দিনাজপুরের 'গোর এ শহীদ' ঈদগাহ

, ফিচার

মো. তাহমিদ হাসান | 2023-09-01 08:45:15

 

দিনাজপুর থেকে: নিজস্ব ঐতিহ্য বহন করতে কে না ভালোবাসে! ঠিক তেমনি 'গোর এ শহীদ' বড় ময়দানের ঐতিহ্য দিনাজপুরকে বিশ্বের মধ্যে ঐতিহ্যমন্ডলিত করে তুলেছে। ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যের জনপ্রিয় পত্রিকা 'The Sun' এ 'KNEEL IN FAITH' প্রতিবেদনে দিল্লি, কোলকাতা, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, জর্ডান ফিলিপাইন এইসব দেশের পাশাপাশি দিনাজপুরের 'গোরে এ শহীদ' বড় ময়দানের কথা গুরুত্ব পেয়েছে। উক্ত পত্রিকার প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, " According to the organisers' claim, over 600,000 devotees participated, making it South Asia's biggest Eid-ul-Fitr event" এই ঈদগাঁ ফলে বাংলাদেশের নাম বিশ্বের দরবারে উঁচু হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দিনাজপুরের 'গোর এ শহীদ' বড় ময়দানকে কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ও সুপ্রাচীন শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে সঙ্গে আলোচনা করা হয়। দেশের বৃহৎ ঈদের জামাতের কারণে যা সবার নজর কাড়ে। সর্বশেষ ২০১৯ সালে ষষ্ঠ বারের মতো প্রায় ৬ লক্ষ মুসুল্লির উপস্থিতির মাধ্যমে সুষ্ঠভাবে ঈদের নামায অনুষ্ঠিত হয় দিনাজপুরে।

১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকে এ মাঠে ঈদের নামায অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। কিন্তু সেই সময় কোনো স্থায়ী মিনারের নির্মাণ করা হয়নি।বর্তমান ঈদগাহটির পরিকল্পনা ও অর্থায়ন করেছেন দিনাজপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম। ২০১৫ সালে জেলা প্রশাসন উক্ত মিনারের কাজ শুরু করেন এবং ২০১৭ সালে মিনার কাজ সম্পূর্ণ হয়। সে বছরেই প্রথম প্রায় ৪ লক্ষ মুসল্লির অংশগ্রহণে বৃহৎ ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

মুঘল স্থাপত্যরীতিতে তৈরি করা হয়েছে উপমহাদেশে এই বৃহৎ ঈদগাহ ময়দান। ৫২ গম্বুজবিশিষ্ট এই ঈদগাহে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে দুটি মিনার, যাদের প্রতিটির উচ্চতা ৬০ ফুট এবং মূল মেহরাবের উচ্চতা ৫৬ ফুট। মাঝে দুইটি গেট রয়েছে, যা ৪৭ ফুট করে চওড়া। এতে খিলান আছে ৩২টি। প্রতিটি গম্বুজে রয়েছে বৈদ্যুতিক সংযোগ। সন্ধ্যার পর থেকেই মিনারে নান্দনিক আলো জ্বালানো হয়। প্রায় ৩ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এই ঈদগাহ  ইসলামী ভাবগাম্ভীর্যে সমৃদ্ধ ইরাক, কুয়েত, ভারত, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের স্থাপত্যের আদলে নির্মাণ করা হয়েছে।

করোনার তীব্রতার কারণে গত দুই বছর সীমিত থাকার পর এইবার দিনাজপুর বড় ময়দানে বিরাট আকারে ঈদ জামাত আয়োজনের শেষপ্রস্তুতি নিচ্ছে সংশ্লিষ্টরা। ঈদের জামাতে ৬-৭ লাখ মানুষের সমাগম হবে বলে আশা আয়োজকদের। উল্লেখ্য, এবারের আয়োজনে ১০ লাখ মুসুল্লির নামাজ আদায়ের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। মুসুল্লিদের ধারণা ধর্মীয়ভাবে একত্রে জামাতে অংশগ্রহণ করলে সওয়াব বেশি পাওয়া যায়।

ঈদগাহে জামাতে অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়ে মুসলমানদের মধ্যে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধি পায় আর ইসলামী সংস্কৃতির সৌভ্রাতৃত্ব বিকশিত হয়। ঈদগাঁহে অনেক মানুষ একত্রিত হয়ে  ঐক্য ও সংহতির মাধ্যমে সকলের কল্যাণের দোয়া করেন এবং সামাজিক শান্তির পথকে প্রশস্ত করেন।

মো. তাহমিদ হাসান, শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর