ঠেলা-জাল দিয়ে ছোট যমুনায় মাছ ধরার শৈশব!

  • শহিদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

প্রচণ্ড রোদে নদীর বুক চিরে আঁকাবাঁকা রেখা প্রমাণ করে এই নদীর বুকে লুকানো আছে এক গভীর কান্না! একসময় এ নদীতে বড় বড় নৌকা চলতো। সে এখন কেবল পানি শূন্যতায় ভুগছে! এ নদীটির নাম- ছোট যমুনা।

‘ছোট যমুনা’ নামটা যেমন মধুর, তেমনি একসময় জনপদের পর জনপদ গড়ে তুলেছে এই ছোট নদী যমুনাই। ভরা বর্ষায় যমুনা যেমনি যৌবন ফিরে পায়, তেমনি খরায় পানি শুকিয়ে করুণ অবস্থায় পরিণত হয়। এসময় ছোট মাছের দেখা মেলে না বললেই চলে।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিন শনিবার (১১ মে) দুপুরে নওগাঁ সদর উপজেলার শিবপুর এলাকায় দেখা মেলে কয়েকটি শিশুর, যারা ঠেলা-জাল দিয়ে মাছ ধরতে এসেছে ছোট নদী যমুনাতে। কেউ কেউ হাড়ি এনেছে মাছ ধরে রাখার জন্য। আবার কেউ বালতি এনেছে। কেউ আবার নদীতে নেমে সাঁতারও কাটতে শুরু করেছে!

ছোট যমুনায় মাছ ধরার শৈশব এখন, ছবি- বার্তা২৪.কম

এদের মধ্যে সবার বড় শাহিন (১২)। এবার ৭ম শ্রেণিতে উঠেছে সে। এতদিন পানি ছিল না বলে নদীতে আসেনি সে।

ক্ষুদে শিক্ষার্থী শাহিন জানায়, আমার আব্বু আমাকে এই ঠেলা-জাল বানিয়ে দিয়েছে। এতদিন নদীতে পানি ছিল না। তাই, মাছ ধরতে আসিনি। নতুন পানিতে মাছগুলো কাছে চলে এসে কচুরিপানায় লুকিয়ে থাকে তখন এগুলোর নিচে ঠেলা-জাল দিলে ছোট ছোট মাছ পাওয়া যায়।

শাহিন বলে চলে, চিংড়ি, পুঁটি, গুচি, বেলেমাছ, চাঁন্দা মাছ, বাইন মাছসহ অনেক মাছ জালে ওঠে আর এগুলো বাড়ি নিয়ে গেলে আম্মু রান্না করে দেয়। আমি মজা করে খাই।

আরেক ক্ষুদে শিক্ষার্থী হানজালা (১১) বলে, শাহিন আমাদেরই বন্ধু। ওর বাড়ির পাশেই আমার বাড়ি। ও মাছ ধরতে এসেছে জেনে আমিও গোসল করতে আসলাম। আমিও ওকে মাছ ধরতে সাহায্য করছি। কচুরিপানার নিচে ও যখন ঠেলা-জাল দিচ্ছে, তখন কচুরিপানাগুলো সরিয়ে ফেলছি।

ক্ষুদে শিক্ষার্থী রাসেল, আদমসহ আরো অনেকেই জানালো, দুপুর বেলা রোজ এই নদীতেই গোসল করতে আসে সব বন্ধুরা মিলে। তাদেরও ঠেলা-জাল আছে কিন্তু আজকে নিয়ে আসেনি। শাহিন নিয়ে আসবে বলে তারা আনেনি। তাকেই সবাই মিলে মাছ ধরে দিচ্ছে।

কথা হয়, ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সঙ্গে। তারা বার্তা২৪.কমকে জানান, এদের এখন শৈশব চলছে। এখনই এদের দুরন্তপনার সময়। সে কারণে আটকে রাখা যায় না। নদীতে যেহেতু পানি সামান্য বেড়েছে, সে জন্য এদের সঙ্গে করে নিয়ে এসেছি। আমরা একদিকে বসে থাকি আর ওদের দিকে নজর রাখি, যাতে কোনো দুর্ঘটনাটা না ঘটে।

ছোট থাকতে আমরাও ঠিক এভাবেই মাছ ধরতাম! সে সব কথা মনে পড়লে অনেক মধুর স্মৃতি ভেসে ওঠে। মনে হয়, সেই শৈশবে যদি ফের ফিরে যেতে পারতাম!