গেনটিং হাইল্যান্ড: পাহাড়ের কোলে মেঘের স্পর্শ

, ফিচার

মানসুরা চামেলী, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 18:24:31

কুয়ালালামপুর থেকে, মালয়েশিয়া: ঘন সবুজ আচ্ছাদিত জঙ্গল। পাহাড়ের চূড়ায় নানা আকার ও বর্ণের দালান, যেন আকাশ ছুঁয়েছে অট্টালিকাগুলো। কখনও ঘন সবুজ জঙ্গলের ভেতর দিয়ে কখনও বা মেঘে সরিয়ে ছুটে চলেছে ক্যাবল কার। সবুজে আচ্ছাদিত পাহাড়ে সৌন্দর্যের রোমাঞ্চে চোখ জুড়িয়ে যায়। তবে ছবির মতো সুন্দর এ দৃশ্য দেখতে নিচে তাকালে ভয় ধরিয়ে দেয়।

‘গেনটিং হাইল্যান্ড’ মালয়েশিয়ার পার্বত্য অঞ্চল পাহাংএর দর্শনীয় স্থান, যেখানে মেলবন্ধন ঘটেছে প্রকৃতি ও প্রযুক্তির। সেই মেলবন্ধনের সৌন্দর্যের স্বাদ নিতে প্রতিদিন পৃথিবীর হাজারো ভ্রমণপিপাসু মানুষ আসেন গেনটিং হাইল্যান্ডে।

মালয়েশিয়ায় ঘুরতে আসা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান গেনটিং হাইল্যান্ড। কুয়ালালামপুর শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বের দর্শনীয় এ স্থানে ক্যাবল কারে করে প্রকৃতির কোল বেয়ে বাণিজ্যিক প্রযুক্তির সফল জগতে প্রবেশ করা যায়।

স্থানীয় প্রবাসীদের মতে, নভেম্বরে মালয়েশিয়ার প্রকৃতিতে এই বৃষ্টি এই রোদ। তবে শুক্রবার (১৬ নভেম্বর) গেনটিং হাইল্যান্ডে যখন রওনা হই তখন ঝকঝকে রোদ। বৃষ্টিস্নাত গাছপালা রোদের ছোঁয়া পেয়ে শান্ত-স্নিগ্ধ রূপ নিয়েছে।

ইউএস বাংলার আমন্ত্রণে বাংলাদেশ থেকে ৫০ জন সাংবাদিকদের একটি দল মালয়েশিয়া ভ্রমণে এসেছেন। তারই অংশ হিসেবে ‘গেনটিং হাইল্যান্ড’ ভ্রমণ। ট্যুর গাইড আগে থেকে ক্যাবল কারের টিকিট কেটে রেখেছিল। স্বচ্ছ কাচ দিয়ে মোড়ানো মেরুন রঙের ক্যাবল কার। ছয় জন করে বসা যায়। বিস্তৃত পাহাড়ের ওপর দিয়ে নিচে সমতল ভূমি ও রেইন ট্রি, তার ওপর দিয়ে ছুটে চলেছে ক্যাবল কার। দুলে ‍দুলে রোমাঞ্চকর এক যাত্রা। দুর্গম এ পাহাড়ি পথ ধরে যেতে যেতে পাওয়া যায় সাদা মেঘের অভ্যর্থনা।

ক্যাবল কার থামার তিনটি স্টেশন। আমাদের ক্যাবল কারটি স্কাই স্টেশনে থামে। এই স্টেশনটি একদম পাহাড়ের চূঁড়ায়। নামার পর হিমেল বাতাসে প্রশান্তির ছোঁয়া, জুড়িয়ে যায় প্রাণ। এরপর প্রবেশ থিম পার্কে। পার্কটি দেখে চোখ কপালে উঠবে, কারণ প্রায় ছয় হাজার ফুট উঁচু এই পাহাড়ে কী নেই? শপিং মল, রেস্তোঁরা, ফুড কোর্ট, বিভিন্ন রাইড। পার্কের গেম জোনে চলছে সব বয়সীদের ভিডিও গেম খেলা, ম্যাজিক শো। এমনকি সেখানে মিলবে ফাইভ স্টার হোটেলেও।

রয়েছে বিশাল হল রুম জুড়ে গেনটিং হাইল্যান্ডের বিখ্যাত ক্যাসিনো। যেখানে বিত্তবানরা মেতে উঠেন জুয়া খেলায়। ক্যাসিনো ঘুরে দেখা গেল, তরুণ-যুবা সব বয়সী মানুষ মগ্ন তাদের খেলা নিয়ে। ছবি তোলা নিষিদ্ধ হওয়ার পরও নিরাপত্তা রক্ষীকে ফাঁকি দিয়ে দুই একটি ছুবি তুলেই নিলাম।

মোটামুটি সব দেখা শেষে ফেরার পালা। আড়াই ঘণ্টার ব্যবধানে এর মধ্যেই কুয়াশা জেঁকে বসেছে। যাত্রার শুরুতে প্রকৃতিতে যে রোদ ছিল তার ছিঁটেফোঁটাও নেই ফেরার সময়। চারিদিকে ঘণ কুয়াশার আচ্ছাদন, সবুজ বনজঙ্গল তাতে ঢাকা পড়েছে। এমনকি সামনে বা পেছনের ক্যাবল কারগুলো আবছা দেখা যায়।

পাহাড়ের এ স্বপ্নপুরি ২৪ ঘণ্টা পর্যটকদের আনাগোনায় মুখরিত থাকে। মালয়েশিয়ার তপ্ত আবহাওয়া থেকে ক্লান্ত ভ্রমণপ্রিয় মানুষ ছুটে আসে এখানে প্রশান্তির আশায়। স্বল্প খরচে নৈসর্গিক সৌন্দর্যে কাটানো সময়টুকু দারুন উপভোগ করেন তারা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর