শিল্পী সমাজ তথা শোবিজ তারকারা তাদের শিল্পকর্মের মাধ্যমে আনন্দ বিনোদনের পাশাপাশি সমাজের নানা সংকটের চিত্র তুলে ধরেন। চলচ্চিত্র-নাটক-গান-নাচের মাধ্যমে সহজেই সামাজিক বার্তা দর্শকের হৃদয় স্পর্শ করে।
তবে সকল শিল্পী একইভাবে নিজের পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন না। বলা ভালো, আমাদের দেশ কিংবা আন্তর্জাতিক অঙ্গনের তারকারাও শুধু তাদের শিল্প আর সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের ব্যক্তিগত ইস্যু নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। একজন শিল্পীরও যে রাজনৈতিক দর্শন থাকতে পারে কিংবা একজন শিল্পীর পেশাগত দায়িত্বের মধ্যে যে সামাজিক-রাষ্ট্রীয় ইস্যু নিয়ে নিজের মতামত রাখার বিষয়টিও পড়ে সে কথা বেশিরভাগ মানুষই ভুলে যান।
তবে কিছু তারকা নিজের দায়িত্বের জায়গায় সচেতন থাকেন। যেমন চলমান কোটা আন্দোলন নিয়ে নিজেদের মতামত সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেছেন একাধিক জনপ্রিয় তারকা। কারণ দেশে এখন সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু এটি।
রাজনীতি সচেতন নির্মাতা আশফাক নিপুণ তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, ‘ছাত্রদের পাশে দাঁড়ান’। এই স্ট্যাটাসের কমেন্টে কোটা আন্দোলনকারী ছাত্রদের ওপর হামলার একটি ভিডিও লিংক শেয়ার করেছেন তিনি।
সমালোচকপ্রিয় নির্মাতা ও অভিনেতা সুমন আনায়ারও আন্দোলনকারী ছাত্রদের পক্ষে কথা বলেছেন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে। তিনি লিখেছেন, ‘দেশটা তাহলে শুধুই আপনাদের, আমরা ধৈঞ্চা? আসলে যেখানে দায়িত্ব শব্দটা ‘‘ক্ষমতা’’ হিসেবে ব্যবহার হয় সেখানে নাগরিক ধৈঞ্চা!’
তবে বিপক্ষেও মত রয়েছে বেশ কয়েকজন তারকার। মেধাবী অভিনেত্রী মৌটুসী বিশ্বাস ফেসবুকে ‘আছিস যত রাজাকার! এই মুহূর্তে বাঙলা ছাড়’ স্লোগান লেখা পোস্টার শেয়ার দিয়ে লিখেছেন, ‘তোমাদের দেশ আছে তো ময়নারা, গোষ্ঠী নিয়ে যাও না... সাথে করে দুর্নীতিবাজদেরও নিয়ে যাও।’
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান মানিক লিখেছেন, ‘তুমি কে? আমি কে? বাঙালি, বাঙালি। তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা। জয় বাংলা।’
অভিনেত্রী শামীমা তুষ্টি লিখেছেন, ‘যারা নিজেদের রাজাকার বলতেও দ্বিধা করে না, আবার তারাই সরকারী চাকরীর জন্য কোটা চায় না, তাদের হাতে দেশ গেলে কি হবে সেটাই ভাবতেসি...’।
তবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী রুনা খান তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে নিরপেক্ষ থেকেছেন। ‘তুমি কে আমি কে, বাঙালি বাঙালি’ স্লোগান লেখা একটি পোস্টার শেয়ার করেছেন এই অভিনেত্রী। তবে কমেন্টে সঞ্জয় সরকার মুক্তনীল নামের একজনের একটি লেখাও শেয়ার করেছেন। তাতে লেখা আছে, ‘প্রধান-এর কাছ থেকে আর একটু ম্যাচিউরিটি আশা করেছিলাম। স্লোগানে স্লোগানে শাহবাগ কাঁপছে, ঘরে বসে মৌলবাদীরা হাসছে। বিষয়টা ভালো হলো না। হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। ৭১-এ কোন রাজাকারও এই স্লোগান দেবার দুঃসাহস করেনি। এই ভুলের মাশুল বাংলাদেশকে অনেক বছর দিতে হবে। নতুন প্রজন্মের বিশাল একটি অংশকে অবহেলা করার খেসারত শাসকদের দিতে হবে। প্রতিক্রিয়াশীল চক্র এই ফসল ঘরে তুলবে। মুক্তিযোদ্ধারা জাতির বীর সন্তান জন্যই তাদেরকে বিতর্কের উর্দ্ধে রাখা উচিত ছিল। তবে মুক্তিযোদ্ধা এবং রাজাকারের বাইরেও দেশে মানুষ আছে এবং তাদের দুঃখ দুর্দশা আছে। আর যতই ষড়যন্ত্র হোক, দিন শেষে ‘তুমি কে আমি কে, বাঙালি বাঙালি’।