থাইল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্বের শহর ট্রাট

, ফিচার

মাজেদুল নয়ন; স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 03:00:30

ব্যাংককের সূবর্নভূম এয়ারপোর্ট এলাকা থেকে বিকেল ২টা নাগাদ আমরা রওনা করি ট্রাটের উদ্দেশ্যে। থাইল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্বের প্রদেশ ট্রাট। প্রাদেশিক শহরও একই নামে। মাত্র ২ হাজার ৮১৯ বর্গ কিলোমিটারের প্রদেশটিতে জনসংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার। আর এই শহরের সঙ্গেই লাগোয়া কম্বোডিয়া বর্ডার।

কম্বোডিয়ার কার্ডামম পর্বতের উপত্যকায় গালফ অব থাইল্যান্ডের তীরের প্রদেশ এই ট্রাট। সবুজ পর্যটন বা ইকো ট্যুরজিমের জন্য খ্যাত এই প্রদেশে রয়েছে ৫০ টিরও বেশি দ্বীপ। যার মধ্যে খো চাং, খো খুড, খো মাক অন্যতম।

ব্যাংকক থেকে তিনশ কিলোমিটার দূরে হলেও গত ১৯ ডিসেম্বর, রোববার আমাদের যেতে সময় লাগল মাত্র ৩ ঘন্টার মত। এশিয়ান হাইওয়ে ধরে দূর্দান্ত গতিতে ছুটে চলেছে আমাদের গাড়ি। কখনো ১০০ বা কখনো ১২০ কি.মি. প্রতি ঘন্টায়। শেষ বিকেলে পশ্চিমের সূর্য যেন ফাঁকি দিয়ে আসছিলো রাবার বাগান আর ধানের ক্ষেতকে।

উচু নিচু পাহাড়ি টিলার উপর দিয়ে চলে যাওয়া পথ যেন শেষ বিকেলের রোদকে আলিঙ্গন করে আছে। সেখানে পথের দু পাশে আরো রয়েছে আখ আর ভুট্টার ক্ষেত। এখানকার চাষের জমিগুলো যেন প্রান্তহীন। আমাদের নদীর মতো। অপর পার দেখা যায় না সহজে।

রায়ং আর চান্তানাবুড়ি, এই দুটো প্রদেশ পেরিয়ে যেতে হয় ট্রাটে। তবে এখানে চারদিকেই শুধু সবুজ চোখে পড়বে। ভূ-বৈচিত্রের তেমন কোন পার্থক্য নেই প্রদেশ থেকে প্রদেশে। সন্ধ্যা ৬টার দিকে আমরা পৌছালাম ট্রাট শহরে। এই শহর ততক্ষনে প্রায় ঘুমাতে গিয়েছে।


শহরের কয়েকটি খাবারের দোকান আর সেভেন ইলেভেনের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চেইনশপ ছাড়া সবই বন্ধ। প্রাদেশিক শহর হলেও অফিসগুলো ৫টা পরে আর খোলা থাকে না। বড় বাজারগুলোও সব ৬টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। আর রাত আটটার পর খাবারের দোকানগুলোও সব বন্ধ হয়ে যায়।

পুরো শহরে ৪ তলার উপর কোন ভবন চোখে পড়বে না। ট্রাট হাসপাতাল হয়তো ৫ তলা হবে। এছাড়াও মানুষের থাকার বাড়িগুলো বেশিরভাগই ২ তলা বিশিষ্ঠ। আমরা যখন ট্রাটে পৌছালাম তখন সেখানে একটি মেলা চলছে। মেলার পাশেই একটি খাবারের দোকানে বসলাম আমরা। এই শহরের খাবারের দোকানে শূকরের মাংসের আধিপত্য রয়েছে। দোকানটিতে কুমিরের মাংসও পাওয়া যায়। পে আমাকে জিজ্ঞাসা করল, খাব কিনা? সাহস হল না।


এখানে হাতে গোনা কয়েকটি থাকার হোটেল রয়েছে। সেগুলোতে প্রয়োজনীয় সুবিধা পাওয়া গেলেও খুব বিলাশবহুল নয়। পরের দিন সোমবার আমরা শহরে আবার ঘুরতে বের হলাম। শহরের সবচেয়ে ব্যস্ত এলাকা, মানে যেখানে ব্যাংক বা বানিজ্যিক এলাকা, সেখানে হাতে গোনা ২০ বা ৩০ জনের মতো মানুষ চোখে পড়েছে। তবে স্কুলগুলো বেশ বড় এলাকা নিয়ে তৈরী হয়েছে। স্কুলগুলোতে শিশুরা সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত অবস্থান করতে পারে। সেখানে সকালের নাস্তা থেকে শুরু করে বিকেলের ঘুম আর খেলাধুলাও রয়েছে।

সোমবার বলে সরকারি অফিসের কর্মকর্তারা খাকি পোশাক পড়ে আছেন। এটা থাইল্যান্ডের অন্যতম বৈশিষ্ঠ যে বিভিন্ন পেশার জন্য পৃথক পৃথক ইউনিফর্ম রয়েছে। যেমন এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও সাদা কাল ইউনিফর্ম পড়ে ক্লাস করতে হয়। ট্রাটে জনসংখ্যা কম বলে প্রায় সকলেই সকলের পরিচিত। এক পথে দ্বিতীয়বার হেঁটে গেলেই আপনাকে মানুষ মনে রাখতে পারবে।


এই শহরে কোন গণপরিবহন নেই। নেই কোন ট্যাক্সি বা টমটম। পে’র কাছে কারন জানতে চাইলে জানালো, এখানে সকলেরই ব্যক্তিগত গাড়ি রয়েছে বা অন্তত মোটর সাইকেল রয়েছে। এতোটুকু বহন করার মতো আর্থিক সামর্থ্য এখানকার সব পরিবারের রয়েছে।

সব মিলিয়ে ৫ থেকে ৬ বর্গ কিলোমিটারের শহর যেন। একটু বেরিয়ে পড়লেই চারপাশে সবুজের হাতছানি। এখানে মানুষের মূল আয় রাবার বাগান থেকেই আর রয়েছে পর্যটন। এই শহরটি কম্বোডিয়া আর থাইল্যান্ডের ট্রান্সপোর্টেশন হাব হিসেবেও কাজ করে। এখানে অভিবাসী শ্রমিকদের মধ্যে একটি বড় অংশ আসে কম্বোডিয়া থেকে।

বাসে ব্যাংকক থেকে ৪ থেকে ৫ ঘন্টার ভ্রমন ট্রাটে। এরপর খো চাং দ্বীপে যেতে চাইলে ফেরিতে ৪৫ মিনিটের মতো যাত্রা। এছাড়াও অন্যান্য দ্বীপেও যাওয়া যায়। এখানে কাল বালুর সৈকত যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে সাদা বালুর সৈকতও। আর মু খোহ চাং ন্যাশনাল পার্কে ঘুরে বেড়াতে সময় লেগে যায় পুরো একটি দিন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর