সুচিত্রা সেন: স্মৃতির হীরন্ময় মহানায়িকা

সিনেমা, বিনোদন

ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2023-08-24 12:51:54

আজ (৬ এপ্রিল) মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের ৮৮তম জন্মদিন। ১৯৩১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের পাবনায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মারা যান ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি।

কিন্তু মৃত্যুতেই নিঃশেষ হননি তিনি, জেগে আছেন রূপালি পর্দা ও জীবনের রহস্যময় উপস্থিতিতে। স্মৃতির হীরন্ময় মহানায়িকার মতো আছেন সুচিত্রা সেন।

সুচিত্রা সেন একটি যুগের কাঠামো ছাড়িয়ে বাংলা চলচ্চিত্রচর্চার একটি চিরকালীন আইকনে পরিণত হয়েছেন। নিজের অভিনয় শৈলীতে সমকাল ও যুগের পাটাতনে একাই দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। রূপালি পর্দায় তার অভিনয় যুগের অবসান আর হলো না। মৃত্যুর পরেও চলছে তার দাপট।

চেহারা, অভিনয়, অভিব্যক্তিতে এমনই রহস্যের মায়াজাল বিস্তার করেছেন তিনি, আর কেউ তেমন কুশলতা দেখাতে পারেন নি। ফলে এখনও বাংলা টেলিভিশনে সুচিত্রার ছবি দেখানো হলে ঘরে ঘরে উপচে পড়ে ভিড়। এই আলোড়ন জাগানো কৃতিত্বের অন্য নাম সুচিত্রা।

সুচিত্রা সেন সম্পর্কে বাংলা চলচ্চিত্রে শিহরণ ও রহস্যের শেষ নেই। ১৯৫৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ থেকে জুটি বাঁধা শুরু করেন উত্তম কুমারের সঙ্গে। তারপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি একটিবারের জন্যও।

যদিও এর আগে তিনি আরও দুটি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। যে দুটি ছবি নিয়ে কথা হয়ই না প্রায়। সুচিত্রা সেন অভিনীত প্রথম বাংলা ছবি ‘শেষ কোথায়’ (১৯৫২) যেটি মুক্তি পায়নি। কিন্তু কে জানতো, মুক্তিহীন প্রথম ছবির নায়িকাই একদা পরিণত হবেন মহানায়িকায়!

সুচিত্রার দ্বিতীয় ছবির নাম ‘সাত নম্বর কয়েদি’ (১৯৫৩)। মোটেও উল্লেখযোগ্য হয়নি ছবিটি। এতে তিনি নায়ক সমর রায়ের বিপরীতে নায়িকা ছিলেন। তবে এই ছবির হাত ধরেই অভিনেত্রী রমা সেনগুপ্তা নামের মেয়েটি চিরকালের জন্য হয়ে উঠলেন সুচিত্রা সেন, যেন বাংলার আরেক চিরায়ত নায়িকা বনলতা সেনের দোসর।

ভাগ্য সুচিত্রাকে অচিরেই সাহায্য করেছিল আর সেটা ছিল ১৯৫৩ সাল। বছরটি ছিল তার অভিনয়ে আসার দ্বিতীয় বৎসর। এ বছরকে চিহ্নিত করা যায় সুচিত্রা সেনের ক্যারিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ একটি বছর হিসেবে। সে বছর গুরুত্ববহ বিষয়ের একটি তার নাম পরিবর্তন এবং দ্বিতীয়টি উত্তম কুমারের সঙ্গে জুটি বাঁধা।

ভাগ্য সুচিত্রাকে প্রবলভাবে সহায়তা করার একটি উদাহরণ ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ নামের চলচ্চিত্রের নেপথ্য কাহিনীতে লিপিবদ্ধ রয়েছে। এ ছবিতে তিনি উত্তমের বিপরীতে অভিনয় করেন ভাগ্যক্রমে। কারণ তখনকার সুপারহিট নায়িকা মালা সিংকে ছবির পরিচালক নির্মল দে নিতে চেয়েছিলেন।

কিন্তু সেইসময় মালা সিংয়ের কোনও শিডিউল-ডেট ফাঁকা পাওয়া যাচ্ছিল না। অগত্যা বাধ্য হয়েই ছবিতে নেওয়া হয় নবাগতা সুচিত্রা সেনকে। আগের দুটি ছবির ব্যর্থতা মুছে সুচিত্রার প্রথম আকাশচুম্বী বক্স অফিস সাফল্য ধরা দেয়।

তারপর আর থামতে হয়নি তাকে। ক্রমে ক্রমে বাংলার রূপালি পর্দার জগতে উচ্চতর স্থায়ী আসনে অধিষ্ঠিত হন তিনি। অর্জন করে অসামান্য দর্শকপ্রিয়তা ও বহু পুরস্কার।

১৯৭৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তার শেষ ছবি ‘প্রণয় পাশা’। সেই বছরই দীর্ঘ ২৫ বছর অভিনয়ের পর ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্র থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন সুচিত্রা সেন।

চলচ্চিত্রের পর্দার মতোই অবসর জীবনেও তিনি ছিলেন রহস্যঘেরা এবং মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রস্থলে। লোকচক্ষুর আড়ালে নিজেকে ক্রমশ আত্মগোপনে রাখেন তিনি জীবনের অবশিষ্ট বছরগুলো। ১৯৭৮ সালের পর থেকে ২০১৪ সালে মৃত্যুর শেষদিন অবধি আর কেউ সুচিত্রা সেনকে প্রকাশ্যে দেখতে পাননি।

পর্দার রহস্যময়ী লাজুকতার সঙ্গে অবসরের সুদীর্ঘ ৩৬ বছর নিজেকে লোকচক্ষুর আড়ালে একান্ত নিভৃতে গুটিয়ে রাখায় সুচিত্রা সেন হয়েছেন আরও রহস্যময়ী। জনবিচ্ছিন্নতার পরেও চলচ্চিত্র দর্শক তাকে বিস্মৃত হয় নি। স্মৃতির হীরন্ময় মহানায়িকার মতো মনে রেখেছে তার অপূর্ব অভিনয় ও জীবনের রহস্যময়তাকে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর