আফগান আনারকলি

, ফিচার

ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 01:10:01

মুঘল ইতিহাসের রহস্যময়ী রাজনর্তকী আনারকলি নন, যাকে রুপালি পর্দায় দেখা গিয়েছিল কে. আসিফ (করিমউদ্দিন আসিফ) নির্মিত স্মরণকালের ব্যবসা সফল ও জাঁকজমকপূর্ণ চলচ্চিত্রে মধুবালার অপূর্ব অভিনয় শৈলীতে। তিনি এক আফগান আনারকলি বা আনার/ডালিম ফুল, নাম আনারকলি কাউর হোনিয়ার।

মুঘল আনারকলির মতো তিনি নৃত্য, গীত ও শিল্প পটিয়সী না হলেও রাজনীতিতে পারঙ্গম। ছিলেন তালেবানদের হাতে সদ্য-ক্ষমতাচ্যুৎ ও পলাতক প্রেসিডেন্ট আশরাফ গণির আমলে আফগানিস্তান পার্লামেন্টের সদস্য ছিলেন। কাবুলে তালেবানের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর স্বদেশ ছেড়ে তিনিও অনেকের মতো পালিয়ে ভারতে চলে আসেন।

স্বেচ্ছা-নির্বাসনে এসে আনারকলি ঠাঁই পেয়েছেন ভারতের রাজধানী দিল্লিতে। দেশ ত্যাগের প্রাথমিক দখল কাটিয়েই তিনি সরব হয়েছেন। আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে সরকারি, বেসরকারি মহল, নাগরিক সমাজ ও মিডিয়ার মুখোমুখি হচ্ছেন তিনি প্রতিদিনই। জোরালো ভাষায় আফগান শিখ এবং হিন্দুদের আফগানিস্তান থেকে উদ্ধারের জন্য ভারত সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছেন তিনি। প্রকাশ্যে ও স্পষ্ট ভাষায় বলছেন, 'তালেবান যা বলে এবং যা করে, তার মধ্যে বিস্তর ফারাক।'

প্রশ্ন উঠেছে যে, একজন জনপ্রতিনিধি হয়েও কেন তিনি দেশের ক্রান্তিকালে আফগানিস্তান ছাড়লেন? অনেকেই সরাসরি এই প্রশ্নে করেছেন আনারকলিকে। জবাবে তিনি সাফ বলেছেন, ‘সারা বিশ্ব জানে কী ঘটছে আফগানিস্তানে। সেখানকার পরিস্থিতি খুব দ্রুত বদলে গিয়েছে। যা আশা করা যায়নি। সকলে অসহায়, ভয়ে আছে। দেশ আমাদের মা। তাকে ছেড়েই আসতে হয়েছে। অন্য কোনও উপায় ছিল না।’

আফগান সাংসদ এবং শিখ ধর্মাবলম্বী আনারকলি ভারতে এলেও প্রচুর শিখ পরিবার এখনও সেদেশের নানা গুরুদ্বারে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের জন্য কিছু করতে না পারায় চিন্তিত তিনি। তাই ভারত সরকারের কাছে তিনি অনুরোধ করেছেন আফগানিস্তানে আটকে পড়া হিন্দু এবং শিখ ধর্মাবলম্বীদের উদ্ধার করে ভারতে ফিরিয়ে আনার জন্য।

আনারকলির মতে, 'তালেবানকে বিশ্বাস করা যায় না। তারা যা বলে আর যা করে, তার মধ্য অনেক ফারাক রয়েছে। মানবাধিকার এবং মহিলাদের অধিকার সেখানে লঙ্ঘিত হচ্ছে।’ তিনি মনে করেন, 'গত ২০ বছরে আফগানিস্তানের যতটা উন্নতি হয়েছিল তা ব্যাহত হবে। তালেবানি শাসনের জেরে ১০০ বছর পিছিয়ে যাবে আফগানিস্তান।'

তবে আফগান পরিস্থিতি বদলাবে বলে আশা রাখছেন আনারকলি। পরিস্থিতি বদলালে দেশে ফিরতে পারবেন বলে প্রত্যাশা করছেন তিনি। প্রায়-পাঁচশ বছর আগে এক আনারকলি ইরান/পশ্চিম এশিয়া থেকে এসে মুঘল সম্রাট আকবরের দরবারে নৃত্যগীতে মাতিয়ে ছিলেন। শাহজাদা সেলিম তথা সম্রাট জাহাঙ্গীরের সঙ্গে করুণ প্রেমে মজে সেই আনারকলি লাভ করেছিলেন বিয়োগান্ত পরিণতি। কথিত আছে যে, তাঁকে জীবন্ত কবর দেওয়া হয়েছিল। যে কবর আর আনারকলি বাজার রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর শহরের কেন্দ্রস্থলে সচিবালয়ের পাশে। সম্রাট জাহাঙ্গীর পরে যেখানে সুরম্য সমাধিসৌধ নির্মাণ করে সেখানে তাঁকে আবার দেখতে পাওয়ার প্রত্যাশা জানিয়ে মর্মস্পর্শী কবিতা উৎকীর্ণ করেছেন।

এই আফগান আনারকলির ভাগ্যের গতি শেষ পর্যন্ত তাঁকে কোথায় নিয়ে যাবে, কেউ জানে না। আফগানিস্তানের সংঘাতময় অবস্থার শেষে আনারকলি কাউর হোনিয়ার স্বদেশে ফিরতে পারবেন, নাকি দেশান্তরী হয়েই ভারতে কাটবে তাঁর বাকী জীবন, এই প্রশ্নের উত্তরও আপাতত সবার কাছেই অজানা। 

এ সম্পর্কিত আরও খবর