গত কয়েক বছরে টিভি নাটকের তারকারা পারিশ্রমিক বাড়িয়েছেন দ্বিগুণ। এ নিয়ে অনেক দিন থেকেই নাখোশ প্রযোজক-পরিচালকরা। কোন কোন তারকা একলাফে নাটকপ্রতি লাখ টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক বাড়িয়েছেন।
তবে বর্তমানে নাটক থেকে আয়ের পরিমাণ অনেকাংশে কমে গেছে। ফলে নাটক নির্মাণও কমে গেছে। নির্মাণ ব্যয় কমানো ছাড়া এই অবস্থা থেকে উত্তরণের আপাতত কোনো পথ দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা। প্রযোজকেরা বলছেন, তারকারা পারিশ্রমিক না কমালে একেবারেই থমকে যেতে পারে নাটকের ইন্ডাস্ট্রি।
একাধিক প্রযোজকের অভিযোগ, নাটকের ইউটিউব ভিউয়ের দোহাই দিয়ে পারিশ্রমিক বাড়াতেন তারকারা। যে কারণে পারিশ্রমিক বাড়ানো নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এমনও হয়েছে, কোনো কোনো তারকা বছরে দুইবার পর্যন্ত পারিশ্রমিক বাড়িয়েছেন।
একটা সময় নাটক থেকে আয় থাকলেও এখন আর সেটা নেই। বিজ্ঞাপন অন্যদিকে চলে যাচ্ছে। আবার নাটকের মধ্যে ইউটিউব বিজ্ঞাপন ৮০ শতাংশ কমে গেছে। যে কারণে নাটকের ভিউ থাকলেও আয় অনেক কমেছে। এতে বেশি বাজেটের নাটক থেকে আয় করা সম্ভব নয়। এ জন্য তারকাদের পারিশ্রমিক কমানো দরকার।
প্রযোজকেরা আরও জানান, একটা নাটকের অর্ধেক টাকা একজন আর্টিস্টকে দিলে বাকি আর কী থাকে। যেভাবে রাজস্ব কমছে, সেখানে আগের মতো বড় বাজেটের নাটক নির্মাণ করে পোষানো সম্ভব না। শিল্পীদের পারিশ্রমিক কমাতে হবে। কারও পারিশ্রমিক তিন ভাগের এক ভাগ কমানো উচিত। আগের জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। অনেকের অর্ধেক কমাতে হবে। না হলে ইন্ডাস্ট্রি সামনে আরও বেশি বিপর্যয়ের দিকে যাবে।
ইউটিউবকেন্দ্রিক চ্যানেলগুলোতে জিয়াউল ফারুক অপূর্ব, মেহজাবীন চৌধুরী, মোশাররফ করিম, তাসনিয়া ফারিণ, নিলয় আলমগীর, ফারহান আহমেদ জোভান, তৌসিফ মাহবুব, মুশফিক আর ফারহান, তানজিন তিশা, সাবিলা নূর, সাফা কবির, ইয়াশ রোহান, তটিনী, কেয়া পায়েল, নাজনিন নিহা, হিমিসহ কিছু তারকার কদর বেশি। এসব তারকার পারিশ্রমিক নাটকপ্রতি ২ থেকে ৪ লাখ টাকা। কখনো আরও বেশি।
চাহিদাসম্পন্ন অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে তৌসিফ মাহবুব বিষয়টি জানতে পেরে এর গুরুত্ব উপলব্ধি করেছেন। তৌসিফ গণমাধ্যমকে জানান, তিনি যৌক্তিক জায়গা থেকে পারিশ্রমিক বাড়িয়েছিলেন। কাজের মানে গুরুত্ব দিয়েছেন। সময় নিয়ে কাজ করতেন। তার বাজেট নিয়ে কখনোই কারও কাছ থেকে অভিযোগ শোনেননি। কারণ সবকিছুর সঙ্গে সমন্বয় করেই তিনি পারিশ্রমিক নির্ধারণ করেছেন। তিনি কখনোই বছরে দুইবার পারিশ্রমিক বাড়াননি।
তৌসিফ আর বলেন, ‘এখন যদি বলা হয় ইন্ডাস্ট্রির ঘুরে দাঁড়ানোর স্বার্থে বাজেট কমাতে হবে, তাহলে অবশ্যই ইন্ডাস্ট্রির স্বার্থে যৌক্তিকভাবে সিদ্ধান্ত নেব। এখানে ব্যক্তির চেয়ে সবার স্বার্থ আগে দেখতে হবে। সেক্রিফাইস করতে হলে করব। আমিও চাই, আমাদের ইন্ডাস্ট্রি ঘুরে দাঁড়াক। একদিন হয়তো যোগ্যতা আমাদের আরও বেশি বাজেট এনে দেবে।’
সর্বাধিক পারিশ্রমিক পাওয়া শিল্পীদের আরেকজন অভিনেতা মুশফিক আর ফারহান। তিনি বলেন, ‘নাট্যাঙ্গনে আমাদের কাজের সংখ্যা কমেছে। এই অবস্থা থেকে আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রয়োজনে যদি পারিশ্রমিক কমাতে হয়, তাতে অবশ্যই কমাব। আমার মনে হয়, সব শিল্পীই কমাবেন। কোনো সিদ্ধান্ত হলেই তার সঙ্গে আছি।’
তবে তিনি মনে করিয়ে দিলেন, কম বাজেটে নাটক বানানোর সুযোগে কেউ যেন আবার সুযোগসন্ধানী না হয়ে ওঠেন। তাহলে শিল্পীরাও ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন। তিনি নাটকের স্পন্সর নিয়েও কথা বলেন, ‘আগে ৬ টাকা স্পন্সর পাওয়া গেলে এখন যদি ৪ টাকা কমে যায়, তাহলে এক কথা। তখন বাজেটে চাপ তৈরি হবে। সেখানে কতটা কমেছে, সেটাও প্রশ্ন। এ ছাড়া আগে যারা বিনিয়োগ করছেন, তারা একেবারে বিনিয়োগ বন্ধ করাটাও প্রশ্ন সাপেক্ষ। তবে আমার জায়গা থেকে নাটকের পাশে আছি।’