৪৫ বছরের যাত্রা থামিয়ে সোলস ছাড়লেন নাসিম খান
বাংলাদেশের ব্যান্ডদল সোলসের বয়স হলো ৫১ বছর। তার মধ্যে ৪৫ বছর ব্যান্ডটির সঙ্গে আছেন নাসিম আলী খান। সোলসের গান শুনেছেন, তারা নাসিম আলী খানের কণ্ঠে শুনেছেন ‘ব্যস্ততা’, ‘চায়ের কাপে’, ‘মুখরিত জীবন’, ‘সাগরের প্রান্তরে’। সোলসের ইংরেজি সব গানেও কণ্ঠ দিতেন তিনি। এখন থেকে সেই সোলসে আর তাকে দেখা যাবে না। সোলসে না থাকার খবরটি নিজেই নিশ্চিত করেছেন নাসিম আলী খান। দলটির ভোকাল পার্থ বড়ুয়াও জানিয়েছেন, ‘নাসিম ভাই আমাদের সঙ্গে নেই।’
বছরখানেক ধরেই দেশে ও দেশের বাইরের কোনো মঞ্চে নাসিম আলী খানকে দেখা যাচ্ছিল না। ভক্তরাও ধোঁয়াশার মধ্যে ছিলেন। ব্যান্ড সদস্যদের সঙ্গে একাধিকবার কথা হলেও এ বিষয়ে মুখ খোলেননি তারা। এর মধ্যে ঢাকার উত্তরা ক্লাবের একটি অনুষ্ঠানে এককভাবে গান গেয়েছেন নাসিম আলী খান, যে অনুষ্ঠানের পোস্টারে তার নামের পাশে লেখা ছিল ‘সোলসের প্রধান গায়ক’। সেই আয়োজনে সোলসের অন্য সদস্যরা ছিলেন না। এরপরও বিষয়টি নিয়ে এত দিন পরিষ্কার করে কিছুই বলছিলেন না সদস্যরা। অবশেষে নাসিম আলী খানই জানালেন, সোলসে তিনি আর নেই। তবে ব্যান্ডে না থাকলেও এককভাবে গান গেয়ে যাবেন।
২০২৩ সালে সোলসের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে কয়েকটি দেশে কনসার্ট করে। শুরুর দিকে দুটি দেশে অংশ নিলেও পরে অনিয়মিত হয়ে পড়েন নাসিম আলী খান। এ বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রে ১৫টি শো করে সোলস। একটিতেও ছিলেন না নাসিম আলী খান। যুক্তরাজ্যের তিনটি শোতেও ছিল একই অবস্থা। বাংলাদেশের কয়েকটি শোতেও তাকে দেখা যায়নি।
নাসিম আলী খান বললেন, ‘আমি একজন ব্যবসায়ী। ঢাকার বাইরে কিংবা দেশের বাইরে টানা তিন মাস বা দুই মাস থাকা (আমার পক্ষে) সম্ভব নয়। সোলসের ৫০ বছর পূর্তিতে অনেক শো হয়েছে, ব্যান্ডের ব্যস্ততাও বেড়েছে। একটার পর একটা ট্যুর। ব্যবসায়ী হিসেবে ঢাকায় আমার কয়েকটি কমিটমেন্ট ছিল। সত্যি বলতে, সব সময় তো আমি ব্যবসা করেই আসছি। সংগীতচর্চাও সমান্তরালে চলেছে। ব্যবসায়িক ব্যস্ততার কারণে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, যেতে পারব না। এটা তাদের জানিয়েছিলামও।’
১৯৭৮ সাল থেকে সোলসে অতিথি সদস্য ছিলেন নাসিম আলী খান, ১৯৮০ থেকে সক্রিয় সদস্য হিসেবে পথচলা শুরু করেন। সেই হিসাবে ৪৫ বছরের পথচলার ইতি টানার প্রসঙ্গ উঠতেই নাসিম আলী খান বলেন, ‘ব্যবসায়িক ব্যস্ততার কারণে সম্ভব হচ্ছে না। একসঙ্গে এত লম্বা পথ চলেছি, বছরখানেক ধরে নেই-এটা তো খারাপ লাগবেই। ওরা এখন অতিরিক্ত শো করবে, এটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে সত্যিই ভীষণ খারাপ লাগছে সোলস ছাড়া থাকায়। কিন্তু বাস্তবতা তো ভিন্ন কথা, অনেক কঠিনও-বাস্তবতা না মেনে উপায়ও নেই। বিষয়টা এমন না যে ব্যান্ডের কারও সঙ্গে আমার মনোমালিন্য হয়েছে। সবার সঙ্গেই আমার সুন্দর সম্পর্ক। কথাও হয় নিয়মিত। আইয়ুব বাচ্চু স্মরণে একটি অনুষ্ঠানেও দেখা হয়েছে। সবাই আড্ডাও দিয়েছি।’
কথা হয় পার্থ বড়ুয়ার সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘এ নিয়ে আমরা বছরখানেক ধরে নানা জবাবদিহির মধ্যে ছিলাম। কিছুই বলতে পারছিলাম না। তবে নাসিম ভাইয়ের বিষয়টা পরিষ্কার থাকাও দরকার ছিল। আমরা শো করতে যাচ্ছি, সেখানে প্রতিনিয়ত প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে, হচ্ছেও। আমাদের সঙ্গে তাঁর কিন্তু কোনো সমস্যা নেই। শুধু ব্যবসায়িক ব্যস্ততার কারণে তিনি আমাদের সময় দিতে পারছেন না।’
নাসিম আলী খানের শূন্যস্থান কতটা ভোগাবে, এমন প্রশ্নে পার্থ বড়ুয়া বললেন, ‘এত বছর একসঙ্গে গানবাজনা করছি, তাকে তো মিস করব। প্রতি মুহূর্তে তার শূন্যতা অনুভব করছি। আগে দুজন মিলে আমরা স্টেজে গাইতাম, এখন একজনকে গাইতে হচ্ছে। আমরা সাধারণত মঞ্চে ১৭-১৮টি গান করি। সত্যি বলতে, নাসিম ভাইয়ের শূন্যস্থান পূরণ হওয়ার নয়, তাই তার জায়গায় অন্য কাউকে নেওয়ার কথাও ভাবছি না।’