দীর্ঘ পরিযান পাখি ইউরেশীয় সিঁথিহাঁস

, ফিচার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট | 2023-09-01 08:27:09

বাংলাদেশের হাওর-বিলগুলোতে ইতিমধ্যে এসে পড়েছে পরিযায়ী হাঁসেরা। সব হাঁসেদের মধ্যে একটি বিশেষ হাঁসকে চিনে নিতে তেমন একটা অসুবিধে হয় না। কারণ হাঁসটির মাথা রাঙানো রয়েছে হালকা ইটহলুদ রঙ দিয়ে। সেই হাঁসটির নাম ইউরেশীয় সিঁথিহাঁস বা লালশির। বাগেরহাটে এটিকে লালমাথা হাঁসও বলে থাকে। এদের ইংরেজি নাম ইউরেশিয়ান উইগন এবং বৈজ্ঞানিক নাম আনাস পেনিলোপ। এরা মাঝারি আকৃতির হাঁসদের মধ্যে বড় এবং মিঠাপানি জলাভূমির অস্থায়ী বাসিন্দার।

পাখি পর্যবেক্ষক ওমর শাহাদাত বলেন, শীতের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য উত্তরের হিমপ্রধান অঞ্চলগুলো থেকে অনেক প্রজাতির পাখিই পরিযায়ী হয়। পাখিদের মধ্যে সাধারণত তিন ধরনের পরিযান দেখা যায়। এগুলো হলো স্বল্পদৈর্ঘ্য পরিযান, মধ্যদৈর্ঘ্য পরিযান এবং দীর্ঘদৈর্ঘ্য পরিযান। সিঁথিহাঁস দীর্ঘদৈর্ঘ্য পরিযানের পাখি। এরা হাজার হাজার মাইল দূরত্বের পথ অনায়াসে উড়ে যেতে পারে।

শীতে বাংলাদেশে পরিযায়ী হিসেবে যে প্রায় ত্রিশ প্রজাতির হাঁস আসে। তারমধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় দেখা যায় এই ইউরেশীয় সিঁথিহাঁসকে। এরা বেশ দৃষ্টিনন্দন। ছেলেহাঁস পাখির মাথায় হলুদ রঙের সিঁথি আছে বলেই এরূপ নামকরণের কারণ। মিশ্র হাঁসের ঝাক থেকে সহজেই আলাদা করা যায় এদের। শীতকালে বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের উপকূলসহ নদী ও হাওরে দেখা যায় বলে জানান তিনি।

শারীরিক গঠন, খাদ্যাভ্যাস এবং প্রাপ্তি সম্পর্কে ওমর শাহাদাত বলেন, ‘সিঁথিহাঁসের দৈর্ঘ্য ৫০ সেমি এবং ওজন ৬৭০ গ্রাম। এরা ধূসর নীলচে ঠোঁটওয়ালা মাঝারি আকারের হাঁস। ছেলে ও মেয়েহাঁসের চেহারায় পার্থক্য রয়েছে। প্রজননকালে ছেলে হাঁসের স্পষ্ট হলুদ কপাল। মাথা তামেটে। বগল ধূসর এবং লেজের তলা কালো। লালচে বাদামি মেয়ে হাঁসের বগল পিতাভ। পেট সাদা এবং খয়রি ডানা। এরা সাধারণত অগভীর জলাশয় যেমন হ্রদ, নদী, হাওড়, বিলে বিচরণ করে। খাদ্যতালিকায় রয়েছে ভেজা ঘাস, জলজ উদ্ভিদ, পোকা-মাকড়, লার্ভা ইত্যাদি। ইউরোপ হয়ে আফ্রিকার উত্তরাংশ ও এশিয়া পর্যন্ত এদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি। এশিয়া মহাদেশে পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভূটান, চীন ও ফিলিপাইনে পাওয়া যায়। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।’

‘প্রতিবছর শীতে একটুখানি খাদ্য ও আবাসের জন্য হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে এরা আমাদের জলাশয়গুলোতে আসে। এসে বরং উপকারই করে আমাদের। এদের বিষ্ঠা জমির উবর্বতা বাড়ায়। পানিতে সাঁতার কাটার ফলে মাছের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। তবে সমাজের কিছু অসাধু, লোভী গুটিকয়েক লোকের কারণে এদের সংখ্যা দিন-দিন কমে যাচ্ছে। জাল, বিষটোপ প্রভৃতি দিয়ে নির্মমভাবে শিকার করা হচ্ছে তাদের। এটি খুবই দুঃখজনক। এর বিরুদ্ধে আমাদের সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে বলে জানান পাখি-আলোকচিত্রী ওমর শাহাদাত।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর