অযত্নে পড়ে আছে ৪০০ বছরের পুরনো আতিয়া মসজিদ

, ফিচার

ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-08 22:08:33

চার'শ বছরের পুরনো আতিয়া মসজিদটি এখনও সবার নজর কাড়ে। প্রাচীন স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন হয়ে দাড়িঁয়ে আছে আতিয়া জামে মসজিদ। মসজিদটি টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার আটিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত। দীর্ঘদিন কোনো সংস্কার না হওয়ায় অবহেলায় পড়ে আছে মসজিদটি। মসজিদটির তত্ত্বাবধানে রয়েছে প্রত্নতত্ত্ব ও জাদুঘর বিভাগ।

জানা যায়, ১৯৭৮ সালে ১০ টাকার নোটের প্রচ্ছদে প্রথম আতিয়া মসজিদটি স্থান পায়। এরপর ১৯৮২ সালে পরিবর্তিত ১০ টাকার নোটের প্রচ্ছদেও স্থান পায় আতিয়া মসজিদ। এতে দেশবাসীর মাঝে সহজেই মসজিদটি পরিচিতি লাভ করে। মসজিদটি শুধু ঐতিহ্যের নিদর্শনই নয়, একটি দর্শনীয় স্থানও। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষ এখানে ঘুরতে আসে। ইতিহাসখ্যাত বারো ভূঁইয়ার এক ভূঁইয়া ঈশা খাঁর পুত্র মুসা খানের শাসনামলে মসজিদটি নির্মিত হয়। ঈশা খাঁর রাজধানী ছিল সোনারগাঁ। তিনি ছিলেন সোনারগাঁ অঞ্চলের শাসক। বৃহত্তর ঢাকা ও বৃহত্তর ময়মনসিংহ তখন সোনারগাঁও অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত ছিল। শাসন কার্যপরিচালনার সুবিধার্থে ঈশা খাঁ টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার আতিয়ায় পরগণা সৃষ্টি করেন। সে সময় আতিয়া পরগণার শাসনভার ন্যস্ত হয় ঈশা খাঁর পুত্র মুসা খাঁর উপর।

টাঙ্গাইল শহরের দক্ষিণ পশ্চিমে ৭ কিলোমিটার দূরে লৌহজংগ নদীর তীরে ঐতিহাসিক এই মসজিদটির অবস্থান। এর নির্মাণ প্রায় ৪০০ বছর আগে হলেও মসজিদটি প্রাচীন স্থাপত্যের এক অনন্য শিল্পকর্মের নিদর্শন হিসেবেই সকলের কাছে পরিচিত। প্রাচীন এই মসজিদটির আয়তন বাইরের দিকে ২০ দশমিক ৯ মিটার ও ১৬ দশমিক ১৩ মিটার। মসজিদের প্রাচীর দশমিক ৫ ফুট , দৈর্ঘ্য ৪২ ফুট, প্রস্থ ৩২ ফুট এবং উচ্চতা ৪৪ ফুট।

মসজিদের চার কোণায় রয়েছে চারটি বিশাল আকারের অষ্টকোণাকৃতির মিনার। মিনারের চূড়ায় রয়েছে কারুকার্যময় সুন্দর ছোট ছোট গম্বুজ। গম্বুজগুলোর গায়ে বিভিন্ন রকমের কারুকার্য মসজিদটির সৌন্দর্য অনেকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

কারুকার্যপূর্ণ গম্বুজ

মসজিদটির প্রধান কক্ষ ও বারান্দা দুই ভাগে বিভক্ত। মসজিদের পূর্ব ও মাঝের দেয়ালে রয়েছে একটি করে দরজা। বারান্দাসহ উত্তর-দক্ষিণ দেয়ালে রয়েছে দুটো করে দরজা। ভেতরের পশ্চিম দেয়ালে আছে ৩টি সুন্দর মেহরাব। প্রধান কক্ষের প্রত্যেক দেয়ালের সঙ্গে দুটি করে পাথরের তৈরি স্তম্ভ রয়েছে। প্রধান কক্ষের উপরে রয়েছে একটি বিশাল মনোমুগ্ধকর গম্বুজ। বারান্দার পূর্ব দেয়ালে রয়েছে তিনটি প্রবেশ পথ। মাঝখানের প্রবেশপথের উপরের অংশের নিম্নভাগে একটি শিলালিপি রয়েছে। বর্তমানে যে শিলালিপিটি রয়েছে এর আগেও সেখানে একটি শিলালিপি ছিল বলে ইতিহাসে উল্লেখ আছে। এই শিলালিপিটি ফার্সিতে লেখা। আদি শিলালিপিটি বিনষ্ট হওয়ার কারণে পরবর্তীকালে মসজিদ মেরামতের সময় বর্তমান শিলালিপিটি লাগানো হয়। বর্তমান শিলালিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আতিয়া মসজিদ নির্মাণ হয় ১০১৮ হিজরিতে।

আরও জানা যায়, ১৬০৯ সালে বায়েজিদখান পন্নীর পুত্র সাঈদখান পন্নী মসজিদটি নির্মাণ করেন। টাঙ্গাইলের করটিয়ার বিখ্যাত পন্নী জমিদার বংশের আদি পুরুষ হলেন সাঈদ খান পন্নী। মসজিদের পশ্চিমদিকে অবস্থিত ফটকের ডানদিকে আরেকটি শিলালিপি আছে। ইংরেজিতে লেখা এই শিলালিপি পাঠে জানা যায়, ১৬০৯ সালে সাঈদ খান পন্নী এটি নির্মাণ করেন। এরপর ১৮৩৭ সালে মসজিদটি সংস্কার করেন দেলদুয়ার জমিদার বাড়ীর সদস্য রওশন খাতুন চৌধুরাণী। পরে দেলদুয়ারের জমিদার আবু আহম্মদ গজনবী ও করটিয়ার জমিদার ওয়াজেদ আলী খান পন্নীসহ কয়েকজন মিলে ১৯০৯ সালে পুনরায় মসজিদটি সংস্কার করেন। বর্তমানে জাতীয় জাদুঘরের অধীনে মসজিদটির তত্ত্বাবধায়ন করা হচ্ছে।

ঘুরতে আসা দর্শনার্থী ইকবাল বাহার বলেন, আমি কুমিল্লা থেকে এসেছি আতিয়া মসজিদ দেখতে। অনেক দিন ধরে স্বপ্ন ছিল আতিয়া মসজিদ দেখতে আসবো, আজ স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পেরে খুবই খুশি। স্বপ্ন ছিল অনেক বছরের পুরাতন এই মসজিদে এসে নামাজ আদায় করবো, নামাজ আদায় করেছি। ঐতিহ্যবাহী মসজিদটির সংস্কার করা দরকার। মসজিদটি অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে। সরকারের কাছে দাবি অতি দ্রুত মসজিদটি সংস্কার করা হোক।

আতিয়া মসজিদ


ঘুরতে আসা আরেক দর্শনার্থী মনির হাসান বলেন, ছোট সময় দশ টাকার নোটের মধ্যে এই মসজিদটি দেখেছিলাম। তারপর থেকেই ইচ্ছে ছিল মসজিদটি দেখতে যাবো। আমি সাভার থেকে এসেছি। মসজিদটি দেখে অনেক ভালো লেগেছে। সরকারের কাছে দাবি সংস্কারসহ দশ টাকার নোটে আবারো ফিরিয়ে আনা হোক আতিয়া মসজিদের ছবি।

স্থানীয় জব্বার মুন্সী বলেন, সরকার দেশের অনেক উন্নয়ন করেছে আমাদের এই মসজিদ সংস্কার করে দিলে মসজিদটি সুন্দর হবে। সংস্কার না করার কারণে মসজিদটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সরকারের কাছে মসজিদটিকে সংস্কার করে নতুন করে গড়ে তোলার দাবি জানাচ্ছি।

আতিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাজ্জাত হোসেন আজাদ বলেন , জৌলুস হারিয়ে ফেলেছে ঐতিহ্যবাহী আতিয়া মসজিদ। মসজিদের সৌন্দর্য বিলুপ্তের পথে। মসজিদটি সংস্কার করা দ্রুত প্রয়োজন। প্রত্নতত্ত্ব ও জাদুঘর বিভাগের কাছে আমাদের চাওয়া মসজিদটি পুনরায় সংস্কার করে এর ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা হোক।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর