭৩ সালে বুয়েটে ভর্তি হয়েছিলেন সাদী মহম্মদ। তবে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মন বসাতে পারেননি তিনি।
ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াকালীন ১৯৭৫ সালে স্কলারশিপ নিয়ে শান্তিনিকেতনে সংগীত নিয়ে পড়তে যান। বিশ্বভারতী থেকে রবীন্দ্রসংগীতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন।