'ভ্যাকসিন পলিটিক্স', ভারত-ব্রাজিল দ্বন্দ্ব, টিকাকরণে বৈষম্য!

, ফিচার

আবুল খায়ের মোহাম্মাদ, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 01:33:21

বৈশ্বিক করোনা মহামারি কেবল রোগতত্ত্বে সীমাবদ্ধ নেই, 'ভ্যাকসিন পলিটিক্স'- এর জেরে বিশ্বজুড়ে টিকাকরণে বিশাল অসমতাও তৈরি করেছে। বহু দরিদ্র দেশ এখনও টিকা দেয়া শুরু করতে পারেনি। এ যাবত বিশ্বজুড়ে কমপক্ষে ৩০০ কোটি ডোজ করোনা ভাইরাসের টিকা দেয়া হলেও সেগুলো পেয়েছে ধনী, উন্নত দেশগুলো। এদিকে ভ্যাকসিন নিয়ে ভারত ও ব্রাজিলের মধ্যে চলছে তুমুল সঙ্কট। উভয় দেশই বিশ্বের শীর্ষ করোনা কবলিত। আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের তথ্যের পাশাপাশি তুঙ্গে উঠা 'ভ্যাকসিন পলিটিক্স'-এর খবরও প্রাধান্য পাচ্ছে।

ভারত-ব্রাজিল দ্বন্দ্ব

অস্বচ্ছতার অভিযোগ এনে কোভ্যাক্সিনের চুক্তি বাতিল করেছে ব্রাজিল। ভারতের সঙ্গে ৩২৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তি বাতিলের কথা ঘোষণা করেছে লাতিন আমেরিকার দেশটি। চুক্তি ঘিরে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে বলেও খবরে প্রকাশ। ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরেই পালটা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ভারত বায়োটেকও। সংবাদমাধ্যমে একটি বিবৃতি দিয়ে সংস্থা জানিয়েছে, ২০ লাখ ডোজ কোভ্যাক্সিন কেনার কথা হলেও কোনও অগ্রিম অর্থ মেলেনি। ব্রাজিল সরকারের তরফে চুক্তি করলেও অগ্রিম টাকা দেওয়া হয়নি। চুক্তি অনুযায়ী আট মাস ধরে ধীরে ধীরে এই ভ্যাকসিনের ডোজ পাঠানোর কথা ছিল ব্রাজিলে। একইসঙ্গে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী প্রতিটি ডোজের মূল্য ১৫ থেকে ২০ মার্কিন ডলার। কিন্তু, ব্রাজিলের জন্য কোভ্যাক্সিনের ডোজে ছাড় দিয়ে সেই মূল্য ধার্য হয়েছিল ৫ মার্কিন ডলার। ভ্যাকসিন সঙ্কটের জেরে ব্রাজিলে বিরোধীরা প্রেসিডেন্ট বোলসোনারোর ইমপিচমেন্টের দাবিতে সরব হয়েছেন। ইতিমধ্যেই দেশের সুপ্রিম কোর্টে প্রেসিডেন্ট জেয়ার বোলসোনারোর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। বিরোধীদের দাবি, আদালত এই বিষয়ে তদন্ত করে প্রকৃত সত্য সামনে আনুক। তাদের আরও দাবি, বোলসোনারো সবকিছু জানার পরেও কেন এই বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি তাও তদন্ত করে দেখা হোক।

টিকাকরণে বৈষম্য

বিশ্বে টিকাকরণে চীন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র, এই তিনটি দেশ শীর্ষে অবস্থান করছে। মধ্যপ্রাচ্যে সর্বোচ্চ টিকা দেয়ার শীর্ষ তিনটি দেশ হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও ইসরাইল। এর পরে রয়েছে চিলি, ব্রিটেন, মঙ্গোলিয়া, উরুগুয়ে, হাঙ্গেরি, কাতার। এসব দেশ তাদের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক অর্থাৎ শতকরা ৪৬ ভাগ থেকে ৫৪ ভাগ পর্যন্ত মানুষকে পুরোপুরি টিকা দিয়েছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে অর্ধেক জনসংখ্যাকে দেয়া হয়েছে ৩৫ কোটি ৭০ লাখ টিকা। সেখানে পুরোপুরি টিকা দেয়া হয়েছে শতকরা প্রায় ৩২ ভাগ মানুষকে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সবচেয়ে ছোট সদস্য মাল্টায় প্রতি ১০ জনের মধ্যে সাতজনকে পুরোপুরি টিকা দিয়েছে। বড় দেশগুলোর মধ্যে জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন তাদের এক তৃতীয়াংশ মানুষকে পুরোপুরি টিকা দিতে পেরেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভ্যাক্স উদ্যোগে দরিদ্র দেশগুলোকে টিকা দেয়ার চেষ্টা চলছে। বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলোতে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে মাত্র একজনকে টিকা দেয়া হলেও ধনী দেশগুলোতে এই হার ৭৯। তাঞ্জানিয়া, বুরুন্ডি, ইরিত্রিয়া, হাইতি এবং উত্তর কোরিয়া এখনও টিকাদান কর্মসূচি শুরুই করেনি। কোনও কোনও দেশ টাকা পরিশোধ করেও পাচ্ছেনা ভ্যাকসিন।

শীর্ষ ১০ ভ্যাকসিন

ভ্যাকসিন উৎপাদন ও বিপণনে একচেটিয়াভাবে এগিয়ে রয়েছে উন্নত দেশগুলো। তাদের কব্জায় রয়েছে ভ্যাকসিনের মূল সরবরাহ প্রবাহ। এখন পর্যন্ত সারা বিশ্বে আনুমানিক ৩০০  কোটি ডোজ করোনা ভাইরাসের টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে দশটি প্রতিষ্ঠান।  সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়েছে এস্ট্রাজেনেকার টিকা, যদিও এই টিকা নিয়ে কিছু বিতর্ক রয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা। পরবর্তীতে সিনোফার্ম এবং মডার্নার অবস্থান। রাশিয়ার স্পুটনিক-ভি, জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা, সিনোভ্যাক টিকার অবস্থার তালিকার শেষ দিকে। তবে, বিশ্বের টিকা উৎপাদন ও সরবরাহে অচীরেই পালাবদলের সম্ভাবনার কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। অতিদ্রুত টিকা উৎপাদন সক্ষমতায় চীন শীর্ষ অবস্থান দখল করবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর