করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ভারতে চলছে ২১ দিনের লকডাউন। এ অবস্থায় হিন্দি চলচ্চিত্র শিল্পের কর্মীরা বেকার হয়ে পড়েছেন। দুর্দিনে তাদের পাশে দাঁড়ালেন সুপারস্টার সালমান খান। বলিউডে দৈনিক আয়ের ভিত্তিতে কাজ করা ২৫ হাজার চলচ্চিত্রকর্মীকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার অঙ্গীকার করলেন তিনি।
ফেডারেশন অব ওয়েস্টার্ন ইন্ডিয়ান সিনে এমপ্লয়িজ (এফডব্লিউআইসিই) এ তথ্য জানিয়েছে। সংগঠনটির সভাপতি বি এন তিওয়ারি জানান, নিজের দাতব্য প্রতিষ্ঠান বিয়িং হিউম্যান ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে চলচ্চিত্রকর্মীদের সহায়তা করতে এগিয়ে এসেছেন ৫৪ বছর বয়সী এই তারকা।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) এফডব্লিউআইসিই সভাপতি বলেন, ‘সালমানের বিয়িং হিউম্যান ফাউন্ডেশন তিন দিন আগে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাদের জানিয়েছি, সংগঠনের প্রায় পাঁচ লাখ শ্রমিকের মধ্যে ২৫ হাজার জনের আর্থিক সহায়তা খুব প্রয়োজন। বিয়িং হিউম্যান ফাউন্ডেশন এই কর্মীদের তত্ত্বাবধান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তারা এই ২৫ হাজার কর্মীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিবরণ চেয়েছে। প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা জমা করে দেবে এই দাতব্য প্রতিষ্ঠান।’
বাকি ৪ লাখ ৭৫ হাজার চলচ্চিত্রকর্মী একমাস কাজ না থাকলেও চলতে সক্ষম, এমনটাই দাবি এফডব্লিউআইসিই সভাপতির। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে সব শ্রমিকের জন্য রেশন প্যাকেটের বিশাল মজুদ রয়েছে। তবে দুর্ভাগ্যক্রমে লকডাউনের কারণে তারা এটি সংগ্রহ করতে পারছে না। কীভাবে তাদের কাছে আমরা পৌঁছাতে পারি তা নিয়ে ভাবছি।’
একজন চলচ্চিত্রকর্মী মাসে ১৫ হাজার টাকা রোজগার করেন। কিন্তু এখন সেই পথ বন্ধ। তাই এফডব্লিউআইসিই বেশ কয়েকজন অভিনেতা ও নির্মাতাকে চিঠি দিয়ে ও মেসেজ পাঠিয়ে সহযোগিতা চেয়েছে। তাদের মধ্যে সালমানই প্রথম সাড়া দিলেন। সংগঠনটির দাবি, গত দুই বছরে চিকিৎসাসহ যেকোনও প্রয়োজনের সময় সব মিলিয়ে দেড় কোটি রুপি দিয়েছেন তিনি।
সালমানের বাবা সেলিম খান জানান, তারা যে অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন সেখানকার মানুষ ও নিরাপত্তা কর্মীদের খাবার সরবরাহ করে এই পরিবার। লকডাউনের ঘোষণা আসার পরই কর্মচারীদের বেতন আগাম দিয়েছেন তারা। এছাড়া নিজের স্টুডিওকর্মীদের জন্য রেশন ব্যবস্থা করেছেন বলিউডের ‘ভাইজান’।
এদিকে ভোজপুরি অভিনেতা ও রাজনীতিবিদ রবি কিষাণ ভোজপুরি চলচ্চিত্র শিল্পের টেকনিশিয়ানদের সহায়তা করতে এগিয়ে এসেছেন। দুস্থ কর্মীদের রেশন অনুদান দিচ্ছেন তিনি।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির করোনাভাইরাস ত্রাণ তহবিলে ২৫ কোটি রুপি দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন অক্ষয় কুমার। এ প্রজন্মের অভিনেতা কার্তিক আরিয়ান ১ কোটি রুপি ও বরুণ ধাওয়ান দিয়েছেন ৫৫ লাখ রুপি।এর আগে নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পীরা দিনমজুর চলচ্চিত্রকর্মীদের সহায়তা প্রদানের উদ্যোগকে সমর্থন দেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নির্মাতা করণ জোহর, নিতেশ তিওয়ারি, এআর মুরুগাদোস অভিনেত্রী তাপসী পান্নু, কিয়ারা আদভানি, ভূমি পেডনেকর, রাকুল প্রীত সিং, দিয়া মির্জা, অভিনেতা সঞ্জয় দত্ত, আয়ুষ্মান খুরানা, সিদ্ধার্থ মালহোত্রা।
আই স্ট্যান্ড উইথ হিউম্যানিটি শীর্ষক উদ্যোগটি নিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর হিউম্যান ভ্যালুস, আর্ট অব লিভিং ফাউন্ডেশন এবং ইন্ডিয়ান ফিল্ম অ্যান্ড টিভি ইন্ডাস্ট্রি। দৈনিক আয়ের ভিত্তিতে কাজ করা চলচ্চিত্রকর্মীদের ১০ দিনের প্রয়োজনীয় খাবার সরবরাহ করা হবে এর মাধ্যমে।
গত ১৮ মার্চ প্রডিউচার্স গিল্ড অব ইন্ডিয়া ঘোষণা দেয়, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত চলচ্চিত্র, টেলিভিশন ও ওয়েব সিরিজ কর্মীদের জন্য ত্রাণ তহবিল গঠন করা হয়েছে। অনুরাগ কাশ্যাপ, সুধীর মিশ্র, বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানের মতো নির্মাতারা লকডাউনের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের পর এই উদ্যোগ নেয় ভারতের প্রযোজক সমিতি।