সেন্টমার্টিন যেন প্রকৃতির স্বর্গরাজ্য

, ফিচার

সুলতান মাহমুদ আরিফ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 07:13:53

খোলামেলা আকাশ আর বিস্তৃত বালুকাময় সমুদ্রে ঘেরা বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। যার সৌন্দর্য বর্ণনা কখনও চাক্ষুষ না দেখে বুঝানো সম্ভব না। যার চারপাশে সাগর আর সমুদ্র এবং উপরের নীলাকাশ মিলে মিশে একাকার হয়ে আছে, এই যেন স্বর্গীয় সুখের এক নিয়ামক।

এ দ্বীপের যেদিকে চোখ যায় শুধু নীল আর নীল ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না। আকাশ আর সমুদ্রের নীল এখানে মিলেমিশে একাকার। উপরে নীল আকাশ আর নীচে সমুদ্রের নীল ঢেউ মনকে ছুঁয়ে যায় নিমিষেই। যেন প্রকৃতির সাথে মিতালি গড়ে তোলার এটাই একমাত্র জায়গা। এখানকার আবহাওয়া যেন পরম বন্ধু। মন খারাপের সময় একান্ত প্রিয় হয়ে উঠে এই দ্বীপের মিষ্টি শীতল বাতাস, যা মুহুর্তে হৃদয়, মন আর পুরো দেহজুড়ে নিয়ে আসে স্বস্তির স্বর্গীয় পরশ।

প্রকৃতির সাথে মিতালি গড়ে তোলার এটাই একমাত্র জায়গা সেন্টমার্টিন।

এখানকার সাগরতীরে গেলেই জুড়িয়ে যায় মন। দেখা মিলে হরেক রকম ঝিনুক, কাঁকড়া, গাঙচিলসহ নানাজাতের পাখিও, যা এই দ্বীপের সৌন্দর্যের মাঝে যেন মুক্তা। এই দ্বীপের পানি স্বচ্ছ হওয়ায় এখানে জাহাজ থেকে নামলেই পর্যটকদের আকৃষ্ট করে তোলে জেলি ফিশসহ নানান রকম সামুদ্রিক মাছ,কচ্ছপ যা এই দ্বীপের অন্যতম আকর্ষণ। সমুদ্রের পাথরের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে থাকে মাছ, তবে স্বচ্ছ পানির কারনে এই লুকিয়ে থাকা মাছও ধরা খেতে হয় বড়শিতে আর ছোট জালে।

এছাড়া জেলেরা গভীর সমুদ্রে গিয়েও ধরেন মাছ। আব্বাস নামক এক মাছ বিক্রেতার (জেলে) সাথে কথা বললে, তিনি জানান, আমি প্রতিদিন সকালে সমুদ্রে মাছ ধরতে বের হয়। আমার ছোট একটা বাচ্চা আছে, ও বড়শি দিয়ে মাছ ধরে।আমরা সুন্দরী মাছ, চাঁদা মাছ, কোরাল মাছ, বাগদা চিংড়ি এসব মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করি।

এ দ্বীপের ৬০ শতাংশের বেশি মানুষ মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।

রাহুল নামের আরেকজন জেলে জানান, আমার পেশা হল মাছ ধরা আর বিক্রি করা। তবে প্রতিদিন ভালো মাছ পাওয়া যায় না। এছাড়া আবহাওয়া খারাপ হলে আমি মাছ ধরতে যায় না।

জানা যায়, এ দ্বীপের ৬০ শতাংশের বেশি মানুষ মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এছাড়া এখানকার মানুষদের খুবই, সহজ সরল মনে হচ্ছে। তবে, এরা খুবই অতিথিপরায়ণ।

এই দ্বীপে প্রায় ১২ হাজার মানুষের বসবাস।

এই দ্বীপে প্রায় ১২ হাজার মানুষের বসবাস। এখানে জীবন-জীবিকা মাছ ধরা ও শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণের পাশাপাশি পর্যটন সেবার ওপর নির্ভরশীল তারা। প্রতি বছর পর্যটন মৌসুমে দ্বীপটি কর্মচঞ্চল থাকে।

তখন এই দ্বীপের মানুষের মূল আকর্ষণ থাকে পর্যটকদের ঘিরে। পর্যটকদের থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়েই তারা বাকি মৌসুমে স্বচ্ছল থাকে, তাই পর্যটকদের সাথে থাকে তাদের দারুণ আতিথিয়তা।

সেন্টমার্টিনকে বলা হয় ‘দক্ষিণের স্বর্গ’। এই দ্বীপ হল ভ্রমণ পিপাসুদের অমিয় সুদা। পর্যটকদের প্রথম সারির পছন্দের নাম বলা যায় সেন্টমার্টিনকে।

এই দ্বীপের সারি সারি নারিকেল গাছ যেন জানান দেয় পর্যটকদের ছায়ায় রাখাতে কতটা প্রস্তুত তারা। এছাড়া ঝাঁকে ঝাঁকে গাঙচীলের কাজই যেন সেই নাফ নদ থেকে অভ্যর্থনা জানিয়ে যাওয়া।তারা ডানা মেলে তাদের ভাষায় জানান দেয় "স্বাগত"। পাখা মেলে দোল খেয়ে খেয়ে সঙ্গ দেয় গাঙচীল। এই যেন অতিথিয়তার এক দারণ অভ্যর্থনা।

এছাড়া সাগর পাড়ে বসে বাতাসের সাথে মিতালি যেন ছুঁয়ে যায় মন, প্রশান্তি আনে দেহে। মুহুর্তে রাগ বয়ে যাওয়া গাত্র যেন হয়ে যায় সাড়ে তিন হাতের এক স্বর্গের রাজ্য।

তাইতো বলা যায়, এটি কেবল সমুদ্র নয়। এতে আছে প্রকৃতির অসাধারণ লীলা। সেন্টমার্টিন কেবল ভ্রমণ নয়, এটা হওয়া উচিত রহস্যের সন্ধান।নির্জনতার রহস্য, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রহস্য আর সাগর তলের বিস্ময়কর রহস্য তাকাশ।

এখানকার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই দ্বীপের মানুষের সবচেয়ে প্রিয় খাবার ডাব। এখানকার প্রতিটি হোটেলে ডাবের পানি বিক্রি করতে দেখা গেছে।

এই দ্বীপের নাম নারিকেল জিঞ্জিরা এমনি এমনি হয়নি। এখানকার ডাবের পানি যেমন মিষ্টি তেমনি সুস্বাদু। সেন্টমার্টিন আসলে ডাবের পানি মিস করে এমন লোক খুব কম।

অপরদিকে এ দ্বীপকে মাছের দ্বীপ বললেও ভুল হবে না। সকল প্রকার মাছ রয়েছে এখানে। হোটেলগুলোতে মাছ ভাজা যেন জিভে জল নিয়ে আসার উপক্রম। এখানে সুন্দরী পোয়া, ইলিশ, রূপচাঁদা,কালাচাঁদা, কোরালসহ সবগুলো মাছের স্বাদ যেন এক কথায় অসাধারণ।

শুঁটকি কারো প্রিয় নয় এটি বলার সুযোগ খুব কম। এখানে শুঁটকি পাগলদের জন্য এক অসাধারণ জায়গা। এখানকার হোটেলগুলোতেও বিক্রি করে কয়েক রকমের শুঁটকির ভর্তা। এরমধ্যে লইট্টা, ছুড়ি, রূপচাঁদা, কাচকি শুঁটকি যেন জিভে লেগে থাকার মত স্বাদ।

তাইতো বলা চলে, খোলা-মেলা বালুকাময় সমুদ্র সৈকত আর সমুদ্রের বিরামহীন গর্জন যেন নীল রঙের রাজ্যে পরিণত করেছে এই সেন্টমার্টিনকে।

জানা যায়, সেন্টমার্টিন প্রবাল দ্বীপে প্রায় ৬৬ প্রজাতির প্রবাল, ১৮৭ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ১৫৩ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল, ১৫৭ প্রজাতির গুপ্তজীবী উদ্ভিদ, ২৪০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, ৪ প্রজাতির উভচর ও ১২০ প্রজাতির পাখি পাওয়া যায়। এছাড়াও রয়েছে ১৯ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী।

এতসব সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়েই তো বাংলা সাহিত্যের নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ অবকাশ যাপনের জন্য পছন্দের শীর্ষে রেখেছিলেন সেন্টমার্টিনকে। এই পৃথিবার ছোট এই স্বর্গের মর্ম কেউ না এলে বুঝার কোন উপায় নেই, এলেই তবে বুঝতে পারবে হুমায়ূন আহমেদ কেন শীর্ষে রেখেছেন এই দ্বীপকে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর