প্রাকৃতিক জলাভূমির বিরল পরিযায়ী মেটে রাজহাঁস 

, ফিচার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট | 2023-09-01 16:17:37

 

হাঁসেদের ভিড়ে সে একাই ছিল। তাকে ঠিক নিঃসঙ্গ বলা যাবে না। তবে তার প্রজাতির আর সাথী কেউ ছিল না। অন্যদের সাথে সেও বেশ মানিয়ে গিয়েছিল। ওদের সাথে বিলের পানিতে একত্রে হাঁটাহাটি। একত্রে ডানা মেলা দেয়া। কিংবা একত্রে ভয়ে আঁতকে উঠা।

আরো দু-তিন প্রজাতির হাঁস ছিল ওই হাঁসেদের ভিড়ে। কিন্তু চোখ সহজে গিয়ে পড়ে যায় হাঁসেদের মধ্যে সবচেয়ে বড় হাঁসটির দিকে। অপেক্ষাকৃত বড় এই হাঁসটির নাম ‘মেটে রাজহাঁস’।

পাখি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে দূরবীক্ষণযন্ত্রে চোখ রাখতেই এই বড় আকৃতির হাঁসটি যত্রের ভেতর দিয়ে দৃষ্টিসীমায় প্রবেশ করে। নিমিশেই জন্ম দেয় দারুণ এক ভালোলাগার। ‘চুক-চুক, চুক-চুক’ করে কাঁদায় মুখগুজে খাবার সংগ্রহের ব্যস্ত সময় পার করছিল সে।

পাখি পর্যবেক্ষক সাঈদ বিন জামাল বার্তাকে বলেন, এই হাঁসটি আকারে গৃহপালিত রাজহাঁসের মত। একে ‘ধুসর রাজহাঁস’ও বলা হয়। এর ইংরেজি নাম গ্রেল্যাগ হংস এবং বৈজ্ঞানিক নাম আনসির আনসির। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এই প্রজাতি সংরক্ষিত।

 অন্য হাঁসেদের দলে প্রায়ই দেখা যায় মেটে রাজহাঁস-কে। ছবি: সাঈদ বিন জামাল

এর আকৃতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, মেটে রাজহাঁসের আকৃতি সাধারণতঃ ৭৫ থেকে ৯০ সেন্টিমিটার। মাথা ও গলা হালকা ছাই রঙের। দেহতল ধূসর এবং তলপেট সাদা। ধুসর বর্ণের পেটের মধ্যে কালো কালো দাগ রয়েছে। উড়ে যাবার সময় তাদের সামনের দিকে ফ্যাকাসে দেখা যায়।

খাদ্য ও প্রাপ্তিস্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হাওর-বিল ও উপকূলীয় ঘাস, জলজ আগাছা, ভাসমান উদ্ভিদ, শামুক প্রভৃতি এদের খাদ্য। শীতে সিলেট ও ঢাকা বিভাগের বড় বিল জলাশয়ে এবং চট্টগ্রাম ও বরিশালের উপকূলীয় অঞ্চলে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশে বেশ বিরল। যদিও এখনো বিপন্নতার তালিকায় আসেনি।

জীববৈচিত্র্য গবেষণা ও সংরক্ষণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘আইইউসিএন’ এর তালিকায় এ প্রজাতিগুলোকে বাংলাদেশে ‌‘ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ’ বলে ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানান বন্যপ্রাণী বিষয়ক আলোকচিত্রী সাঈদ বিন জামাল।

বন্যপ্রাণী গবেষক এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্যপ্রাণী প্রজনন ও সংরক্ষণ কেন্দ্র এর অধ্যাপক আ ন ম আমিনুর রহমান বলেন, ধুসর রাজহাঁস মূলত শীতপ্রধান দেশ আইসল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, জার্মানি, পোল্যান্ড, রাশিয়া (সাইবেরিয়া) এবং মধ্য এশিয়া প্রভৃতি দেশের বাসিন্দা। শীতকালে চট্টগ্রাম ও বলিশাল বিভাগের বিভিন্ন চরাঞ্চল ও উপকূলীয় এলাকায় এবং সিলেট বিভাগের হাওর-বিলে দেখা মেলে। হঠাৎ হঠাৎ ঢাকা বিভাগের কোলো কোনো জলাশয়ে এদের দেখ যায়।

অন্য সব হাঁসেদের মতো এরাও পানির নিচে ঠোঁট-মুখগুজে খাদ্য অনুসন্ধান করে। এ হাঁসগুলো মূলত দিনে খাদ্য সংগ্রহে ব্যস্ত থাকে। তবে ভরা পূর্ণিমায় এদের সক্রিয় থাকতেও দেখা যায় বলে জানান অধ্যাপক আ ন ম আমিনুর রহমান।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর