প্রথমবারের মতো দেশের কোনো ওয়েব সিরিজ নিয়ে এক সঙ্গে এতো ‘আলোচনা-সমালোচনা’। ২০১৩ সালে মেয়ে ঐশীর হাতে পুলিশ দম্পতি হত্যাকাণ্ডের গল্পে নির্মিত সেই ওয়েব সিরিজের নাম ‘আগস্ট ১৪’। আলোচনার কারণ থ্রিলার গল্পের ভালো নির্মাণ আর সমালোচনার কারণ সংলাপে গালি ও অন্তরঙ্গ দৃশ্য। এই আলোচনা-সমালোচনার ব্যবচ্ছেদ করতে বার্তা২৪.কম কথা বলেছে সিরিজটির পরিচালক শিহাব শাহীনের সঙ্গে। তাকে মোবাইলে ধরেছেন ইসমাইল উদ্দীন সাকিব।
বার্তা২৪.কম: ‘আগস্ট ১৪’ নিয়ে এতো হাইপ ক্রিয়েট হলো কেন?
শিহাব শাহীন: এটি সেই সময়ের আলোড়িত ও চমকপ্রদ ঘটনা ছিল। এই ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই ওয়েব সিরিজটি নির্মিত। যারা সেই সময়কার ঘটনা জানেন, পুরো দেশ থমকে গিয়েছিল এবং এই সম্পর্কে মানুষের আরও জানার আগ্রহ আছে। এটার নির্মাণশৈলীতে সবাই আন্তরিকভাবে কাজ করেছে যা পর্দায় দেখা গেছে। প্রত্যেকের অভিনয় দর্শকের মন ছুঁয়ে গেছে বিশেষ করে তাসনুভা তিশা, শতাব্দী ওয়াদুদ, মুনিরা মিঠু, শহিদুজ্জামান সেলিম, মাসুম বাশার সহ আরও অনেকেই। এই তিন চারটি কারণে মূলত দর্শকের ভেতর ব্যাপক একটি আগ্রহ তৈরি হয়েছে বলে মনে করি।
বার্তা২৪.কম: কাদের জন্য নির্মাণ করেছিলেন এই ক্রাইম থ্রিলার...
শিহাব শাহীন: প্রাথমিক টার্গেট অডিয়েন্স দুই ধরণের বাবা-মা এবং দ্বিতীয় হচ্ছে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ; এবং সে সময় যাদের এই ঘটনা দেখার অভিজ্ঞতা আছে তাদের। আমি অসংখ্য মানুষের মন্তব্য দেখেছি তারা অভিভাবক। এমন মন্তব্যও দেখেছি তারা সিরিজটি দেখার পর তাদের বাচ্চাদের জড়িয়ে ধরে আদর করছেন এবং ৩-৪ দিন ভেবেছেন তারা কিভাবে তাদের বাচ্চাদের লালনপালন করবেন, কিভাবে বড় করবেন। এটা নিয়ে ভাবনা চিন্তা শুরু হয়েছে। আমি চাইবো আরও অসংখ্য অভিভাবক এটা দেখুক।
বার্তা২৪.কম: তাহলে অভিভাবক নিয়ে এই ওয়েব সিরিজটি দেখা সম্ভব বলে আপনি মনে করেন?
শিহাব শাহীন: না, এটি ১৮+ একটি কনটেন্ট। পরিবারের সাথে দেখা যাবে না। অভিভাবকরা আলাদাভাবে দেখবে, সন্তানরা যখন বুঝবে, যখন প্রাপ্ত বয়স্ক হবে তখন তারা দেখবে। এটি পেইড কনটেন্ট হিসেবে জেনে বুঝে দেখেন। এটি ইউটিউবে আসার মতো ফ্রি কনটেন্ট না। এটাতে পরিষ্কারভাবে বলা আছে যারা দেখবে তারা স্বেচ্ছাই, সজ্ঞানে টাকা দিয়ে দেখবে।
বার্তা২৪.কম: এই ধরণের পেইড প্লাটফর্মে অযাচিত ভাবে যৌন সুড়সুড়ি দিয়ে দর্শক টানার অভিযোগ বেশ পুরাতন। ‘আগস্ট ১৪’ নিয়েও এমন অভিযোগও আছে।
শিহাব শাহীন: একটা আর্ট ওয়ার্ক বা ফিকশনাল ওয়ার্ক মানুষের মনে কিভাবে কাজ করে সেটা আগে বুঝতে হবে। কিন্তু আমি যেমন মন্তব্য পাচ্ছি অসংখ্য অভিভাবক বলছে এটা দেখা উচিত। খুন, মাদকাসক্তি, যৌনতা আছে; তবে চরিত্রের সঠিক প্রকৃতি, আচরণগত, মেজাজ-গত ধারাটা বুঝার জন্য অনেক দৃশ্যের প্রয়োজন হয়। যে চরিত্র যেরকম সে চরিত্রের উপযুক্ত দৃশ্যই থাকবে। এ কারণেই এটি ১৮+ কন্টেন্ট। এভাবে এটি তৈরি করা। এটি দেখে অভিভাবকেরা সন্তানের প্রতি দায়িত্ববান হবেন বলে মন্তব্য করেছেন; এটাই এ কাজের স্বার্থকতা।
বার্তা২৪.কম: ওয়েব সিরিজের ব্যাপারে অনেক পরিচালক নৈতিকতা নিয়ে কিছু প্রশ্ন তুলেছেন...
শিহাব শাহীন: আমাদের নীতি-নৈতিকতায় অনেক রকম মত আছে; ধর্মীয় রীতি-নীতি, সংস্কৃতি-গত নীতি, মূল্য-বোধগত নীতি। এটি অবশ্যই সাবজেক্টিব একটি বিষয়, ব্যক্তির উপর নির্ভর করে। একজন সাধারণ মানুষের সাথে কবির নীতি, চিত্রকরের সাথে খেলোয়াড়ের নীতি এক নাও হতে পারে। ব্যাক্তির ইচ্ছা, রুচি, শিক্ষা, মনন সবকিছুর উপর নৈতিকতা নির্ভর করছে। এই ওয়েব সিরিজে নীতির কথা আসছেই না কারণ এটি পেইড কন্টেন্ট। এটি সবার জন্য উন্মুক্ত নয়। যে টাকা দিয়ে নিজের ইচ্ছায় দেখবেন তার কাছে এটি নৈতিকতা বিরোধী নয় নিশ্চয়।
বার্তা২৪.কম: তাহলে শিল্পের নৈতিকতা আসলে কারা ঠিক করে দিবেন?
শিহাব শাহীন: এটি কে ঠিক করে দেবেন তা নিয়ে যুগেযুগে আমাদের সব সমাজে আলোচনা হয়েছে। এখানে কিছু ক্ষমতাধর মানুষ বলেন তারা ঠিক করে দিবেন, তাদের মতো চলতে হবে। শিল্প বা সাহিত্য নির্বাচনের নৈতিকতা কেউ নির্ধারণ করে দিতে পারবে না। সবসময় ক্ষমতাসীন ব্যক্তিরা চেষ্টা করেন তাদের নীতিটাকেই সবাই গ্রহণ করুক। আসলে নীতি নির্ধারণের ক্ষমতা তাদের নেই। আমাদের ধর্মের নীতি আছে, সাহিত্যের নীতি আছে; সেটা আচরণগত ভাবে যুগে যুগে প্রত্যেক সমাজে মিথস্ক্রিয়া ও আলাপ-আলোচনার ভেতর নির্ধারিত হয়। কারো একটি জিনিস ভাল লাগবে কারো লাগবে না। কেউ পক্ষে বলবে,কেউ বিপক্ষে; এই মিথস্ক্রিয়া দিয়েই নীতি নির্ধারিত হয়।