ডালে ডালে পুঞ্জিত আম্রমুকুল

, ফিচার

সজিব তুষার, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 00:03:01

'ফাল্গুনে বিকশিত কাঞ্চন ফুল,

ডালে ডালে পুঞ্জিত আম্রমুকুল।

চঞ্চল মৌমাছি গুঞ্জরি গায়,

বেণুবনে মর্মরে দক্ষিণবায়'।

ফাল্গুন ঢোকার আগেই প্রকৃতির আকাশ বাতাশ ছেয়ে ভরে উঠছে আম্র মুকুলের মৌ মৌ গন্ধ। যেন রবি ঠাকুর তার কাব্যের শুরু এখানে বসেই। গাছে গাছে মেটে সোনালী আমের মুকুলে সূর্যের আলো পড়ে প্রসারিত করেছে এক অপরূপ আভা। রাজধানীতে বসে কাঞ্চন ফুলের সৌন্দর্য না পেলেও ছোট ছোট পাড়া মহল্লার আম গাছ গুলোর এই মুকুল প্রশান্তিতে ভরে তুলছে দর্শনার্থীদের।

শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বাসাবো এলাকায় সরেজমিনে সহকর্মীর ক্যামেরায় ধরা পড়ে আম্র মুকুলের এই চমৎকার চিত্র।


সাধারণত ফাল্গুল মাস ক্যালেন্ডারে ঢোকার সময়েই দেশের গ্রামে গ্রামে দেখা যায় এমন চিত্র। তবে রাজধানীর মত ইট পাথরের শহরে এমন পরিবেশ খুঁজে পাওয়া ভার। দেশের রাজশাহী, বরিশাল, নাটোর, চাপাইনবাবগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যিক ভাবেও আম চাষ করে থাকেন চাষিরা। সারাবছর আম্র কাননের সেবা শুশ্রুষার পাশা পাশি ছোট ছোট কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন আম চাষিরা। তবে বছরের বারো মাসের মধ্যে ফাল্গুন আর বসন্তেই তাদের বেশি ঝোঁক।

মুকুলের সমারোহ সামলে রাখা রকেট সায়েন্স থেকে কম কিছু নয়। গাছেরও অসুখ বিসুখ হয়। রৌদ্র তাপ মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে মুকুল শুকিয়ে যাওয়ার মতোও ঘটনা ঘটে। এছাড়া ঝড় বৃষ্টি কিংবা দমকা হাওয়ায় অনেক বাগান উজাড় হয়ে যাওয়ার ঘটনাও আমরা দেখেছি পত্র পত্রিকায়। এসবের সঠিক ব্যবস্থাপনা নিলে সহজেই এসব সংকট উতরানো যায়। বাগান পরিচর্যায় তাই চাষিরা পরামর্শ নিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞদের থেকে।

সবুজ পাতার ফাঁকে লাল লাল ডাটায় সোনালী এসব মুকুলকে ঘিরে বেঁচে আছেন অনেকে। শিশু মুকুল অল্প অল্প পথ পাড়ি দিয়ে একদিন পূর্ণ যৌবন পায়। লাল হলুদ আর কথিত 'টসটসে' (মোটা তাজা) রসালো আম দেখে কার না ইচ্ছে জাগে না এবার পরখ করে দেখতে।

উপমহাদেশের সবচাইতে সুস্বাদু এ ফল সাধারণত কাঁচা অবস্থায় এর রং সবুজ এবং পাকা অবস্থায় হলুদ রং আবার কিছু সময় লাল হয়ে থাকে। দেশে এবং প্রতিবেশি ভারতে যে প্রজাতির আম চাষ হয় তার বৈজ্ঞানিক নাম Mangifera indica


সবার পছন্দের তালিকায় থাকা কমন একটি ফল স্বাদে গন্ধে ভরা এই পাকা কাঁচা আম। জুস থেকে শুরু করে আচার, মোরব্বা। আবার খাট্টা (টক তরকারি) কিংবা মাংসেও শোভা বর্ধন করে এই আম। সংরক্ষণেও জুড়ি নেই আমের।

তবে সব কিছু ছাপিয়ে স্বাদ আর গন্ধে মাতাল করা আমের রয়েছে শক্তিশালী পুষ্টিগুণ। পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের অনেকেই ভিটামিন ‘সি’র ভাণ্ডার বলে অভিহিত করেন আমকে। এছাড়াও চোখের রোগ, চুলপড়া, খসখসে চামড়া, হজমের সমস্যা দূর করে এই রুপসীনী। আমে আছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ‘এ'। তার সঙ্গে আছে ফাইবার যা কমিয়ে আনতে সাহায্য করে সিরাম কোলেস্টরলের মাত্রা। বিশেষ করে রক্তে কম ঘনত্বের লিপোপ্রটিনসহ উপস্থিত খারাপ কোলেস্টরল মাত্রা কমাতেও সাহায্য করে। ত্বকের যত্নেও মহতী ভূমিকা পালন করে থাকে পাকা পাকা আম।

এছাড়া প্রচুর পরিমাণে খনিজ লবণ এবং ভিটামিন-বি৬, পটাসিয়াম, কপার লৌহ এবং এমাইনো এ্যাসিড, প্রো ভিতামিন এ বেটা ক্যারোটিন, লুশিয়েন জিলাইক এ্যাসিড, আলফা ক্যারোটিন, পলি পিথানল কিউরেচিন কাম্ফারল, ক্যফিক এ্যাসিডসহ আরও অনেক বিশেষ উপাদান রয়েছে যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।

দেশের জাতীয় গাছের মর্যাদা পাওয়া এ আম গাছে সারাবিশ্বে প্রায় ৩৫ প্রজাতির মত আম ফলে। ফজলি, ল্যাংড়া, খিরসা, অরুনা, আম্রপালি, মিশ্রিদানা ইত্যাদি অন্যতম। এছাড়া নিলাম্বরী, তোতাপূরী, কারাবাউ, কেঊই সাউই, গোপাল খাস, কেন্ট, কালীভোগ, কাচামিঠা, আলফানসো, বারোমাসি, সূর্যপূরী, পাহুতান, ত্রিফলা, মল্লিকা, সুবর্নরেখা, গোপালভোগ ইত্যাদি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর