প্রাকৃতিক ‘লালচোখ’ রয়েছে যে শিকারী পাখির

, ফিচার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট | 2023-08-31 21:20:55

লালচোখ! ভয়ংকর এক জিনিস! এর সাথে আমাদের পরিচয় কার্টুন থেকে শুরু করে চলচ্চিত্রের কৃত্রিম মেকাপময় সজ্জিত কোনো ব্যক্তির প্রেক্ষাপটের সঙ্গে। কার্টুন এবং চলচ্চিত্রের মেকআপে এমন লালচোখগুলো অধিক সুসজ্জিত হয়ে প্রকাশ পেয়ে আসছে। আর কিছু কিছু পরিবেশের সঙ্গে কখনো কখনো লালচোখ ফুটে উঠতে দেখা যায়। সেগুলো হলো- অসুস্থ ব্যক্তি, অধিক মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের জীবনযাপনে সহজেই লালচোখের দর্শন মেলে।

যাই হোক, সেসবই কৃত্রিম প্রেক্ষাপটের সংজ্ঞাভুক্ত। এবার আসা যাক প্রাকৃতিক অবস্থায় প্রকাশ পাওয়া লালচোখের সন্ধানে। প্রাণীকূলের মাঝেও লালচোখের অবস্থান অনেকটাই বিরল। প্রকৃতিগতভাবে তৈরি হওয়া এই লালচোখ প্রাণীটির শরীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখে।

শুধু এ শিকারী পাখিটির দূরদৃষ্টিসম্পন্ন লালচোখই নয়, রয়েছে তার সুতীক্ষ্ম নখ। যার দ্বারা সে প্রকৃতিতে তার খাদ্যসম্ভার জুগিয়ে অনাদিকাল ধরে টিকে আছে। এই লালচোখময় পাখিটির নাম ‘কাটুয়া চিল’।

দিগন্তের মাঝে হঠাৎ ছোঁ মেরে শিকার ধরার দৃশ্য দারুণ মুগ্ধতার জন্ম দেয়। উড়ন্ত শিকারি-পাখিরা এই অতর্কিত হামলার মধ্য দিয়েই নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে জন্ম-জন্মান্তর ধরে।

নিরীহ প্রাণীটি বুঝে উঠার আগেই সে পুরোপুরি জব্দ হয়ে যায় শিকারীর তীক্ষ্ম নকের বন্ধনে। জীববৈচিত্র্য আর প্রকৃতিরাজ্যে এ শিকার কৌশল শত শতাব্দীর দুর্বলের প্রতি সবলের নিপুন অনুশীলন।

‘কাটুয়া-চিল’ এক প্রকারের দারুণ শিকারী পাখি। এদের ‘ধলা চিল’, ‘ধান চিল’ বা ‘সাদা চিল’ কিংবা ‘কাপাসি চিল’ নামেও বলা হয়। এর ইংরেজি নাম Black-winged Kite এবং বৈজ্ঞানিক নাম Elanus caeruleus।

শক্তিশালী নখের অধিকারী কাটুয়া-চিল। ছবি- আবু বকর সিদ্দিক


 

প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক বলেন, কাটুয়া-চিল মাঝারি আকারের শিকারী পাখি। এদের আঙ্গুল খুব শক্তিশালী এবং এগুলো সাদা পালকে ঢাকা থাকে। গাছ, খুঁটি, বা বৈদ্যুতিক তারে বসে কিংবা বাতাসে উড়ে উড়ে এরা আহার খোঁজে এবং আঙ্গুলের শক্তিশালী লম্বা নক দিয়ে শিকার ধরে খায়। এরা আমাদের দেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি।

এদের আকার-আকৃতি সম্পর্কে তিনি বলেন, এদের দৈর্ঘ্য ৩৫ সেমি এবং ওজন ১৬৪ গ্রাম। আকারে এরা কাকের ছোট। দেহ ধূসর। গলা, বুক ও পেট সাদাটে। কাঁধে রয়েছে বড় পট্টি। সুচালো ডানা এবং চঞ্চু কালো। এদের চোখ রক্তলাল। অপ্রাপ্ত বয়স্ক পাখির পিঠ কিছু বাদামি-ধূসর এবং ডানায় রয়েছে অস্পষ্ট কালো পট্টি।

কাটুয়া-চিলের খাবার এবং প্রাপ্তিস্থান সম্পর্কে ইনাম আল হক বলেন, ঝিঁঝিঁ পোকা, পঙ্গপাল, ঘাস ফড়িং ও অন্য পোকা, টিকটিকি, ধান ক্ষেতের ইঁদুর, মুষিক, ব্যাঙ, সাপ, পাখির ছানা ও অসুস্থ পাখি রয়েছে এদের খাদ্য-তালিকায়। আমাদের দেশের প্রায় সব জায়গাতেই এদের মাঝে মাঝে দেখা যায়। অফ্রিকা, আরবের দক্ষিণাঞ্চল, ভারত, চীন, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কাসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

সারাবছরই এদের প্রজননকাল। ছোট গাছের পাতা, মূল ও ঘাস বিছিয়ে এবড়থেবড় মাচার বাসায় এরা ডিম পাড়ে। ৩টি থেকে ৬টি সাদা রঙের ডিম পাড়ে এবং ছেলেপাখি একা ছানার যত্ন নেয় বলে জানান পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক।

এ সম্পর্কিত আরও খবর