মারণব্যাধি ক্যান্সারকে পরাজিত করতে বর্ষীয়ান অভিনেতা আবুল হায়াতকে যোদ্ধা হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন সহধর্মিনী শিরিন হায়াত; স্ত্রীকে নিয়ে এমনটাই ভাষ্য আবুল হায়াতের। তিনি বলেছেন, ‘স্ত্রী তার সবচেয়ে বড় সহযোদ্ধা’।
আবুল হায়াত আরও বলেন, ‘আজকে আমি এই যে তিনটা বছর ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করছি, শুধু তার কারণে। তিনি আমাকে শিখিয়েছেন, আই অ্যাম আ ফাইটার।’
শিল্পকলা একাডেমিতে গতকাল শনিবার আত্মজীবনী গ্রন্থ ‘রবি পথ’র মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে, জীবনের এই ক্রান্তিকালের কথা যখন হায়াত বলছিলেন, তৈরি হয় আবেগঘন পরিবেশের।
৮০ বছর বয়সী হায়াতে ক্যান্সার আক্রান্ত হন তিন বছর আগে। ওই সময়ের কথা বর্ণনা করে তিনি বলেন, “হাসপাতাল থেকে বাসা পর্যন্ত আর কথা বলতে পারিনি। আমার তো মন মানে না। রাতে খাবার খেয়েছি কি খাইনি, জানি না। বিছানায় শুয়ে পড়েছি। অন্ধকারে একা কাঁদছি। হঠাৎ টের পেলাম, উনি পাশে এসে শুয়েছেন। আমি তখনো নিঃশব্দে কাঁদছি। হঠাৎ ওনার একটা হাত আমার গায়ে এসে পড়ল। আমি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম।"
‘রবি পথ-কর্মময় ৮০’ শিরোনামের মোড়ক উন্মোচনের অনুষ্ঠানে হায়াত কথা বলার ফাঁকে মঞ্চে ডেকে নেন স্ত্রী শিরিন হায়াতকে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, “চিকিৎসক বললেন, আমার ক্যানসার হয়েছে। তখন এই মহিলা (শিরিন হায়াত) সারাক্ষণ আমাকে বলতে লাগল, আরে কী হয়েছে! এটা কি কোনো ব্যাপার নাকি! আমরা আছি। চিকিৎসা করব। যেখানে যা যা লাগে, আমরা করব। তুমি ভালো হয়ে যাবে। আমার মেয়েরা খবর পেয়েছে। তারাও বিভিন্নভাবে আমাকে বুঝিয়েছে।“
ক্যান্সারের সঙ্গে এই যুদ্ধে স্ত্রী শিরিন তাকে 'ফাইটার' হতে শিখিয়েছেন জানিয়ে অভিনেতা বলেন," সারাটা জীবন আমার সঙ্গে, আমার দুঃখ, কষ্ট, বেদনা, আনন্দ, সবকিছুতে সে ছিল।“
নিজের জীবনের নানা কথা আর ঘটনা নিয়ে 'রবি পথ' বইটি সাজিয়েছেন এই অভিনেতা। প্রায় এক দশক ধরে বইটি লিখেছেন তিনি।
তিনি বলেন," ‘আমার মনে হয়, এটার একটা ভালো দিক আছে। ৮০ বছরের একটা ভ্রমণ আমার, অনেক কিছু দেখেছি, যা অনেকে হয়ত জানে না। সুতরাং আমার মতো যারা আছেন, তারাও যদি নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আত্মজীবনী লেখেন, তাহলে অবশ্যই সেটা নতুন প্রজন্মের জন্য ভালো।"
অভিনেতা আবুল হায়াতের জন্ম ১৯৪৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর। ১৯৬৯ সাল থেকে টিভি নাটকে অভিনয় করছেন তিনি। দীর্ঘ অভিনয় জীবনে নাটকের পাশাপাশি ‘অজ্ঞাতনামা’, ‘আগুনের পরশমণি’, ‘জয়যাত্রা’, ‘গহীনে শব্দ’সহ আরো কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। ‘দারুচিনি দ্বীপ’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য ২০০৭ সালে পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
আবুল হায়াতের প্রথম বই 'আপ্লুত মরু' প্রকাশিত হয় ১৯৯১ সালে। তারপর থেকে ধারাবাহিকভাবে তিনি বই লিখে যাচ্ছেন। প্রতি বছর বইমেলায় তার বই থাকে। ২০২৩ সালে প্রকাশিত হয়েছে তার লেখা 'রঞ্জিত গোধূলি'; এছাড়া 'স্বপ্নের বৃষ্টি', 'দুটি মঞ্চনাটক', 'এসো নীপবনে', 'জীবন খাতার ফুট নোট', 'ঢাকামি', 'পলাতক', 'নির্বাচিত গল্প', 'চোখ গেল পাখি', 'শোধ', 'নির্ঝর সন্নিকট', 'জল ডোবা', 'আষাঢ়ে', 'টাইম ব্যাংক' ও 'অপমান' সহ অনেক বই লিখেছেন তিনি।