দক্ষিণ এশিয়া: বন্ধু তুমি, শত্রু তুমি

, ফিচার

কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 18:54:45

দ্রুত পরিবর্তমান বিশ্বে কে বন্ধু আর কে শত্রু, ঠাহর করা মুস্কিল হয়ে দাঁড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। একদার বন্ধু দেশ হয়ে গেছে শত্রু। শত্রু পরিণত হচ্ছে নিকট-বন্ধুতে। আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিন্যাসের এমত বিন্যাস ঢেউ তুলেছে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলেও।

আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে চলে আসছে দক্ষিণ এশিয়া। দক্ষিণ এশিয়া বা দক্ষিণাঞ্চলীয় এশিয়া বলতে এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত ভারতীয় উপমহাদেশ ও তার সন্নিকটস্থ অঞ্চলকে বোঝায়। এর পশ্চিমে পশ্চিম এশিয়া বা মধ্যপ্রাচ্য, উত্তরে মধ্য এশিয়া, আর পূর্বে পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া মহাদেশ। দক্ষিণ এশিয়া, যা ভারতীয় উপমহাদেশ (অথবা "উপমহাদেশ") নামেও পরিচিত, উত্তরে সীমানা হিমালয়, দক্ষিণে ভারতীয় মহাসাগর এবং পূর্ব ও পশ্চিমের গঙ্গা ও সিন্ধু নদী উপত্যকায় অবস্থিত ত্রিভূসমভূমি। ১.৭৫ বিলিয়ন মানুষের বসবাস এই অঞ্চলে, যা এক বিরাট বাজার এবং ভূরাজনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত কৌশলপূর্ণ অঞ্চল।

দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতকে কেন্দ্র করে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং পাকিস্তানকে কেন্দ্র করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল মুখোমুখি অবস্থানে। অতীতের সেই চিত্র আর নেই। এখন ভারত-মার্কিন মৈত্রীকে পাল্লা দিচ্ছে পাকিস্তান-চীন জোট। রাশিয়া রয়েছে চীনের কাছাকাছি। প্রকৃত বাস্তবতা হলো এই যে, চীনের প্রাধান্য ঠেকাতে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন অনেক কাছাকাছি। দক্ষিণ এশিয়া ছাড়িয়ে ইন্দোপ্যাসিফিক অঞ্চলেও বিরাজ করছে এমনই মেরুকরণ।

চীনের স্বপ্নের প্রকল্প ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ নিয়ে বার বার নিজেদের আপত্তির কথা জানাচ্ছে ভারত। শাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) গোষ্ঠীর বৈঠকে সব সদস্যরাষ্ট্র চীনের এই প্রকল্পকে সমর্থন জানালেও এই বিষয়ে সায় মেলেনি নয়াদিল্লির তরফে।

এসসিও বৈঠকের শেষে সদস্য রাষ্ট্রগুলো একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করে জানায়, যৌথ ভাবে তৈরি হওয়া এই প্রকল্পকে তারা সমর্থন করছে। এই বিবৃতিতে স্বাক্ষর ছিল রাশিয়া, পাকিস্তান, কাজাকিস্তান-সহ প্রায় সব সদস্য রাষ্ট্রের। তবে উল্লেখযোগ্য ভাবে এই বিবৃতিতে স্বাক্ষর ছিল না ভারতের। এসসিও বৈঠকের সূচনাতেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর ভার্চুয়াল ভাষণে জানিয়েছিলেন, এসসিও গোষ্ঠীর সনদকে মান্যতা দেওয়া উচিত সকলের। এর পাশাপাশি চীনের নাম না করেই সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতা রক্ষার জন্য সওয়াল করেন তিনি।

দীর্ঘ দিন ধরেই নয়াদিল্লির আপত্তি রয়েছে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ প্রকল্পের একটি নির্দিষ্ট অংশ নিয়ে। চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (সিপিইসি) নামের এই রাস্তা চীন অধিকৃত উইঘুর এলাকা শিনজিয়াং‌য়ের কাশগড়কে যুক্ত করেছে পাকিস্তানের গ্বদর সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে। ওই রাস্তার একটি অংশ গিয়েছে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের গিলগিট-বালটিস্তান এলাকার ভিতর দিয়ে। পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে পাকিস্তানের অংশ বলে স্বীকার করে না ভারত। তাই নয়াদিল্লির যুক্তি, এই রাস্তা তৈরি করে ভারতের সার্বভৌমত্বে ভাগ বসিয়েছে বেজিং।

ভারত আরো বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায় হল সন্ত্রাসবাদ। আমাদের তার বিরুদ্ধে লড়তে হবে।’’ এর পরেই পাকিস্তানের নাম না-করে মন্তব্য করা হয়, ‘‘কিছু দেশের নীতিই হল সীমান্ত পারের সন্ত্রাসকে মদত দেওয়া। তাদের নিন্দা করার ক্ষেত্রে কোনও দ্বিধা থাকা উচিত নয়।’’

৭৫ বছর আগে, ১৯৪৭ সালের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাগাভাগির পর থেকেই ভারত ও পাকিস্তান শত্রুভাবাপন্ন। দুই দেশের এই শত্রুতা একটি অমোচনীয় স্তরে পৌঁছে গেছে। তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, দুই দেশকে ঘিরে অতীতে যে মেরুকরণ ছিল, তা আর নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন নতুন বিন্যাসে দক্ষিণ এশিয়ায় অবস্থান তৈরি করছে। আগের শত্রুকে বন্ধু আর বন্ধুকে শত্রুতে পরিণত করছে। অদূরভবিষ্যতে এই পরিস্থিতি কোনদিকে মোড় নেয়, তার উপর দক্ষিণ এশিয়ার অনেক কিছুই নির্ভর করছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর